ফাস্ট ফ্যাশন মানুষের চাহিদাকে করেছে আকাশচুম্বী। উদাহরণ হিসেবে আপনি নিজেকেই বিবেচনা করতে পারেন। একটু খেয়াল করে দেখুন, প্রতিদিন অফিস বা অন্য কোনো জায়গায় বা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে অনেকেই নিজের ওয়ার্ডরোব হাতড়ে বেড়ান। ওয়ার্ডরোবভরা জামাকাপড়, কিন্তু পরার কিছু নেই।
এই সমস্যার এখানেই শেষ নয়। যাঁরা একটু হাই ফ্যাশন মেনে চলেন, তাঁদের জন্য আরও বড় সমস্যা হচ্ছে একটি আউটফিট দুবার পরা যাবে না। এমনকি অনেকে এমনও চিন্তা করেন, এই আউটফিটে তো গত সপ্তাহে ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে এবং তা মোটামুটি ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির সবাই দেখেছে, এমনকি লাইক, লাভ, ওয়াও রিঅ্যাকশন দিয়েছে। অনেকে কমেন্টসও করেছে।
সুতরাং এই পোশাক এখন একেবারেই পুরোনো। আবার অন্য একটি ড্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল যে এটি তো এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরা হয়েছে, কিংবা বিয়ের দাওয়াতে।
বলা যায়, এভাবে আমরা পণ্যের দাসে পরিণত হয়েছি। নিজেদের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছি পোশাকের ডিজাইনে। এতে নিজের ওয়ার্ডরোব হয়ে ওঠে জামাকাপড়ের স্তূপ। একে ভাগাড়ও বলা যায়। কারণ, কোথাও যাওয়ার সময় এখান থেকে গায়ে চাপানোর কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।
এর থেকে মুক্তির উপায় নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। অন্যের দেখানো স্টাইল স্টেটমেন্ট বা ফ্যাশন ধারায় নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে নিজেই তৈরি করুন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অন্যের দেখানো পথে না হেঁটে। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের ওয়ার্ডরোব থেকে খুঁজে নিন নিজের মতো আউটফিট। এরপর একটি আউটফিট থেকেই তৈরি করুন বিভিন্ন রকমের স্টাইল স্টেটমেন্ট।
যেমন অধিকাংশ ছেলেমেয়ের ক্লজেটেই একটি সাধারণ কালো বা সাদা শার্ট থাকে। ক্যাজুয়ালি আমরা বাইরে যাওয়ার সময় একটি জিনস অথবা সাধারণ কালো প্যান্ট দিয়ে এটি পরি। কিন্তু এই কালো শার্ট দিয়েই নতুন নতুন স্টাইল তৈরি করা সম্ভব এবং এগুলো দেখে মনে হবে নতুন আউটফিট। অর্থাৎ একটি শার্ট বা টপই আপনাকে দিতে পারে ট্র্যাডিশনাল, ফরমাল, সেমি ফরমাল, ক্যাজুয়াল ও পার্টি লুক।
ক্যাজুয়াল লুকের জন্য রেগুলার যেকোনো রঙের শার্ট, টি-শার্ট বা টপ ডেনিম প্যান্ট, জিনস বা ডেনিম কুলোটসের সঙ্গে জুটি করতে পারেন। তবে সঙ্গে যোগ করতে হবে কনভার্স বা স্নিকারস; তাহলেই সেটা হয়ে উঠবে ট্রেন্ডি। আর মেয়েরা যোগ করতে পারেন ট্রান্সপারেন্ট হিল। তাহলে ক্যাজুয়াল লুকও হয়ে উঠবে গর্জিয়াস।
বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ডেও চলছে কালার কন্ট্রাস্ট আউটফিট। সেই দিকটা লক্ষ রেখে একটি কালো বা সাদা শার্টের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট প্যান্ট এবং মানানসই বেল্টে আকর্ষণীয়ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা সম্ভব। মেয়েদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে চাইলে ওপর একটি অন্য রঙের শ্রাগ বা কোটি যোগ করে পুরো লুকটাকে পাল্টে দিতে পারেন। আর সেটা হয়ে উঠবে নজরকাড়া, অনবদ্য।
পার্টি ওয়্যারকে বলা হয় ট্রেন্ড ব্রেকার। অর্থাৎ পার্টিতে আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায়, এমন যেকোনো কিছুই আপনি পরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ক্লোজেটে জমানো শার্টগুলো পরতে পারেন স্কার্ট দিয়ে। ট্রেন্ডি ফ্যাশনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কার্ট। এর সঙ্গে পরুন স্টিলেটো অথবা বুট। পাশাপাশি ম্যাচিং বা কন্ট্রাস্ট অ্যাকসেসরিজ আপনাকে দেবে ক্ল্যাসিক বা রেট্রো লুক।
ট্র্যাডিশনাল আউটফিটের সঙ্গেও মানাসই শার্ট, তবে তা শুধু মেয়েদের জন্য। এ বিষয়ে অবশ্য অনেকেই কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু ব্লাউজের পরিবর্তে এখন শার্টের ব্যবহার বেশ ট্রেন্ডি, যা রেগুলার বেসিক শাড়ির সজ্জাকে আমূল বদলে দেয়। সুতরাং ট্র্যাডিশনাল শাড়ির স্টাইল যাঁদের কাছে বোরিং, তাঁরা ক্লোজেটে শাড়ি ফেলে না রেখে পেয়ারআপ করতে পারেন পছন্দের শার্ট, ক্রপটপ, এমনকি টি-শার্টের সঙ্গে। এই সাজে মাত্রা আনতে পরতে পারেন কন্ট্রাস্ট বা ট্রেন্ডি বা স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, যা আপনার স্টেটমেন্টকে দেবে মডার্ন টুইস্ট।