সাফিয়া সাথীর নকশায় বিয়ের সাজে স্বাগতা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ছিমছাম বিয়েতে ছিল মিরপুরের বেনারসি

‘সাধারণ’ও ‘ছিমছাম’ শব্দ দুটো স্বাগতার বিয়ের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। এ ব্যাপারে স্বাগতার অভিমত হলো, প্রতিটি সাজে পোশাক এবং গয়না এমন রেখেছেন তিনি, যেন ব্যক্তি স্বাগতাকে সাজের আড়ালে ঢাকা পড়ে যেতে না হয়। ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম মসজিদে ছিল বিয়ে। শাড়ির ডিজাইনার সাফিয়া সাথী বলেন, ‘বিয়েতে স্বাগতাকে সাজাতে মিরপুরের ছোট পাড়ের বুটির কাজ বেনারসি শাড়ি বেছে নিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল ‘জারদৌসি’ কাজের মসলিনের ওড়না।’ টকটকে লাল বেনারসিতে ছিল সোনালি সুতার কাজ।

তাই গলায় সোনার ছোট চোকার আর কানে ছোট্ট একজোড়া দুল পরে বিয়ের দিন নিজেই নিজেকে সাজিয়েছিলেন স্বাগতা। টকটকে লাল লিপস্টিকে রাঙিয়েছিলেন ঠোঁট। কপালে এঁকেছিলেন ছোট্ট একটা লাল টিপ। সাফিয়া সাথী জানান, লাল রঙের সঙ্গে বৈপরীত্য রেখে বর পরেছিলেন সাদা রঙের চিকনকারি পাঞ্জাবি ও পায়জামা। পরিবারের একান্ত আপন কিছু সদস্যের উপস্থিতিতে একেবারে ঘরোয়াভাবে আক্‌দ সাড়েন তাঁরা।

বিজ্ঞাপন

রাতের পোশাকে ছিল পশ্চিমা ছোঁয়া

দিনে মসজিদের ঘরোয়া আক্‌দের পর রাতে আয়োজন করেছিলেন বিয়ে-পরবর্তী উৎসবের। এই আয়োজনের পোশাকের ভাবনা নিয়ে সাফিয়া সাথী জানান, স্বাগতার স্বামী হাসানের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সবটাই ইংল্যান্ডে। তাই চেয়েছিলেন পোশাকে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া থাকুক। এর আরও একটা কারণ ছিল। যেহেতু শীতকাল চলছে, রাতের অনুষ্ঠানে তাই সবার আরামের কথা চিন্তা করেই বেছে নিয়েছেন স্যুট-বুট। বরের সাদা ব্লেজারটি হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করে তৈরি করা হয়। শীতের কথা মাথায় রেখে স্বাগতা নিজেই চেয়েছিলেন শাল জড়িয়ে পোশাকটি পরতে।

স্বাগতার পোশাক হিসেবে ছিল সাটিন কাপড়ে তৈরি সাদা রঙের গাউন। গাউনে ছিল না বিশেষ কোনো কারুকাজ। কেবল নিচের দিকের সাদা লেসের নকশাটিই নজর কেড়েছে সবার। মাথায় পরেছিলেন সাদা রঙের ‘ভেইল’। পশ্চিমে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতিতে বিয়ের কনেরা নিজেদের সাদা রঙে সাজান। মাথায় পরেন ‘ভেইল’। সাদা রঙকে শান্তি ও সম্ভ্রান্তের প্রতীক হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়। স্বাগতার মতে, পশ্চিমা বিয়ের সংস্কৃতি এবং সাজের প্রতি সম্মান দেখাতে এমন পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছিলেন তিনি। এদিনের মেকআপও রেখেছেন বেশ মিনিমাল। ছিল না কোনো গয়নার আধিক্য।

বিজ্ঞাপন

বিয়ে-পরবর্তী অভ্যর্থনায় নজর কেড়েছেন ‘সূর্যরঙা’ কমলায়

সবশেষে ছিল বিয়ে–পরবর্তী অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান। সেদিনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল সুন্দর কমলা রং। এ বেলায় প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য জামদানি। সাফিয়া সাথী জানান, ‘কনের পছন্দ ছিল জামদানি। তিনি পরতে চেয়েছেন বলে জামদানিই বেছে নিয়েছি। এ ছাড়া সোনার গয়না পরাটা ছিল স্বাগতার ব্যক্তিগত পছন্দ।’ ডিজাইনারের তত্ত্বাবধানে দক্ষ একজন তাঁতী শাড়িটি তৈরি করেন। কমলা রঙের জামদানিতে ছিল সোনালি জরির কাজ। শাড়িটিতে করা রঙের এই সুন্দর মিশেল ঘটেছে সাফিয়া সাথীর পরিকল্পনায়। শাড়ির সঙ্গের ওড়নাটিও ছিল জামদানি নকশার।

ওড়নার পাড় ঘেঁষে ছিল সোনালি কাজ। ব্লাউজের ডিজাইন সাফিয়ার নিজস্ব। তবে মতামত দিয়েছিলেন স্বাগতা নিজেও। দুপক্ষের আলোচনার পরই সব নকশা এত সুন্দর করে করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। ব্লাউজের পেছনে ছিল একটুকরা অলংকার দিয়ে নকশা করা। ব্লাউজের সৌন্দর্যবর্ধনে বেশ সাহায্য করেছে এই কাজটুকু। স্বাগতার সঙ্গে মিলিয়ে বর হাসানও পরেছিলেন কমলা রঙের শেরওয়ানি। শেরওয়ানির কাট-ছাঁট অন্য রকম হোক বলে চেয়েছিলেন স্বাগতা। তবে শেরওয়ানির নকশায় জামদানি মোটিফ রাখার আইডিয়াটা সাফিয়া সাথীরই ছিল।

জামদানি শাড়িটি পরার পর স্বাগতা এর বেশ প্রশংসা করেছেন নরম, হালকা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের একটি শাড়ি বলে। এটি নাকি ছিল জাদুঘরে রাখা জামদানিগুলোর মতো সূক্ষ্ম নকশার একটি শাড়ি। এদিকে সাফিয়া সাথীও জানান, সবকিছুর ওপর নিজেদের ব্যক্তিত্ব এবং আরামের ব্যাপারটাই নাকি বেছে নিয়েছেন বর-কনে দুজনেই। সাদা, প্যাস্টেল—এসব রং এখন বেশ নজর কাড়লেও ট্রেন্ডে গা ভাসানোর প্রতি খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না তাঁরা। এখানে বলে রাখা ভালো, বিয়ের একটি অনুষ্ঠানে স্নিকার জুতাকে নিজের প্রথম পছন্দ হিসেবে রেখেছিলেন বর হাসান আজাদ। এতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন তিনি।

ছবি: রেমিনেসেন্স

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ২৮
বিজ্ঞাপন