বিশ্বখ্যাত জার্মান ব্যান্ড স্করপিয়নস-এর সদস্যদের চোখে 'সরলা'র রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাস
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেস্কোর  অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রসঙ্গে কথা হলো রিকশা পেইন্টকে অন্তরে ধারণ করা মানসুরা স্পৃহার সঙ্গে। তিনি দেশের অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন উদ্যোগ সরলা-এর কর্ণধার। 

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের দিকে এক নবীণ ফ্যাশন উদ্যোক্তা পুরান ঢাকার অলি-গলিতে পায়ে হেঁটে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সত্যিকারের রিকশা ও ব্যানারশিল্পীদেরকে৷ পেয়েও গেলেন ৫০ বছর ধরে এই শিল্পমাধ্যমে কাজ করা এক অভিজ্ঞ শিল্পীর দেখা। সেই থেকেই আমাদের দেশের রিকশা আর্টের অন্যতম ধারক শিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পুর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন সরলার কর্ণধার মানসুরা স্পৃহা। গল্পের ধারাবাহিকতায় জানা গেল, আস্তে আস্তে এই তালিকায় যুক্ত হয় আরও সব রিকশা-চিত্রশিল্পীদের নাম।

স্করপিয়নস ব্যান্ডের জন্য উপহার।
স্করপিয়নস ব্যান্ডের জন্য উপহার।

এভাবে কাজ করতে করতে একদিন দেশের স্বনামধন্য ব্যান্ড চিরকুটের হাত ধরে উপহারস্বরূপ সরলার রিকশাচিত্র আঁকা কাস্টোমাইজড সানগ্লাস পৌঁছে গেল বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা ব্যান্ডগুলোর একটি স্করপিয়নসের সদস্যদের কাছে। স্পৃহা বললেন, ২০২২ সালে মার্কিন মুলুকে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়্যারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গোল্ডেল জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্টের অনুষ্ঠানে এই দুই ব্যান্ডের দেখা হয় সঙ্গীত পরিবেশনা করতে গিয়ে। স্করপিয়নসের সদস্যরা এই রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাস খুব পছন্দ করেন। ছবিও তোলেন। সেই স্মৃতি মনে করতে গিয়ে চিরকুট ব্যান্ডের জনপ্রিয় ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, 'বাংলাদেশ-এর ৫০ বছর পূর্তিতে আইসিটি মন্ত্রণালয় আয়োজিত "গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ" কনসার্টে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়্যার গার্ডেনে এ পারফর্ম করতে গিয়ে সেদিন আমরা বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড স্করপিয়নসের সদস্যদেরকে 'সরলা'র বানানো রিক্সা পেইন্টিং এর সানগ্লাস উপহার দিয়ে গর্ব করে বলেছিলাম, এটা আমাদের নিজেদের আর্ট ফর্ম! আজ সেই রিক্সা পেইন্টিং যখন ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্ব স্বীকৃতি পেল, সবার মতোই আমরাও অত্যন্ত গর্বিত'।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশের বহুবর্ণিল রিকশাচিত্রের মতো বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পপ আর্ট বা কিশ আর্ট সারা বিশ্বেই এখন অত্যন্ত সাড়া জাগাচ্ছে। আর এর মাঝেই সুখবর এল, আমাদের দেশের রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেস্কোর  ইন্ট্যাঞ্জিবল হেরিটেজ বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

সরলার রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাস
সরলার রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাস
রিকশা পেইন্টের শাড়িতে স্পৃহা
রিকশা পেইন্টের শাড়িতে স্পৃহা

আমাদের দেশে শত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও রিকশাচিত্র নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন কয়েকজন ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল উদ্যোক্তা। এই স্বীকৃতি পাওয়া তো তাঁদের নিজেদের জয়গাঁথার অংশ। এই সব নিয়েই বিশদে কথা হচ্ছিল রিকশা পেইন্ট নিয়ে ৮ বছর ধরে কাজ করা 'সরলা'র প্রাণভোমরা স্পৃহার সঙ্গে।

স্পৃহা মজা করে বললেন, একসময় যা দেখতেন তা-ই রিকশাচিত্রে রাঙানোর ইচ্ছা হতো তাঁর। এভাবে সরলার উদ্যোগে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে উঠেছে রিকশাচিত্র আঁকা সানগ্লাস, হারিকেন, কেতলি, চায়ের তৈজস, গ্লাস, গিটার, উকেলেলে, জুতার মতো বহু ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্য।

সরলার সানগ্লাস তরুণ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
সরলার সানগ্লাস তরুণ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
রিকশা আর্ট করা কনভার্স।
রিকশা আর্ট করা কনভার্স।

তবে অনুষঙ্গ হিসেবে সরলার এই সানগ্লাস ও কনভার্স ধরনের জুতা তরুণ প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বা পিকনিক, পুনর্মিলনীর মতো যেকোনো মজার ইভেন্টে বড় পরিসরে অর্ডার পান স্পৃহা এই সানগ্লাসের। তবে সব ছাপিয়ে স্করপিয়নসের সদস্যদের চোখে সরলার করা রিকশা পেইন্টের সানগ্লাসের ছবিগুলো তাঁকে খুব গর্বিত করে। এই গর্ব তাঁর একার জন্য নয়, বললেন তিনি। বরং স্পৃহা গর্ববোধ করেন আমাদের দেশের এই বহুবর্ণিল শিল্পমাধ্যম আর তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে একনিষ্ঠভাবে খেয়ে বা না খেয়ে কাজ করা শিল্পীদের জন্য। 

স্পৃহার বয়ানে, একসময় বহু ব্যানার ও রিকশা চিত্রশিল্পীরা অভাবের তাড়নায় কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। হারিয়েই যাচ্ছিল এই শিল্পের অথেনটিক উৎস। তিনিসহ আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা এই মাধ্যমটিকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছেন সত্যিকার অর্থে।

রিকশা পেইন্ট করা গিটার
রিকশা পেইন্ট করা গিটার
স্পৃহা নিজেই রিকশা পেইন্টে্র প্রতিকৃতিতে।
স্পৃহা নিজেই রিকশা পেইন্টে্র প্রতিকৃতিতে।

তাঁদের উদ্যোগেই এই আর্টের সমঝদার ক্রেতা বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাহিদা। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন তুলি চালিয়ে শুধু মাত্র রংচঙয়ে ছবি আঁকলেই তা রিকশাচিত্র হয়না। তাই সত্যিকারের অথেনটিক শিল্পীদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে যদি আমরা রিকশাচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। 

ছবি: সরলা

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ০৪
বিজ্ঞাপন