সিলেট নগরের নয়াসড়ক, কুমারপাড়া ও জিন্দাবাজার এলাকায় কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি কফিশপ। যেগুলোর প্রতিদিনের চিত্র এমনই। মধ্যদুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব কফিশপে চলে গল্প-আড্ডায় কফি উদ্যাপন। প্রতিটি দোকানেই দৈনিক গড়ে কয়েক শ মানুষ কফিসহ আনুষঙ্গিক খাবার উপভোগ করছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর, রাত সাড়ে ১০টা। নয়াসড়ক এলাকার কফি এক্সপ্রেস নামের দোকানের ভেতরে ছিল খাদ্যরসিকদের ভিড়। কেউবা কফির সঙ্গে পিৎজা আবার কেউবা মাশরুম-সালাদ অর্ডার করেছেন। সবাই খেতে খেতে মজেছেন গল্প–আড্ডায়। সিলেটের কফিশপগুলোর পরিবেশ ও খাবার পরিবেশন বেশ নান্দনিক।
কফি এক্সপ্রেসের একজন জানান, তাঁদের মেনুতে গরম কফির পাশাপাশি ঠান্ডা কফিও রয়েছে। বসার পরিবেশ ভালো হওয়ায় সারা দিনই মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে। দীর্ঘ সময় নিয়ে কফি খেতে খেতে গল্প করার করার জন্যই অনেকে এখানে আসেন। কফির দাম শুরু ১২০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ৩৯০ টাকা। মুখরোচক নানা ফাস্টফুডের পাশাপশি এখানে আইসক্রিম, পেস্ট্রি, কেকসহ নানা ধরনের ডেজার্ট পাওয়া যায়।
শাহিদুল হক কফি এক্সপ্রেসের পরিচালকদের একজন। তিনি জানালেন কফিশপটির শুরুর কথা, ২০১৮ সালে তাঁদের কফিশপ যাত্রা করেছে। প্রথম দিকে শুধু কফিই বিক্রি করা হতো। এখন কফির সঙ্গে নানা ধরনের বাহারি ফাস্টফুডও বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ কফিশপটিতে আসেন বলে তিনি জানালেন।
কফিশপগুলোয় এক চক্কর ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানের সাজই নান্দনিক। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দোকানের ভেতরে কোনোটাতে আলো ঝলমলে, আবার কোনোটাতে আলো-আঁধারি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও রাখা হয়েছে ছবি আর সেলফি তোলার জন্য আলাদা জায়গাও। অনেক শপে দেয়ালজুড়ে আছে নানা চিত্রকর্ম।
পরিপাটি, ছিমছাম আর গোছানো শপগুলোর অনেকগুলোয় রয়েছে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’। দিনরাত সমানতালে জ্বলে রংবেরঙের বাতি।কফিশপের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, সিলেটের অধিকাংশ কফিশপে কফির সঙ্গে নানা ধরনের পানীয় আর স্ন্যাকসের পাশাপাশি ফাস্টফুডেরও আয়োজন রয়েছে। কেননা, শুধু কফি বিক্রি করে তেমন মুনাফা করা কষ্টসাধ্য।
তাই কফির পাশাপাশি নানা ধরনের ফাস্টফুডও বিক্রি করেন কফিশপের উদ্যোক্তারা। এতে কফিশপগুলো ঘিরে খাদ্যরসিকদের আগ্রহও বেড়েছে। সুন্দর, মোহনীয়, দৃষ্টিনন্দন ও নিরিবিলি পরিবেশে আড্ডা দিতে দিতে খেতে আগ্রহী মানুষজনের ভিড় তাই কফিশপগুলোয় বেড়েই চলছে। একেকটা দোকানে ৮ থেকে ২০ রকম স্বাদের কফি মেলে।
নয়াসড়কেই ‘শিপ কফি’ নামের একটি কফিশপ রয়েছে। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে কফি খেতে নিয়মিত ভিড় করেন। এখানে কফি খেতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়।
তাঁরা জানালেন, এখানে প্রায়ই সহপাঠীরা মিলে দল বেঁধে কফিসহ ফাস্টফুড খেতে আসেন। বসার পরিবেশও চমৎকার। নিরিবিলি পরিবেশে খেতে খেতে গল্প-আড্ডায় তাঁরা এখানে অনেকটা সময় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কাটাতে পারেন।
ছবি: লেখক