চায়না টাউন: নিম্নবিত্তদের ডিপার্টমেন্ট স্টোর
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ফার্মগেট চত্বরের পদচারী–সেতু থেকে হলিক্রস কলেজের দিকে রাস্তা ধরে এগোতেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়ে বড় করে হলুদ ব্যানারে লাল রঙে লেখা ‘চায়না টাউন’। খুচরা পণ্যের এই মার্কেটপ্লেসে সব বয়সী মানুষের পোশাক থেকে শুরু করে প্রসাধনী পণ্য, ব্যাগ, জুতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর পসরা রয়েছে এখানে। আছে তৈজসপত্র আর ঘর সাজানোর অনুষঙ্গের দোকান। চশমা, ঘড়ি, এয়ারফোন সব আছে এই মার্কেটে; যেন একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে চায়না টাউনের।

পণ্য অনুযায়ী দোকানগুলোর বিন্যাস করা হয়েছে। মার্কেটের সামনের দিকে খেলনা, ব্যাগ, প্রসাধনসামগ্রী ও ক্রোকারিজের দোকানগুলো। ভেতরের দিকে কাপড়ের—বাচ্চাদের পোশাক, বড়দের ট্রাউজার, বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট, টি–শার্ট, টপস, গাউন, লেডিস শার্ট, থ্রিপিস, কুর্তি—সব পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। আছে বাহারি সব জুতার কালেকশন। ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পুঁথি-পাথরের কারুকাজ করা মিউল, যা জুতি নামে বেশ পরিচিত।

মাত্র ১০০ টাকার টি-শার্ট থেকে শুরু করে ২৫০-৪০০ টাকার মধ্যে ট্রাউজার, গ্যাবার্ডিন, জিনস বিক্রি হচ্ছে চায়না টাউনে। ক্রোকারিজের দাম শুরু হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা থেকে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভার, পাপোশসহ ঘরোয়া নানা উপকরণ ও আছে নানা মান ও দামের। ডিজাইন, আকার ও গুণগত মানভেদে দাম শুরু ২৫০ টাকা থেকে।

বিজ্ঞাপন

চায়না টাউনে সাজসজ্জার দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। এই পণ্যগুলোই সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায়। পাঁচ টাকার পাঞ্চ ক্লিপ থেকে শুরু করে ৪০০ টাকার অ্যান্টিক স্টাইলের হার সব আছে এই দোকানগুলোতে। বিভিন্ন ধরনের চুড়ি, কানের দুল, মালার সম্ভার এই দোকানগুলোয়। স্কুল-কলেজ আশপাশে থাকায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভিড় জমে এসব দোকানে।

খোলা বন্ধের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। সাধারণত সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে চায়না মার্কেট। বিক্রেতারা জানান, এই এলাকায় অনেক স্কুল–কলেজ থাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি থাকে। এ ছাড়া নাখালপাড়া, তেজকুনি পাড়া, মণিপুরিপাড়া, বেগুনবাড়ি এলাকার মানুষের আনাগোনা মার্কেটে থাকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। বিক্রেতাদের মতে, নতুন মার্কেট হওয়ায় ক্রেতা তুলনামূলক কম। তবে আশা করা যাচ্ছে ঈদের সময় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাবে।

সাধারণত দেখা যায় কোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে কমপক্ষে লাখ টাকা জামানত দিতে হয়; কিন্তু এই মার্কেটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো জামানত ছাড়াই সুযোগ পাচ্ছে ব্যবসা করার। প্রতিদিন বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা মার্কেটের মালিকপক্ষকে দোকানের সাইজ অনুযায়ী ভাড়া দিয়ে থাকেন; যার পরিমাণ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে বেশ সস্তায় পণ্য বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সুযোগ দেখছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এই  মার্কেটে ব্যবসায়ীদের খরচ কম হওয়ায় গুণমানসম্পন্ন পণ্য, কম লাভে, কম দামে দিতে পারছেন বলে জানান বিক্রেতা সেলিম মিয়া।

বিজ্ঞাপন

মূলত করোনাকালে অনেক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন আর ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেননি। তাঁরা জামানতের অভাবে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করতে না পারায় ফুটপাতে বসতেন। কেউ কেউ সারা বছর বিভিন্ন জেলায় ঘুরে মেলায় বিক্রি করত তাঁদের পণ্য। তাঁরা স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার একটা সুযোগ পেয়েছেন এই মার্কেটে।

ব্যবসায়ী দিপু ইসলামও সেই ব্যবসায়ীদের একজন। দিপু ও তাঁর শ্বশুর দুজন দুটি দোকান সাজিয়ে বসেছেন। নারায়ণগঞ্জ তাঁতের কাপড় ও পুরুষ ও নারীদের নানা ধরনের পোশাক সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। ৪০০ টাকা থেকে শুরু হয় দাম। দিপু জানান, করোনার সময় বড় ক্ষতি হয়েছে। তারপর স্থায়ী দোকান সাজিয়ে উঠতে পারিনি। এখানে নতুন জায়গা ও সব ব্যবস্থা সুলভ হওয়ায় দুটি দোকান দিয়ে আবার শুরু করেছি।

ব্যবসায়ী ও মার্কেট পরিচালনায় থাকা আবুল হাসনাত দুলাল জানান জিনিসপত্রের দাম কম হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা বেশি আসছেন এই মার্কেটে। ঢাকার ফুটপাতের দোকানে মানুষের চলাচলে অসুবিধা, তা ছাড়া রোদ–বৃষ্টির ঝামেলা যাতে না পোহাতে হয়, ক্রেতা–বিক্রেতা সবার জন্য চিন্তা করেই এই চায়না টাউন মার্কেট করা। মজার বিষয় হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে এলেও কিছু না কিছু কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

ছবি: আশিকুর রহমান

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ১৭
বিজ্ঞাপন