আম্বানি–কন্যা ইশা আম্বানির পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ২০২২ সালে আত্মপ্রকাশ করে রিলায়েন্স রিটেইলের নতুন ব্র্যান্ড আজোর্টে। মুম্বাই ও দিল্লির পর ভারতের অন্যতম প্রধান অঞ্চল কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে প্রথম একটি আউটলেট দিয়ে আজোর্টের যাত্রা শুরু। বর্তমানে মুম্বাই, হায়দরাবাদ, পুনে, গুরগাঁ, কলকাতা, চেন্নাইসহ একাধিক শহরে এর শাখা আছে। রিলায়েন্সের তথ্যানুযায়ী, এটি একটি ‘নেক্সট জেনারেশন’ ফ্যাশন স্টোর, যা মিলেনিয়াল ও জেন-জি ক্রেতাদের রুচি, পছন্দ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্টাইল ও জীবনধারা মাথায় রেখে তৈরি।
ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে বলেই হয়তো ইশা আম্বানির ব্যবসায়িক বুদ্ধি অবাক করার মতো। ভারতীয় ফ্যাশন খাতে জারা, এইচঅ্যান্ডএম ও ম্যাংগোর মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড দীর্ঘদিন থেকে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিশেষ করে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে এই তিন ব্র্যান্ডের আবেদন বেশ জোরালো। ক্রমশ বেড়ে চলা এই আবেদন ও চাহিদাকে চ্যালেঞ্জ করার লক্ষ্যেই রিলায়েন্স রিটেইলের নতুন এই পদক্ষেপ। ফ্যাশনকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের নজরে আনা, তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো, দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশনের সঙ্গে পরিচয় করানো এবং সাধ্যের মধ্যে চাহিদা পূরণ আজোর্টের উদ্দেশ্য।
আজোর্টের স্টোরগুলোতে মূলত পশ্চিমি স্টাইলের পুরুষ ও নারীর পোশাক, জুতা, অনুষঙ্গ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ডিজিটাল শেলফ, স্মার্ট চেকআউট, ইন্টার্যাক্টিভ স্ক্রিনসহ অত্যাধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে স্টোরগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। এর পেছনে ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্য ছাড়াও, ফ্যাশন বাজারে একধাপ এগিয়ে থাকার জন্য ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদা সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছে আজোর্টে। এই স্মার্ট ব্যবসায়িক চাল আজোর্টেকে ফ্যাশন বাণিজ্যে কয়েকধাপ এগিয়ে রাখছে। যেমন ইন্টার্যাক্টিভ স্ক্রিন ব্যবহারের কথাই ধরা যাক। সেলসপারসনের থেকে নিজের সাইজের পোশাক চেয়ে না নিয়ে, ইন্টার্যাকটিভ স্ক্রিনের মাধ্যমেই পোশাক সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন একজন ক্রেতা। কেনাকাটার ঝক্কি এড়াতে এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি আর নেই।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টার্যাক্টিভ স্ক্রিনের ব্যবহার খুবই বিচক্ষণ ব্যবসাকৌশল। প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা তাঁদের পোশাকের চাহিদার ডেটা এই যন্ত্রে দিচ্ছেন। যন্ত্রটি প্রতিটি ডেটার রেকর্ড রাখছে। এভাবে আজোর্টের হাতে নিমেষেই পৌঁছে যাচ্ছে দেশটির ফ্যাশন মার্কেটের সব তথ্য। জারা ও ম্যাংগোর মতো ব্র্যান্ডগুলো যেখানে পোশাক তৈরির আগে ধারণা করছেন ক্রেতাদের পছন্দ, সেখানে আজোর্টে জানে, ভারতীয় বাজারে ক্রেতাদের ঠিক কেমন নকশা, ম্যাটেরিয়াল, সাইজ, রং ও স্টাইলের পোশাক চাই! তাঁরা বলছেন, ভবিষ্যতে আজোর্টে নিজেকে জারা, ম্যাংগো, এইচঅ্যান্ডএমের বিকল্প হিসেবে নয়, বরং প্রতিষ্ঠা করবে সবচাইতে যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে।
ইশা আম্বানির এই ব্র্যান্ড ভবিষ্যতে শুধু নগরকেন্দ্রিক না থেকে টায়ার-টু ও টায়ার-থ্রি শহরগুলোতেও পৌঁছে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এসব জায়গার মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে প্রিমিয়াম ফ্যাশনের চাহিদা গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে, জেনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজোর্টে।
উল্লেখ্য যে এর আগে ইশা আম্বানির ব্র্যান্ড আজিও আরামদায়ক ফ্যাশন ও দেশীয় পণ্যের প্রচারে বেশ বড় প্রভাব ফেলেছে। আজিওর পোশাক এখনো ভারতের ইউনিভার্সিটি ও করপোরেটকর্মী নারীদের প্রথম পছন্দ। মিনত্রা ও ফ্লিপকার্টের পণ্যের সঙ্গে আজিও প্রতিযোগিতায় আছে আজও। বলতে গেলে, আজিওর নেপথ্য পরিকল্পনায় আজোর্টে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মাত্র।
আজোর্টের পরিকল্পনা, স্টোর ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুর সঙ্গেই ইশা আম্বানি সরাসরি জড়িত। আজোর্টেকে এক অর্থে ইশার ‘ব্রেন চাইল্ড’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। স্টোরগুলোতে ভিড় এড়াতে ডিজিটাল ও অটোমেটিক চেকআউট সিস্টেম রাখা হয়েছে। এই বিষয়টি ঝামেলামুক্ত শপিংয়ে ক্রেতাদের সাহায্য করছে বলে ক্রেতারা আজোর্টের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
ভারতের ফ্যাশন দৌঁড়ে লাক্সারির সংজ্ঞায়ন নতুনভাবে করছে আজোর্টে। দেশটির প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
ছবি: আজোর্টের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল