ফেশিয়াল জুয়েলারি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নতুন প্রজন্মের জুয়েলারি ডিজাইনে অন্যতর মাত্রা নিয়ে এসেছে ফেশিয়াল জুয়েলারি বা মুখমণ্ডলের অলংকার। এই ফেশিয়াল জুয়েলারির প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা ঠিক জানা যায় না। একসময় মনে করা হতো, সমাজের পশ্চাদ্গামী শ্রেণি, নরডিক জনগোষ্ঠী বা কাল্ট সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে ফেশিয়াল জুয়েলারি বেশি প্রচলিত। আবার অনেকের ধারণা এই গয়না সাহসী সৌন্দর্যের প্রকাশ করে।

তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন রোমান গ্রিক ও মিসরীয় সভ্যতায় ছিল এর প্রচলন। বিশেষ করে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনে পৌরাণিক দেবদেবীদের এমন গয়না পরতে দেখা যায়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী, আলাস্কার দ্বীপে বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যে এ রকম নিদর্শন খুঁজে পান ব্রিটিশ ভিজুয়াল আর্টিস্ট ‘জন ওয়েব’, ১৭৭০ সালের দিকে।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১৯ শতকে এসে উপমহাদেশের বিভিন্ন উৎসবে ফেশিয়াল জুয়েলারি বিশ্বের নজরে আসে ব্রিটিশ উপনিবেশিকতার বদৌলতে। বলা হয়ে থাকে, দেবী পার্বতীকে সম্মান জানাতে নাক ফুটো করার প্রথা প্রচলিত হয়।

সত্তরের দশকে এসে পাঙ্ক-রকের উত্থানের সময় সেক্স পিস্তল, দ্য রামোনেস, দ্য ক্লাশ ব্যান্ডের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে দেখা যায় একদম চোখধাঁধানো ডাই করা খাড়া চুল, খুব কটকটে রং, কান-নাক-মুখে পিয়ারসিং, ট্যাটুতে একেবারেই ব্যতিক্রমী স্টাইল স্টেটমেন্ট। পরবর্তী সময় পিয়ারসিং ও ট্যাটু মেইনস্ট্রিমে চলে আসে এবং সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৪ সালে ফরাসি ডিজাইনার জাঁ পল গতিয়ের তাঁর স্প্রিং কালেকশনে মোটরসাইকেলের মোটিফে নাকের সঙ্গে চেইন সংযুক্ত করেন এবং এথনিক অনুপ্রাণিত ট্যাটু দেখা যায় তাঁর মডেলদের।

১৯৯৭-৯৮ সালে গোয়েন স্টেফানিকে দেখা যায় উপমহাদেশের  অনুপ্রেরণায় টিপ ও ফেস ক্রিস্টালে কপাল সজ্জিত করেন, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর ভারতীয় বংশোদ্ভূত বন্ধু টনি কানালসই তাঁকে মূলত অনুপ্রাণিত করেন। পরবর্তী সময় অবশ্য সমালোচকেরা একে সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন বলেও আখ্যা দেয়।

২০১৪ সালে আই ব্রো পিয়ারসিং অন্য মাত্রায় চলে যায়। রোডারেট স্প্রিং রানওয়ে শোয়ে মডেলদের দেখা যায় সার্কুলার আই ব্রোতে, যা শুধু ট্রেন্ড সেট করেনি, বরং তাঁদের দেখাচ্ছিলও বেশ সুন্দর। আর এই নিরীক্ষা প্রশংসিত হয়।

২০১৫ ভোগের রানওয়ে শোতে জিভাঁশির ফল কালেকশনে মডেলদের দেখা যায় পিয়ারসিং ছাড়া নানা ধরনের ফেস জুয়েলারিতে। সেবার প্যারিস ফ্যাশন উইকে রিকারডো টিসির পোশাকের সঙ্গে প্যাট ম্যাকগ্রাথের মেকআপ ও টেম্পরারি ফেস জুয়েলারি বেশ আলোচিত হয়েছিল।

২০২৩ সালে এসে ইনস্টাগ্রাম খুললেই দেখা যাচ্ছে, লেটেস্ট বিউটি ট্রেন্ডে ফেস জুয়েলারি ব্যাপকভাবে আবার ফিরে এসেছে। ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেকআপ ভ্লগাররা তা আবার ফিরিয়ে আনছে। এই সময়ে পপ ডিভা ডুয়া লিপা আধুনিক ফেস জুয়েলারির পুরো কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে আসছে কিংবদন্তি মেকআপ আর্টিস্ট ফেলিস কোহেনেন নাম; তিনি হলোগ্রাফিক ভিনাইল কাটআউট, প্রসস্থেটিক জেলি পিস, ড্রাই  ফ্লাওয়ার এবং ছোট স্বর্ণের অংশ দিয়ে এসব জুয়েলারি তৈরি করে থাকেন।

দিনে দিনে এ ধরনের জুয়েলারির চাহিদা বাড়ছে। অনলাইন বিক্রি শুরু হয়েছে এবং প্রচুর ক্রেতাও রয়েছে। যদিও পশ্চিমে এখন এর জোয়ার চলছে; বিশ্বায়নের যুগে সেই ঢেউ এখন এসে পড়েছে উপমহাদেশেও। সময় যতই এগিয়ে যাক না কেন, ঘুরেফিরে আমরা সেই অতীতেই ফিরে যাই। ফ্যাশনের এটাই বোধ হয় অলিখিত নিয়ম।

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন