গতানুগতিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ড থেকে বেড়িয়ে সৌন্দর্যের অন্য এক সংজ্ঞায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে বিশ্ব। বিষয়টি অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে সবাইকে। তার এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ লজাইনা সালাহ। ৩৪ বছর বয়সী এই মডেল, মেকআপ আর্টিস্ট ও উদ্যোক্তা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এখন রীতিমতো নিজেই টক অফ দ্য ইউনিভার্স। জন্মেছেন ১৯৯০ সালে,মিসরে। ঐতিহাসিক শহর আলেকজান্দ্রিয়ায় তাঁর বেড়ে ওঠা।
লজাইনা বহুদিন ধরে ভুগেছেন দুরারোগ্য লুপাস রোগে। লুপাস তাঁর দেহে জন্ম দিয়েছে আরেক কঠিন চর্মরোগ শ্বেতীর। সমাজে প্রচলিত ধারণা হলো,শ্বেতী রোগ হলে বা ত্বকে সাদা ছোপ দেখা গেলে বুঝি জীবন শেষ। লজাইনা প্রমাণ করলেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শ্বেতী রোগ নিয়েই জিতলেন মিস ইউনিভার্স ইজিপ্টের মুকুট। সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। পরবর্তী ধাপ হিসেবে মাতালেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চ।
অতি সম্প্রতি শেষ হয়েছে মিস ইউনিভার্সের আসর। সুন্দরীর মুকুট উঠেছে মিস ডেনমার্কের মাথায়। ড্যানিশ সুন্দরীর বরাতে মুকুট জুটলেও মন জিতেছেন আরও অনেকেই। এই তালিকার শীর্ষে আছেন লজাইনা সালাহ। বিশ্বের প্রথম শ্বেতী রোগে আক্রান্ত প্রতিযোগী হিসেবে মিস ইউনিভার্সে তিনি নজর কেড়েছেন। লজাইনা জানান, ত্বকের এই রোগ তাঁর আত্মবিশ্বাসে আঘাত হেনেছে বহুবার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন তুলেছেন নিজের সৌন্দর্য নিয়ে। তবে তাঁর এই অপূর্ণতাই তাঁকে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। নিজেকে পারফেক্টলি ইম্পারফেক্ট বিশেষণে বিশেষায়িত করেন তিনি।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে লজাইনা এবারের মিস ইউনিভার্সে এসেছিলেন প্রথম ৩০ জনের মাঝে। এখানে এসেই থেমেছে তাঁর যাত্রা।তবে সবাই তাঁকে স্মরণ করবে বহুদিন। শ্বেতী রোগ নিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে হেঁটেছেন বলে শুধু নয় ,লজাইনার আছে আরো অনেক গুণ।
মডেল ছাড়াও একজন পেশাদার মেকআপ আর্টিস্ট তিনি। নিউইয়র্কের বেভারলি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্টের ডিগ্রি আছে তাঁর। ডিগ্রি নিয়ে বেরোনোর পর পরই মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর।
এছাড়াও মডেল হিসেবে হেঁটেছেন দুবাই ফ্যাশন উইকসহ আরো অনেক নামকরা ফ্যাশন ইভেন্টের মঞ্চে। শুধু তাই নয় , নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও বেশ নাম করেছেন তিনি। এক কথায় বলতে গেলে, তিনি একজন কল্যাণমুখী নারী উদ্যোক্তা। মিশরের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন। এই কাজে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তাঁর মেয়ে।
লজাইনা ব্যক্তিগত জীবনে একজন মমতাময়ী মা। দশ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বছর তিনেক আগে পাড়ি জমান দুবাইয়ে। লজাইনা বলেন, মা হিসেবে তাঁর পরিচয় তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। একবার আট বছর বয়সী একটি শিশু তাঁকে দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠে। ঘটনাটি আহত করে লজাইনাকে। তবে এখন নিজের দশ বছর বয়সী মেয়ের আইডল হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন তিনি।
টিকটকার হিসেবেও লজাইনা বেশ নাম করেছেন। তিনি কিন্তু যা তা পর্যায়ের টিকটকার নন। টিকটকের মাধ্যমে ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন পরিচালনা করার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কীভাবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা যায়, এ নিয়েই তাঁর অধিকাংশ ভিডিও। লজাইনা একজন এই এই গুণে ভরপুর সুন্দরী ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারও বটে। মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই ,তবে নিজের স্ট্রিট স্টাইল ও রোজকার আউটফিটে এক আলাদা ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্ম দিয়েছেন লজাইনা।
লজাইনা সব মেয়েদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। একজন আরব নারী , শ্বেতী ও কঠিন অসুখ লুপাসে আক্রান্ত রোগী আর সিঙ্গেল মাদার হয়েও ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছেন নিজের স্বপ্ন পূরণে। লক্ষ্য পূরণে রোগ ও সামাজিক অবস্থান কখনো বাধা হতে পারে না। আর তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লজাইনা সালাহ।
সূত্র: দি ইকোনমিক টাইমস
ছবি: লজাইনার ইন্সটাগ্রাম