কথায় আছে, শাড়িতেই নারী। বিশেষত বাঙালি নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ির সঙ্গে নাড়ির টান রয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। তবে শাড়ি তখনই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন পরনে থাকে ফ্যাশনেবল ও মানানসই ব্লাউজ। শাড়ির সঙ্গে নজরকাড়া ব্লাউজ যে কাউকে অনন্য রূপে সাজিয়ে তোলে।
একটা সময় ছিল, যখন শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ পরা হতো। তবে এখন পছন্দসই ব্লাউজের সঙ্গেই মিলিয়ে শাড়ি পরার নতুন ধারা গড়ে উঠেছে। সৃজনশীলতার ছাপ রাখতে ব্লাউজের ডিজাইনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আবার ফিরে আসছে ষাট-সত্তর দশকের ব্লাউজের ডিজাইন। তাই ফ্যাশনিস্তাদের ফ্যাশনে শাড়ির ড্রেপিং আর নকশার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাউজ নিয়ে ভাবনাও কম নয়!
ব্লাউজের ব্যতিক্রমী ডিজাইন আর কাটিং আরও নান্দনিক করে তুলতে পারে শাড়ির লুক। বর্তমানে কটি, টপস, ক্রপটপ স্টাইলের ব্লাউজগুলো ফ্যাশন ট্রেন্ডে বেশ এগিয়ে। ব্লাউজের কাট নিয়ে চলছে নানা নিরীক্ষা। দৈর্ঘ্যের দিক থেকেও ছোট-বড় সবই পরছেন সবাই, নিজের দৈহিক গড়ন ও পছন্দ বুঝে। এ ছাড়া ট্রেন্ড অনুযায়ী নারীরা বানাচ্ছেন কনট্রাস্ট ব্লাউজ, যেন এক ব্লাউজ পরা যায় অনেক ধরনের শাড়ির সঙ্গে। মনোক্রোম বা একরঙা ব্লাউজের প্রতি এখন আবার ঝোঁক বাড়ছে সবার।
হাইনেক, অফ দ্য শোল্ডার, সুইটহার্ট নেকলাইন এখন খুবই ট্রেন্ডি। দেশের গরম আবহাওয়া বিবেচনায় স্লিভলেসের আবেদন রয়েছে আলাদা রকমের। এ ক্ষেত্রে নুডলস স্ট্র্যাপ থেকে শুরু করে কাঁধে একটু চওড়া অংশ রেখে স্লিভলেস ব্লাউজ পরছেন সবাই।
রাফল স্লিভ ও ফ্রিল দেওয়া ব্লাউজগুলো যেকোনো অনুষ্ঠানে বেশ মানানসই ও ক্লাসি লুক এনে দেয়। সাবেকি ঘরানায় ক্রিংকল, রাফল বা স্মোকিং করা কুঞ্চিত কাপড় আর নানা রকম লেস ও রিবন বসিয়ে বানানো হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের সব ব্লাউজ। ডিজাইনভেদে ব্লাউজের ফেব্রিক হিসেবে সুতি, কাতান, শিফন, র সিল্ক বা সিল্ক উপযুক্ত হতে পারে।
নতুনের সঙ্গে পুরোনোর মিশেল হিসেবে ব্লাউজ ডিজাইনে কয়েক বছর ধরে ফিউশন পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুরোনো ধারার পেছনে ফাঁকা, ব্যাকলেস ব্লাউজগুলো বর্তমানে বেশ আকর্ষণীয়। আবার পিঠে ফিতা বা নুডলস স্ট্র্যাপের জিগজ্যাগ করা ব্লাউজগুলোও এখন বেশ জনপ্রিয়। একটি সাদামাটা শাড়িকেও এ ধরনের ব্লাউজ বেশ আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
ব্লাউজ নির্বাচন করা খুব সহজ হলেও অনেককেই পছন্দসই ব্লাউজ খুঁজে পেতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। তবে ইন্টারনেটের এই যুগে কোনো কিছুই ঝামেলার নয়। অনলাইনে অনেক ব্লাউজভিত্তিক পেইজ আছে। এগুলোতে পেয়ে যাবেন নানা রঙের, নানা ঢংয়ের ব্লাউজ। একেক পেইজে রয়েছে একেক রকম কালেকশন। এ ছাড়া জনপ্রিয় পোশাকভিত্তিক ব্র্যান্ডগুলোতেও পেয়ে যাবেন ফ্যাশনেবল ট্রেন্ডি ব্লাউজ। শাড়ি যেমনই হোক না কেন, ব্লাউজ যদি হয় ট্রেন্ডি, তাহলে পুরো লুকটাই বদলে যায়। তাই ফ্যাশন ডিজাইনাররা আলাদাভাবে নজর দিচ্ছেন ব্লাউজের ওপর।
শাড়িতে নারীকে কতটা সুন্দর দেখাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে শারীরিক গঠনের সঙ্গে মিল রেখে ব্লাউজ নির্বাচনের ওপর। ব্লাউজ বাছাইয়ে শরীরের গঠন বুঝে ব্লাউজ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাড়ি কিংবা ব্লাউজ দুটোই জমকালো হলে বেশ বেমানান দেখায়, তাই বেছে নিতে হবে যেকোনো একটা। ব্লাউজ বাছাইয়ের সময় অবশ্যই পরিবেশ, অনুষ্ঠান, বয়স ও রুচি মাথায় রাখতে হবে।
সব সময় মনে রাখতে হবে, স্টাইল কিংবা ফ্যাশন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বহন করা বা ক্যারি করার বিষয়। যে পোশাক অস্বস্তি দেয়, তা পরিধান না করে বরং যা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ক্যারি করা যায়, তাই সবার পরা উচিত।