৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জুতার দোকান রাখী সুজ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এখনো ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ঢাকার ৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জুতার দোকান রাখী শুজ। গুণগত মান ধরে রাখা আর ক্রেতাদের মতামত ও সুবিধাকে প্রাধান্য দেওয়াই রাখী শুজের সাফল্যের মূলমন্ত্র।

বিজ্ঞাপন

সালটা ১৯৮৩। সাত ফুট বাই তিন ফুট আকৃতির একটা ছোট্ট দোকান দিয়ে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের মোড়ে যাত্রা শুরু করে জুতার দোকান রাখী শুজ। কোলাপুরি ধরনের স্যান্ডেল দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী এর ডিজাইনে পরিবর্তন আসতে থাকে ক্রমান্বয়ে। প্রথম দিকে এখানে ২৫০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ছিল জুতার দাম। এখন সর্বনিম্ন ৭০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা দামের জুতা পাওয়া যায় রাখী শুজে।

দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ আলম জানান, নবাবগঞ্জে তাঁদের কারখানা। সেখানে ১২ জন কর্মচারী কাজ করেন। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় সলিউশন, পেস্টিং, পিন, লেজার, বকলেস আর আর্টিফিশিয়াল লেদার। রাখী শুজের স্বত্বাধিকারী জাভেদ ইকবালই মূল ডিজাইনার। তিনি এই জুতাগুলোর ডিজাইন করে থাকেন। রং, সাইজ—সবই তিনি নির্ধারণ করেন।

বিজ্ঞাপন

জুতার গুণগত মান সব সময় সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে রাখী শুজ। সে কারণেই ক্রেতাদের মধ্যে এত বছর ধরে এই দোকানের জুতার চাহিদা কমেনি। এ ছাড়া প্রস্তুত করার সময় যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখা হয়, তা হচ্ছে টেকসইভাবে বানানো। সে কারণে দেড় থেকে দুই বছর অনায়াসে এই জুতা চলে যায়। জানা যায়, এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, ১০-১২ বছর আগে রাখী শুজ থেকে কেনা বিয়ের জুতা নিয়ে এসে অনেক ক্রেতা বলেন, সেই জুতাজোড়া এখনো টিকে আছে।

মূলত এ কারণেই ক্রেতাদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করেছে দোকানটি। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, তারকারাও এখান থেকে জুতা কিনে থাকেন। দেশের বরেণ্য অভিনেত্রী আফসানা মিমি ও বিপাশা হায়াত এখানকার নিয়মিত ক্রেতা। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এখান থেকে জুতা নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে প্রচুর ক্রেতা রাখী শুজে আসেন জুতা কিনতে। তাঁরা প্রশংসাও করেন এত ভালো মানের জুতা ঢাকায় পাওয়া যায় বলে।

বিভিন্ন ধরনের জুতা পাওয়া যায় এখানে। ক্যাজুয়ালওয়্যার, অফিসওয়্যার, পাম্প শুজ, বিয়ের জন্য জমকাল পার্টি শু মিলবে রাখী শুজে। তবে এ দোকানের সিগনেচার কোলাপুরি স্যান্ডেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বছরের ১২ মাসই জুতা কিনতে আসেন ক্রেতারা তাঁদের প্রিয় দোকানে। মোহাম্মদ আলম বলেন, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, এই জুতার কয়েক প্রজন্ম ধরে ক্রেতা রয়েছে। এমন হয় যে একই পরিবারের মা, মেয়ে, নাতনি—সবাই রাখী শু পরেন। কেউ হয়তো স্কুল থেকে রাখী শুজের জুতা পরছেন আর চাকরিজীবনে এসেও তাঁদের পছন্দ রাখী শুজ।

সেই ছোট্ট দোকান এখন দালানের দোতলাজুড়ে। বছরের ৩৬৫ দিন ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে রাখী শুজ খোলা থাকে। কারণ দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে জুতা কিনতে। যাতে কাউকে ফিরে যেতে না হয়, তাই প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। ভবিষ্যতে আরও শাখা খোলার চিন্তা রয়েছে রাখী শুজের। তবে সেবার গুণগত মানে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, সে কারণেই এখনো শাখা খোলেনি তারা। চার দশক ধরে নারীদের পছন্দের তালিকায় থাকার সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হালফ্যাশনের যুগে এগিয়ে যাচ্ছে রাখী শুজ। আর ভবিষ্যতেও এর জয়যাত্রায় ছেদ পড়ার কোনো কারণ নেই।

ছবি: লেখক ও ফেসবুক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ৪২
বিজ্ঞাপন