উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিনের পথচলা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা মনোভাবের ছিলেন ফারহানা ইয়াসমিন। শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের পুরো সময়টা কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে। কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন গ্রাম থেকে ঢাকায় যাতায়াত করে। আর এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘সাতরঙ’। বলছি, সাতরঙের উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন মুক্তার গল্প। শিক্ষকতা ও করপোরেট জব ছেড়ে উদ্যোগ শুরু করে তিনি আজ সফল। এসএসসির পর পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন শিক্ষকতা। পড়াশোনা শেষে করপোরেট চাকরি শুরু করলেও এতে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছিলেন না তিনি।

নিজের কারখানায় ব্লকের  কাজ করছেন ফারহানা ইয়াসমিন
নিজের কারখানায় ব্লকের কাজ করছেন ফারহানা ইয়াসমিন

গ্রামে বসবাস করার কারণে সেখানে নারীরা কতটা অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকেন, তা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। হয়তো এ কারণেই সব সময় নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করার চেষ্টা ছিল তাঁর মধ্যে, যাতে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচা যায়। খুব ঘটা করে উদ্যোগ শুরু করেননি তিনি। হঠাৎই চাকরি ছেড়ে শুরু করেন নিজের উদ্যোগ। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান এবং স্বাবলম্বী করতে চান আরও অনেককে। আর তা করা সম্ভব উদ্যোগের মাধ্যমেই। শুরুতে পোশাক নিয়ে কাজ শুরু। কারণ হলো তিনি যেখানে বড় হয়েছেন, অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা, সেখানে খুব সহজে পোশাক তৈরির দক্ষ কর্মী ও কাঁচামাল পাওয়া যায়।

কর্মীদের পাশপাশি নিজেও কারখানায় কাজ করেন উদ্যেক্তা ফারহানা ইয়াসমিন
কর্মীদের পাশপাশি নিজেও কারখানায় কাজ করেন উদ্যেক্তা ফারহানা ইয়াসমিন

তাই দেশীয় ফ্যাশন নিয়ে কাজ করা এবং সামনের দিকে এগোনো তাঁর জন্য সহজ ছিল। শুরু থেকেই তাঁকে সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন তাঁর স্বামী। বিয়ের পর যেহেতু মেয়েদের বাচ্চা, সংসার নিয়ে নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়, তাই পেশাগত জীবনেও ছায়াশক্তি ছিল তাঁর স্বামী, যিনি পেশায় একজন ডাক্তার।

বিজ্ঞাপন

শুরুতে শুধু টাইডাই বা বাটিক ও ব্লক নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে ছোট–বড় সবার পোশাকই তৈরি করেন। সাতরঙের তৈরি পোশাকের ডিজাইন, কাপড়ের রং করা, সেলাই—সবই নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে তৈরি হয়। বর্তমানে তাঁর উদ্যোগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০০ কর্মী যুক্ত আছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে (এফ কমার্স) তাঁর প্রতিষ্ঠানের ৩ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছেন, যাঁদের অনেকেই সাতরঙের নিয়মিত ক্রেতা। অনলাইন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট করার জন্য একটি অফিসও রয়েছে, যা তিনি পণ্য সংরক্ষণ ও অনলাইন ডেলিভারি হাব হিসেবে ব্যবহার করেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহর ও আড়াইহাজারে মোট তিনটি আউটলেট রয়েছে সাতরঙের।

সাতরঙের পোশাকে মডেল
সাতরঙের পোশাকে মডেল

২০২২ সালের শেষের দিকে ফারহানা ইয়াসমিন প্রথম অফলাইন আউটলেট শুরু করেন। এর আগে সাতরঙের পণ্য শুধু অনলাইনে বিক্রি হতো। অনলাইন থেকে অফলাইনে শুরু করার সাহসটা পান ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ প্ল্যাটফর্ম ও আনিসুল হক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে। ‘আনিসুল হক কোহোর্ট ফর গ্রোথ অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস’–এর ছয় মাসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করেন এবং তারপরই অফলাইন ব্যবসা শুরু করেন।

সাতরঙের পোশাকে মডেল
সাতরঙের পোশাকে মডেল

সাতরঙের উদ্যোক্তা ফারহানা নিজের উদ্যোগ নিয়ে বলেন, ‘আমার পণ্যের গ্রাহক ছেলে ও মেয়ে উভয়ই। অনলাইনে যেহেতু মোটামুটি শক্ত একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি, তাই বলতে পারি শহর ও গ্রামে ইতিমধ্যে সাতরঙের অসংখ্য ক্রেতা তৈরি হয়েছে। সাতরঙ নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, দেশের পাশাপাশি পণ্যগুলো বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে চাই। ভবিষ্যতে সাতরঙে পোশাকের পাশাপাশি আরও অনেক পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন ব্যাগ, জুয়েলারি, খাবার ইত্যাদি।’

ছবি: সাতরঙ

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০০
বিজ্ঞাপন