বৃষ্টি অপছন্দ, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বৃষ্টির দিনে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে এলে বা বৃষ্টির পানি পেয়ে সতেজ হয়ে ওঠা সবুজ গাছের দিকে চোখ পড়লে মনটা উদাস হয়ে ওঠে। বর্ষা যে হৃদয়ে প্রেম জাগায়, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বর্ষাকালে বৃষ্টির স্পর্শে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ব্যস্ত নগরী। তবে আমাদের ব্যস্ততা থেমে থাকে না। বিভিন্ন প্রয়োজনে, কারণে-অকারণে বাইরে বের হতেই হয়। এ মৌসুমে বাইরে বেরোনোর সময় কোন ধরনের পোশাক উপযুক্ত হবে, তা নিয়ে আমাদের সবাইকে কমবেশি একটু চিন্তায় পড়তে হয়। তবে একটু বুঝেশুনে পোশাক নির্বাচন করলে এ ঝামেলা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
বর্ষাকালে রাস্তার কাদা-পানি থেকে রেহাই পেতে একটু কম দৈর্ঘ্যের পোশাক পরাই ভালো। মেয়েদের জন্য স্কার্ট আর ডেনিম বা সুতির থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এ ঋতুতে সুবিধাজনক ও ফ্যাশনেবল পোশাক। মিডি ড্রেস বা ছিমছাম কো-অর্ড স্কার্ট-টপও এ ঋতুতে বেশ ট্রেন্ডি। সব সময়ের ক্যাজুয়াল লুকের জন্য টি-শার্ট, প্রিন্টেড ঢিলেঢালা শার্ট ও লুজ প্যান্ট বেশ মানানসই। এ ছাড়া গ্ল্যামারাস লুক পেতে কাফতান, টিউনিক ও জমকালো অথচ হালকা ফেব্রিকের ড্রেস এ ঋতুতে বেশ আকর্ষণীয় দেখাবে।
বর্ষায় পোশাক নির্বাচনের সময় পোশাকের জন্য উপযুক্ত রং বাছাইও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পোশাকের রঙের স্থায়ীত্বের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। বর্ষায় মেঘলা প্রকৃতির সঙ্গে উজ্জ্বল রং বেশি মানানসই। এই যেমন রয়েল ব্লু, অলিভ শেড, আকাশি, ধূসর বা হলুদ রং এ সময় খুব ভালো লাগে। তবে এ মৌসুমে একটু গাঢ় রঙের পোশাক পরাই ভালো, যাতে কাদা লাগলে বা ভিজে গেলেও চট করে চোখে ধরা না পড়ে। বর্ষাকালে সাদা কাপড় পরতে বেশ বেগ পেতে হয়। আবার এ সময় একরঙা কালো কাপড়ও পরা উচিত নয়। কালো কাপড় ভিজে গেলে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়, সাদা কাপড়েও ফাঙ্গাস বা ছিট পড়ার আশঙ্কা থাকে। বর্ষায় অনেকেই নীল বা সবুজ রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। তবে এটা অবশ্যই আপনার রুচি ও পছন্দের ওপর নির্ভর করবে।
আমাদের দেশের মতো গরম আবহাওয়ার বর্ষাকালের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও আরামদায়ক ফেব্রিক হচ্ছে কটন। বর্ষার মেঘলা দিনে বা একপশলা বৃষ্টির পর গুমোট গরমে পাতলা সুতির পোশাক স্বস্তি এনে দেয়। তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সব সুতি কাপড় দ্রুত শুকাতে চায় না বলে কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে জর্জেট, শিফন—এ ধরনের সিনথেটিক কাপড় পরতে পারেন। এ ছাড়া এ ঋতুতে বেছে নিতে পারেন মলমল ফেব্রিক। সুতির থেকেও নরম ও হালকা হয় মলমল। সুতিতে আরামদায়ক পোশাক ও ক্যাজুয়াল লুক পেতে প্রিন্টেড টি-শার্ট দিয়ে সিগারেট প্যান্ট বা ডেনিম প্যান্ট পরতে পারেন। এ ছাড়া কটন কুর্তি ও লেগিংসও বেছে নিতে পারেন।
বর্ষাবান্ধব পরিবেশে আরামের বিবেচনায় পোশাকের ক্ষেত্রে ডেনিম আপনার প্রথম পছন্দ না-ও হতে পারে। তবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে ডেনিম পরতে পারেন ইচ্ছা করলে। এমনিতে বর্ষাকালে ডেনিম বেশ সুবিধাজনক। কাদা-পানিতে যেমন গুটিয়ে নেওয়া যায়, তেমনি কাদা বা ময়লা লাগলেও বেশি বোঝা যায় না। ডেনিম টাফ ম্যাটেরিয়াল হওয়ার কারণে খুব সহজে নষ্ট হয় না। তবে এ ঋতুতে ডেনিমের পোশাক খুব ঘন ঘন ধোয়া উচিত নয়। যেহেতু বর্ষাকালে আর্দ্র পরিবেশের কারণে কাপড় দ্রুত শুকায় না, তাই ঘন ঘন ধুলে ফেব্রিকের বুনন দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বর্ষাকালে খাদির তৈরি পোশাক থাকতে পারে আপনার পছন্দের শীর্ষে। ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে যায় খাদি। হালকা হওয়ায় এর মধ্য দিয়ে সহজেই হাওয়া চলাচল করতে পারে। একই সঙ্গে এটি বেশ ফ্যাশনেবল হওয়ায় আপনি যেকোনো জায়গায় এটি ক্যারি করতে পারেন। খাদি কাপড় ধুতে সর্বদা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত, নয়তো ফেব্রিক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বর্ষাকালে যেহেতু বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাই কাপড় তাড়াতাড়ি শুকাতে চায় না। এ ক্ষেত্রে সিল্ক হতে পারে আপনার অন্যতম সেরা পছন্দ। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় হাফ সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, সেমি-তসর সিল্ক বা কটন মিক্স সিল্ক বেশ উপযোগী। এসব ব্লেন্ডেড বা মিশ্র ফেব্রিকের পোশাক খুবই আরামদায়ক ও দ্রুত শুকায়। পার্টি কিংবা যেকোনো প্রোগ্রামে সিল্কের পোশাক আকর্ষণীয় লুক দিতে পারে। সিল্কের শাড়ি, কুর্তি, টপ, মিডি গাউন ইদানীং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
বর্ষাকালে স্কিন টাইট বা বডি হাগিং ধরনের পোশাক এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, বৃষ্টিতে এগুলো ভিজে গেলে তা সে মুহূর্তে আপনার শারীরিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া বর্ষাকালে যেকোনো ভারী বা জমকালো নকশার পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা বৃষ্টিতে ভিজলে এ ধরনের কাপড় শুকাতে দেরি হয়। বিশেষ করে মোটা বুননের কাপড় শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া ভেজা অবস্থায় এসব কাপড় গায়ে রাখলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় আর ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তথ্যসূত্র: ফেমিনাডটইন, ভোগ ইন্ডিয়া