ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করেন তিনি। এটাই মূলত তাঁর পড়াশোনার বিষয়। সেই কোন ছেলেবেলা থেকে দেশান্তরী। বলতে গেলে তাঁর বেড়ে ওঠাটাই কানাডায়। সেখানে স্কুল ও কলেজে। ফটোগ্রাফি ছিল তাঁর উচ্চতর শিক্ষার বিষয়। সেখান থেকেই সরে না এসেও ফ্যাশনকে কেমন করে যেন জড়িয়ে ফেললেন নিজের পেশাদার জীবনের সঙ্গে। তা–ও আবার প্রথাগত সৃজনের বাইরে গিয়েই। প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা, তাকে বাঁচিয়ে রাখা আর চলমান নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে আমাদের চারপাশকে বাঁচানোর তাগিদই হয় রেফায়া তুরশিনকে প্রাণিত আর পরিচালিত করেছে পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে।
রেফায়ার কাজ প্রশংসিত হয়েছে। সেই সংগ্রহের ঝলক দেখার সুযোগ এদিন হলো কিছু ফ্যাশনপ্রিয় দর্শকের। তাঁদের বেশির ভাগই ফ্যাশনের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক। তাঁর সংগ্রহের শিরোনাম: ‘পুলড ফ্রম দ্য রুটস উইথ টাং’। আর সেটি উপস্থাপিত হল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) মাল্টিপারপাস হলে। নেপথ্যে ছিল ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগ ও হেরিটেজ ক্লাব। রেফায়া তুরশিনের সংগ্রহের পোশাকে র্যাম্প মাতান ফ্যাশন স্টাডিজের ছাত্রছাত্রীরা।
টেকসই ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন রেফায়া। কানাডায় বড় হলেও তিনি ভালোবাসেন বাংলাদেশকে। সে জন্যই দেশীয় ঐতিহ্য আর শিকড়ের টানে শুরু করেন টেকসই ফ্যাশন নিয়ে তাঁর যাত্রা। শহীদ মিনারের পরিত্যক্ত নানা ফুল, নীল আর পেঁয়াজের খোসার মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে রং সংগ্রহ করে সেগুলোকে খাদি আর মসলিনের মতো পরিবেশবান্ধব কাপড়ে ব্যবহার করেন তিনি। রেফায়ার নিজস্ব ব্র্যান্ডের নাম আরটি অ্যাটেলিয়ার। তবে পরিবেশবান্ধব ডিজাইনে তাঁর বৈচিত্র্যময় সৃজনদক্ষতা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো ।
ফ্যাশন শোতে রেফায়া তুরশিনের কালেকশনে ফুটে উঠেছে পরিবেশের প্রতি সচেতনতার নানা দিক। তাঁর মতে, বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প পরিবেশদূষণের অন্যতম বড় কারণ। পোশাক তৈরিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে শুরু করে প্রচুর পানির ব্যবহার হচ্ছে; ফলে পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। তাই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই সুন্দর ডিজাইনের পোশাক তৈরিকে গুরুত্ব দেন তিনি; সেই সঙ্গে উৎসাহিত করেন অন্যদেরও।
রেফায়ার এই কালেকশনে ছিল দেশীয়, ওয়েস্টার্ন ও ফিউশন পোশাক। পোশাকের নকশায় জিরো ওয়েস্ট ভাবনার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে উপেক্ষিত হয়নি বৈশ্বিক ট্রেন্ড। সাদা আর অফ হোয়াইট জমিনের বেশির ভাগ পোশাকে ফুটে উঠেছে চোখজুড়ানো রঙের খেলা। কোনো পোশাক ছিল নীল তো কোনোটা আবার পুরোই সবুজ। কোনো পোশাকে সেজেছে পেঁয়াজের খোসার রঙে, কোনোটা আবার পরিত্যক্ত গাঁদা ফুলের পাপড়ি থেকে আহৃত রঙে। সব কটিই তাঁর চারপাশ থেকে সংগ্রহ করেছেন ডিজাইনার। টেকসই ফ্যাশনের নিদর্শন স্বরূপ মডেলরা ছোট ছোট গাছ হাতে নিয়েও র্যাম্পে হাঁটেন। পোশাক ছাড়াও গয়না হিসেবে তাঁদের গলায় ও কানে শোভা পায় টি-ব্যাগ দিয়ে তৈরি নেকপিস আর দুল।
উল্লেখ্য, রেফায়া তুরশিন আর্টিস্ট কানাডা (সামার ২০২২ ও ২০২৩), ফ্যাশন আর্ট টরন্টো (স্প্রিং/সামার ২০২৩) এবং ভেগান ফ্যাশন শো ২০২৩সহ বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ ফ্যাশন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর নিজস্ব উদ্যোগ আরটি অ্যাটেলিয়ারের কাজ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ার বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হয় এবং ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কানাডার এলে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।
ফ্যাশন শোতে প্রধান অতিথি হিসেবে এদিন উপস্থিত ছিলেন, বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ওনাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও জায়ান্ট বিজনেস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক হাসান, বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও ফেম সোয়েটারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউল আজম সজল; বিইউএফটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান এবং দুর্জয় বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান।
বিইউএফটির ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফসানা শারমিনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এই ফ্যাশন শো। এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব নবী খান স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং ফ্যাশন স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ফ্যাশন শোতে আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন স্টাডিজ অনুষদের প্রধান, ট্রেজারার, রেফায়া তুরশিনের বাবা ও দাদি, বিইউএফটির ছাত্রকল্যাণ বিভাগের পরিচালক ও ট্রাস্টি বোর্ডর সচিব, লজিস্টিক বিভাগের প্রধান শর্মিলী সরকার, জনসংযোগ বিভাগের প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
ছবি: বিউএফটি