পরিবেশদূষণ এই সময়ের সবচেয়ে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী বিষয়। প্রতিদিন যেখানে মানুষের অপরিণামদর্শী জীবনাচরণের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে এখনই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি আবশ্যক। নচেৎ অদূর ভবিষ্যতে মানবজাতি তাঁর অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। এই বিষয়কে মাথায় রেখে আমি আমার ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করি। এই প্রকল্পের শিরোনাম দেওয়া হয় ‘প্লাস্টিক স্রোত’, জানালেন বিইউএফটির ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফসানা শারমিন।
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি যে কারণগুলোয় হচ্ছে, সেগুলো হলো দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, আবর্জনা পুনর্বাসন, মহাসাগরের অম্লকরণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, বন নিধন, ওজন স্তর ধ্বংস, অ্যাসিড বৃষ্টি, জনস্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি। এসবের মধ্যে পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক, যার মাধ্যমে পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর টক্সিন ছড়ায়। এ ছাড়া একইসঙ্গে বায়ু, পানি ও মাটি দূষণের কারণ। কিন্তু নিত্যদিন আমরা অগণিত প্লাস্টিক ব্যবহার করছি এবং সেসব পরিবেশে নিক্ষেপ করছি। তাতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশের বিভিন্ন স্তরে বেঁচে থাকা জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং কুফল আমরা নানাভাবে উপলব্ধি করছি।’
যেহেতু ফ্যাশন শিল্প মানুষের সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি, প্রতিদিন আমরা নানাভাবে ফ্যাশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছি। শিক্ষার্থীদের এই জরুরি বিষয়ের সঙ্গে তাই যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়ে আফসানা শারমিন যোগ করেন, এর ফলে ভবিষ্যতে ওরা ফ্যাশন বা তৈরি পোশাকের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে সমসাময়িক বিষয়ের দাবি তুলে ধরতে সক্ষম হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন উপকরণ ব্যবহার না করার পাশাপাশি পুন:ব্যবহার ও স্থায়িত্বের উপর গুরুত্ব আরোপও ছিল মূল লক্ষ।
এ জন্য তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, ফেলে দেওয়া পলিথিন ও প্রাকৃতিক দূষণের কারণ হয় এমন উপাদান দিয়ে শৈল্পিক ভাবনা যুক্ত করে পোশাক তৈরি করার, যাতে করে মানুষ সচেতন হয়। যে পলিথিন নিত্য ফেলে দিয়ে আমরা প্রকৃতিকে কষ্ট দিচ্ছি, সেই প্লাস্টিক ব্যবহার যেন বন্ধ হয়—এটাই ছিল আমাদের এই কাজের উপজীব্য বা বলা যেতে পারে, এই কাজের মধ্য দিয়ে আমরা এই বার্তা দিতে চেয়েছি।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলমান ২৫তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে আফসানা শারমিনের কিউরেশনে এই কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। এবারই প্রথম চারু ও কারুশিল্পের পাশাপাশি কোন ফ্যাশন বিষয়ক সৃষ্টিকর্ম স্থান পেল এই আসরে। এই প্রকল্পে তাঁর তত্ত্বাবধানে অংশ নেন মাশকুরা বিনতে আরিফ রাত্তিলা, সাহিবা কিরান এরিন, রোদেলা জামাল মিম, আশরাফুল আলম অনীকা, মো. আরিয়ান ইসলাম, আনিকা মাহমুদ, মিজানুর রহমান মিজান, সুমাইয়া সুলতানা, ফাহাদ আনোয়ার, নিলীমা ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ স্বাধীন, তৌফিক এলাহী শুভ, শিহাবুর রহমান, মায়শা ফেরদৌস, তাহমিনা আফরজ উপমা, রবিউল বারি রোম, বাদশা ফাহাদ, মুসতারি তাসনিম, জাহিদুল ইসলাম ফয়সাল, নুসরাত জাহান সুস্মিতা, ফয়সাল স্বাধীন, আইরিন আয়রা, ফাইরুজ মুনিয়া, নূর এ আফরিন মিম, কানিজ ফাতেমা ও মাজহারুল ইসলাম তুহিন।
ছবি: আফসানা শারমিনের সৌজন্যে