ঘুরতে যাওয়ার আগে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, কোন পোশাকটি হবে সময় উপযোগী ও ট্রেন্ডি। সঙ্গে থাকতে হবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গও। সারা দিন ঘোরাঘুরি, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজন আবহাওয়া উপযোগী আরামদায়ক পোশাক ও অনুষঙ্গ।
শুধু স্টাইলের জন্য নয়, পোশাক নির্বাচন করতে দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এক. স্বস্তি; দুই. জায়গা বুঝে পোশাক নির্বাচন। যেখানে যেমন, সেখানে তেমন পোশাক পরাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন শীতের সময় ভ্রমণে শর্ট স্কার্ট একেবারেই বেমানান। পাহাড়, সমতল কিংবা সমুদ্রসৈকত—ভ্রমণ যেখানেই হোক, জায়গা বুঝে পোশাক বাছা উচিত। তবে যেকোনো পোশাকে মানিয়ে নিতে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
সমুদ্র ভ্রমণ মানেই মন ভাল করা একরাশ ফুরফুরে হাওয়া। তাই পোশাকের আমেজটা ঢিলেঢালা হলে ভালো। এই আবহাওয়ায় ফ্যাশনপ্রেমী মেয়েরা সমুদ্রসৈকতের জন্য বেছে নিতে পারেন ম্যাক্সি জামা, প্রিন্টেড লং শর্টস, জাম্পস্যুট, কিমোনো কিংবা রঙিন কাফতান। সুতি বা ডেনিম শর্টসের সঙ্গে বডি হাগিং ট্যাংক টপ বা স্প্যাগেটিও বেশ মানাবে। শীতে ভ্রমণে গেলে বারবিকিউ পার্টি বা সান্ধ্যকালীন আড্ডা বেশ জমে। তখন বেছে নেওয়া যেতে পারে নিয়ন রঙের টপের সঙ্গে সিকুইনড বা এমবেলিশড শর্টস। চেনা শর্টস-টপও কিন্তু লুকে নতুন টুইস্ট দিবে।
অন্যদিকে সমুদ্র ভ্রমণে ছেলেদের জন্য পারফেক্ট পোশাক হতে পারে কালারফুল লিনেন, হাওয়াই বা কিউবান কলার শার্ট। ফ্লোরাল বা ছাপা নকশার হলে বেশ মানাবে। চিনোস সমুদ্রসৈকতে ছেলেদের জন্য আরেকটি আদর্শ পোশাক হতে পারে। শর্টস অবশ্যই মানাসই। তবে অনেক হোটেলে ছেলেদের শর্টস পরে ঘোরার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই সেই ঝক্কি এড়াতে একটু লম্বা ঝুলের ট্রাউজ়ার বা থ্রি–কোয়ার্টার সঙ্গে রাখলে ভালো।
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে ঠান্ডাপ্রতিরোধী এবং হাঁটাচলার সুবিধার্থে ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য জিনস হলে ভালো। শীতে বম্বার জ্যাকেট, ট্রেঞ্চ কোট রাখা যেমন জরুরি, তেমনই স্টাইলের জন্যও মানানসই। শীতের পোশাকের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে আলাদা না করলেও চলে। কারণ, ইউনিসেক্স পোশাকের ট্রেন্ড এখনো বিদ্যমান। তাই নিজেকে মানায়, এমন পোশাকই বেছে নিলে ভালো। তবে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে একটি চাদর রাখা যেতে পারে। আর পাহাড় বলে পার্টি হবে না তা তো নয়, তাই সান্ধ্যকালীন বা রাতের পোশাক থাকতে পারে অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানিয়ে।
সমুদ্র কিংবা পাহাড় ছাড়া এ সময় সমতলেও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন অনেকে। সমতলে ভ্রমণে যাওয়ার ঝক্কি কিছুটা কম থাকে। তাই পোশাক নিয়েও খুব একটা সমস্যা হয় না। যেহেতু হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে, তাই আবহাওয়া উপযোগী পোশাক সঙ্গে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
মেয়েদের জন্য ফুলস্লিভ টপস, টিউনিক, কুর্তি, কাফতান, পঞ্চ, হালকা হুডি জ্যাকেটে আরাম এবং স্টাইল দুটোই মিলবে। এই পোশাকগুলো বেশ ট্রেন্ডি ও আধুনিক। মানিয়ে যাবে ভ্রমণের পরিবেশের সঙ্গে।
অন্যদিকে ছেলেদের জন্য এ সময় পছন্দ ও শীতের তারতম্য বুঝে বেছে নিতে হবে পোশাক। স্টাইলিশ লুক পেতে স্লিম ফিট ডেনিম জিনস রাখা যেতে পারে। এর সঙ্গে ফুলহাতা টি–শার্ট, হালকা ফেব্রিকের কোট বা সোয়েটার, ডেনিম শার্ট, ক্ল্যাসিক ট্রেঞ্চ কোট, পুলওভার সোয়েটার, ফ্ল্যানেল শার্ট কিংবা একরঙা হুডি বেশ মানাবে।
এ ছাড়া সোয়েড প্যান্টের সঙ্গে পাফার জ্যাকেট, স্ট্রেইট লেগ জিনসের সঙ্গে টার্টলেনেক সোয়েটার, ফুলহাতা টি–শার্টের ওপর ডেনিম শার্ট স্টাইলিশ লুক দিবে। তবে সকাল, দুপুর ও রাতের আবহাওয়া উপযোগী পোশাক নির্বাচন করলে ভ্রমণ হবে আরামের।
পোশাকের সঙ্গে যেন অনুষঙ্গ মানানসই হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হয় ফ্যাশনিস্তাদের। বেড়াতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হলো ব্যাগ। এ ছাড়া ভ্রমণ অনুষঙ্গ হিসেবে স্টাইলিশ স্কার্ফ, কমফোর্টার হতে পারে এই সময়ের সঙ্গী। বাহারি রংয়ের স্কার্ফ বা কমফোর্টার সঙ্গে রাখলে সেগুলো ব্যান্ডানা বা ইচ্ছেমতো হেডগিয়ার করে পরা যাবে। শীত বেশি হলে অবশ্যই গ্লাভস, টুপি সঙ্গে রাখা উচিত। পোশাকের সঙ্গে মানানসই ও আবহাওয়া উপযোগী জুতা বেছে নেওয়া জরুরি। পাহাড় ও সমুদ্রের ক্ষেত্রে জুতা হবে ভিন্ন। সমুদ্রসৈকতে ফ্লিপফ্লপের বিকল্প নেই। রাতের পার্টিতে গ্ল্যাডিয়েটর জুতা বেশ মানাবে। পাহাড়ে গেলে ট্র্যাকিংয়ের উপযোগী জুতা, বুট হবে মানানসই।
তবে সমুদ্র, পাহাড় বা সমতল, দেশ বা বিদেশ—গন্তব্য যেটাই হোক, সেখানকার আবহওয়া, তাপমাত্রা, ইত্যাদি জেনে তবেই ব্যাগ গোছানো উচিত। না হলে বেড়াতে গিয়ে আনন্দ মাটি হবে। আর অবশ্যই অকারণে বেশি পোশাক নেওয়া একেবারেই কাজের কাজ হবে না। বরং ভারী ব্যাগ টানাটানিতে ক্লান্তি বাড়বে।
ছবি: ইয়াং কে