একসময় স্লিপ ড্রেস শুধু বেডরুমের পোশাক হিসেবেই পরা হতো; নব্বই দশকের মাঝামাঝি এই পোশাককে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসে পরা শুরু করতেই সবদিকে কেমন হইচই পড়ে গেল। এরপর বন্ধুদের হ্যাংআউট থেকে ডেট অথবা বিয়ের দাওয়াত থেকে রেড কার্পেট—সবখানেই স্লিপ ড্রেসের জয়জয়কার। এই তো বছর তিন আগে ফ্যাশনে আবার ফিরে এসেছে এই পোশাক। হেমন্তের ফ্যাশনে স্লিপ ড্রেস দিয়ে নানাভাবে স্টাইলিং করা যেতে পারে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে স্লিপ ড্রেসের হেম লেন্থ, কিন্তু মিডি ও ম্যাক্সি ড্রেসের মতো হতে পারে। অর্থাৎ স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপের মিডি ও ম্যাক্সি ড্রেস কিন্তু আসলে স্লিপ ড্রেস।
ক্ল্যাসিক স্লিপ ড্রেস সাধারণত সাটিন ও সিল্ক ফেব্রিকের হয়ে থাকে। এখন অবশ্য এই পোশাকের ফেব্রিক ও প্রিন্টে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। সুতি, ফ্লিচ, লিনেন, ডাবল জর্জেট, খাদি কাপড়ের স্লিপ ড্রেস আমাদের এখানেই তৈরি হচ্ছে। এ-লাইন হেমের পাশাপাশি ফ্লেয়ারড ও স্মক স্টাইল স্লিপ ড্রেসের জনপ্রিয়তা অনেক।
যে ফ্রকের হেমলাইন গোড়ালির অনেক ওপরে, কিন্তু হাঁটুর কিছুটা নিচে তাকে মিডি ড্রেস বলে। ক্ল্যাসিক ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনে মিডি ড্রেসের অনেক কদর। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এই পোশাকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এখানে অনেক ব্র্যান্ড প্রতি মৌসুমে স্টাইলিশ সব মিডি ড্রেস নিয়ে আসছে। হেমন্তের এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় এই মিডি ড্রেসগুলো হতে পারে প্রথম পছন্দ। ব্র্যান্ড থেকেই যে কিনতে হবে এমন নয়। চাইলেই কাপড় কিনে বিশ্বস্ত দরজিকে দিয়ে পছন্দমতো ডিজাইনে বানিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই আবহাওয়ায় পরার উপযোগী কাপড় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। না অতি শীত, না অতি গরমের এই সময়ের জন্য আরামদায়ক হবে খাদি, নিট, কটন, লিনেন, হালকা ডেনিম, ফ্লিচ ফেব্রিকের মিডি ড্রেস। বিভিন্ন ব্র্যান্ড স্টোর বা মার্কেটে এখন যে ড্রেসগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো তৈরিতে এই ফেব্রিকের মিডি ড্রেস বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এবার আসা যাক কাট ও প্যাটার্নের কথায়। ক্ল্যাসিক মিডি ড্রেস এ-লাইন হেমের হয়। কিন্তু এখন ডিজাইনাররা হেমলাইন নিয়ে অনেক নিরীক্ষা করছেন। এখন কাউল, অ্যাসেমিট্রিক্যাল, শার্কবাইট, ফ্লেয়ারড, রাফলড, হ্যান্ডকারচিফ, হাই-লো, স্ল্যান্ট, সাইড স্লিট হেমের মিডি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় স্মক প্যাটার্নের ড্রেস। এ ছাড়া এই আবহাওয়ায় নিটের বডিকন, লিনেন ও ডাবল জর্জেটের র্যাপ স্টাইল মিডি ড্রেসেরও চাহিদা অনেক।
হেমলাইনের মতো স্লিভের ক্ষেত্রেও বেশ বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে শর্ট ও লং পাফি, বেলুন, বাটারফ্লাই, বেল ইত্যাদি স্লিভের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মিডি ড্রেসে এখন এসব স্লিভ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
সলিড কালার বা এক রঙের মিডি ড্রেসের চেয়ে প্রিন্টের মিডি ড্রেস বেশি চলছে। প্রিন্টের ভেতর প্রাধান্য পাচ্ছে ফ্লোরাল, ট্রপিক্যাল, পলকা ডট, টাইডাই, জিওম্যাট্রিক, সাইকেডেলিক ইত্যাদি।
এ বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ডে ম্যাক্সি ড্রেসের আগমন ঘটে। গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা এই ড্রেস পশ্চিমে অনেক বেশি চলেছে। অবশ্য মিডি ড্রেসের মতোই ম্যাক্সি ড্রেসও সারা বছর পরা যাবে। তাই হেমন্তের ফ্যাশনে স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চাইলে চোখ বন্ধ করে বেছে নিতে পারেন ম্যাক্সি ড্রেস। মিডি ড্রেসের মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো ম্যাক্সি ড্রেস নিয়েও কাজ করছে। এসব ড্রেস তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে কটন, স্লাব কটন, লিনেন, ডাবল জর্জেট, ডেনিম, খাদি কাপড়।
সাধারণত ম্যাক্সি ড্রেসে মিডি ড্রেসের মতো কাট ও প্যাটার্নে খুব একটা বৈচিত্র্য না দেখা গেলেও ফ্লেয়ারড, এ-লাইন, এম্পায়ার ওয়েস্ট, স্মক প্যাটার্নের ড্রেসগুলো বেশ ভালোই চলছে। স্লিভের দিক দিয়ে মিডি ড্রেসের মতোই বাহারি ডিজাইনের স্লিভ ব্যবহার হচ্ছে ম্যাক্সি ড্রেস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেলুন, বাটারফ্লাই, বেল, লেয়ারড, পাফি, পোয়েট স্লিভ ইত্যাদি।
এ বছর গরমের ট্রেন্ডে সবচেয়ে বেশি চলেছে ফ্লোরাল ও ট্রপিক্যাল প্রিন্টের ম্যাক্সি ড্রেস। এসব প্রিন্টগুলো ছাড়াও এখন সলিড বা এক রঙের ড্রেসের বেশ চাহিদা আছে।
মিডি, ম্যাক্সি, স্লিপ ড্রেস—খুবই বৈচিত্র্যময় তিনটি পোশাক। এখানে মিডি ও ম্যাক্সি ড্রেস একইভাবে স্টাইলিং করা যায়। হেমন্তের এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় স্টাইলিশ লুক আনতে এসব পোশাকে নানা রকমের লেয়ারিং করা যেতে পারে। এর ওপরে লাইট ফেব্রিকের লং বা মিডিয়াম শ্রাগ বা কোটি চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বোলেরোও (একধরনের শর্ট জ্যাকেট) হতে পারে সঙ্গী। আবার ফাংকি লুকের জন্য মিডি বা ম্যাক্সি ড্রেসের ওপর শার্ট টাই-আপ করা যেতে পারে। অন্যদিকে যেকোনো প্রিন্ট বা প্যাটার্নের স্লিপ ড্রেসের নিচে মিক্স ও ম্যাচ করে টি-শার্ট বা শার্ট পরলে বেশ মানিয়ে যাবে।
এ ছাড়া স্টাইলিংয়ের সময় অ্যাকসেসরিজকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একটি সিম্পল মিডি, ম্যাক্সি বা স্লিপ ড্রেসের সঙ্গে অ্যাকসেসরিজের সামান্য অদলবদল পুরো লুকটাই পাল্টে দিতে পারে। যেমন একটি সলিড কালারের ড্রেসের সঙ্গে জুতা হিসেবে বেছে নিতে পারেন হাই-হিল, ব্যালেরিনা পাম্প, স্নিকার, হাই হিল ও অ্যাঙ্কেল বুট। হাই-হিল পরলে লুকে একটা ফরমাল ভাইব আসবে, যেকোনো পার্টির জন্য যা মানানসই। আবার একদম ক্যাজুয়াল লুকের জন্য ব্যালেরিনা পাম্প ও স্নিকার পরা যেতে পারে। যাঁরা একটু গ্রাঞ্জ বা বাইকার স্টাইল পছন্দ করেন, তাঁরা মিডি, ম্যাক্সি ও স্লিপ ড্রেসের সঙ্গে নির্দ্বিধায় বুট পরতে পারেন।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম