'ফুল ফোটে, ফুল ঝরে, ভালোবাসা ঝরে পড়ে না'।
প্রিয়জনের দেওয়া ফুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে খুব কষ্ট হয়। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অনেকেই ভালোবাসা দিবসে খুব আরাধ্য ফুল পেয়েছেন ততোধিক আরাধ্য ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে। এখন সেই ফুল আর কয়দিন পানিতে রাখা যায়! বইয়ের পাতার ভাঁজে শুকিয়ে রাখলেও তা যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আর এসব ভাবনাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ফারিন তাসনুভাকে ফুল সংরক্ষণ করে রাখার কাজে। ফুল রেজিনে সংরক্ষণ করেন তিনি ফরমাশমতো। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘এতেলিয়ে দে আর্তে’। ফ্রেঞ্চ উচ্চারণে ‘আতলিয়ে’ অর্থ ডিজাইন স্টুডিও, যেখানে উৎকৃষ্ট শিল্পচর্চা হয়। আর ফারিনের সৃজনগুলোকে আর্টপিস তো বলাই যায়।
ফারিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। ঢাকার মিরপুর থেকে কাজ করছেন ফুল সংরক্ষণ নিয়ে। প্রিয়জনের দেওয়া ফুল কীভাবে সারা জীবন নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দেওয়া যায়, এই চিন্তা থেকে মূলত রেজিনের কাজ শুরু করেন তিনি, বললেন। পেজটা খোলা হয় ২০২০–এর এপ্রিলে, কোয়ারেন্টিনের অলস সময় কাটানো আর ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে আর্টিস্টস ব্লক কাটানোর উপায় হিসেবে।
ফারিন একটু একটু করে শুরু করেন রেজিনের কাজ। তখন রেজিনের কাজ করার জন্য এত সহজলভ্য ছিল না উপকরণ। দেশের বাইরে থেকে দুই থেকে তিন গুণ খরচে আনিয়ে সেগুলো দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে কাজ শিখতে শিখতে এত দূর আসা। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করার ইচ্ছাও বরাবরই ছিল, বললেন এই উদ্যোক্তা।
এখন পর্যন্ত একা হাতেই পেজটা চালিয়ে যাচ্ছেন ফারিন। সবার পছন্দের তারিখ, ছবি, ফুল দিয়ে কাজ করে তাদের বিশেষ দিনের অংশীদার হতে পারাটাই দিন শেষে শান্তির অনুভূতি জোগায় ফারিনকে। পরিবারের সবাই প্রথম দিকে কাজটি পছন্দ না করলেও এখন তারা গর্বই করে বলা যায়, জানা গেল ফারিনের বয়ানে। প্রিয়জনের জন্য গিফট হিসেবে এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আসল ফুল দিয়ে বানানো রেজিনের কাস্টম মেড জুয়েলারি কিংবা ফটোফ্রেম। আরও অনেক বেশি সুযোগ আছে রেজিন দিয়ে জিনিসপত্র বানানোর। লকেট, আংটি, কানের দুল, বুকমার্ক, চাবির রিং, কলম, ফটোফ্রেম—সবকিছুই কাস্টমাররা নিজের মনমতো করে বানিয়ে নিতে পারেন।
নান্দনিক হাতের কাজ পছন্দ করেন যাঁরা, এসব জিনিস তাঁদের জন্যই। সামনে অনার্স শেষে ইচ্ছা আছে ফারিনের চাকরির পাশাপাশি কাজটি চালিয়ে যাওয়ার। তিনি বললেন, ‘জিনিসটা করতে কষ্ট হলেও দিন শেষে আমি আত্মতৃপ্তি পাই।’ সারা দেশের মানুষ এখন ফারিনের কাছে ফুল পাঠিয়ে সংরক্ষণের কাজ করিয়ে নেন। কিন্তু অনেকের কাছে এই ফুল পাঠানো ব্যাপারটা একটু ঝামেলার। তাই যদি সুযোগ হয়, ফারিনের ইচ্ছা আছে যেন পেজ থেকেই ক্লায়েন্টের কাছে গিয়ে ফুল আনানো যায়, সে ব্যবস্থা করার। কাল ভালোবাসা দিবসে পাওয়া প্রিয়জনের দেওয়া ফুল এভাবে সংরক্ষণ করতে চাইলে এতেলিয়ে দে আর্তে (Atelier de Arte ) পেইজে নক দিন এখনই।
ছবি: এতেলিয়ে দে আর্তে