ওপেনহাইমার ছবিটি নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহ এখন তুঙ্গে। ইতিহাসের অনেক অন্ধকার অধ্যায়ের প্রতি এখানে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করেছেন চিত্রনির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। তিনি এই ছবির কলাকুশলীদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন শুটের সময় ‘গ্লো ইন দ্য ডার্ক’ বা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে, এমন হাতঘড়ি পরতে। এই জ্বলজ্বলে উপাদানটি আসলে রেডিয়াম।
এই ছবির পটভূমি ১৯২০ থেকে ১৯৬০ সালের সময়ের। ১৯০০ সালের পর সস্তা শ্রমিক হিসেবে নারীদের দিয়ে এই অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ রেডিয়াম নিয়ে কাজ করতে একরকম বাধ্য করা হতো। রেডিয়াম ঘড়ির কারখানায় বছরের পর বছর কাজ করা এসব নারী আক্রান্ত হতেন নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে। আর তার অন্যতম প্রধান ছিল ক্যানসার। অনেকটা জেনেশুনেই এই ‘রেডিয়াম–কন্যা’দের দিয়ে অবশ্যম্ভাবী ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ রেডিয়াম নিয়ে কাজ করতে হতো।
উল্লেখ্য, এই রেডিয়াম–কন্যাদের জন্য কোন রকম তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধক গ্লাভস, পোশাক, মুখোশ বা চশমা ব্যবহারের ব্যবস্থা ছিল না। তাই হাতে রং করে ঘড়ির রেডিয়াম ডায়াল তৈরি করার সময় তাঁদের শরীরে রেডিয়াম প্রবেশ করত। আর এ কারণে না জেনেই তাঁরা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন ও মৃত্যুমুখে পতিত হতেন। একপর্যায়ে গিয়ে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে ঘড়িতে এভাবে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে ঢালাওভাবে রেডিয়াম ব্যবহারের ওপর আসে নিষেধাজ্ঞা। তারপরও বিখ্যাত ঘড়ির কোম্পানি হ্যামিলটন রেডিয়াম ডায়াল তৈরি করতে থাকে। আর ওপেনহাইমার ছবিতে এই হ্যামিলটন ব্র্যান্ডের ঘড়িই ব্যবহৃত হয়েছে।
১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত শক্ত হাতে এই আইন প্রয়োগ করে। অবশেষে সেই সালেই, অর্থাৎ ওপেনহাইমারের মৃত্যুর এক বছর পর নিত্যব্যবহার্য সবকিছুতেই রেডিয়ামের ব্যবহার বন্ধ করা হয়।
ওপেনহাইমার নেই, কিন্তু তার সব আবিষ্কার আর তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো রয়ে গেছে কালের সাক্ষী হয়ে। তবে এখন কোনো পণ্য তৈরিতে রেডিয়াম যেকোনোভাবে ব্যবহার করতে গেলে অনেক রকম আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নিতে হয় নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। তাই এখন আর কোনো রেডিয়াম–কন্যা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন না জীবিকার তাড়নায়।