কাজের ব্যস্ততা লেগেই আছে এ সময়ে কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন সোহিনী সরকার। অভিনয়শৈলীর পাশাপাশি মায়াময় মুখশ্রী আর ধারালো শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য সোহিনীর ভক্তকুল ওপার বাংলা ছাপিয়ে এদিকেও বেড়ে চলেছে জ্যামিতিক হারে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে হাল ফ্যাশনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সোহিনী বলছিলেন, কয়েক বছর ধরে পূজায় কাজের ব্যস্ততা খুব বেড়েছে। যদিও মাঝে দুই বছর করোনা মহামারির জন্য সব বন্ধই ছিল বলতে গেলে। তবু আমাদের এখানে পূজায় অনেক ধরনের কার্যক্রম থাকেই।
আসলেই পূজার সময়টাতে প্রচুর ইভেন্ট বা পূজাকেন্দ্রিক শুট থাকে। সেগুলোয় যাওয়া মানেই তো ইন্ডাস্ট্রির কলিগ ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া। একসঙ্গে বাসে কিংবা গাড়িতে করে মণ্ডপে যাওয়া। সোহিনী বললেন, তাই এ সময় কোন শাড়ি কবে পরা হবে, সে নিয়ে একটা চাপ থাকে। আর এমন ব্যস্ততা ষষ্ঠী, সপ্তমী পর্যন্ত চলে। স্বস্তির সুরে বললেন সোহিনী, অষ্টমী থেকে নিজের জন্য কিছুটা সময় থাকে। তারপর দশমীতে বহুল প্রতীক্ষিত সিঁদুর খেলা।
তবে জানা গেল, এ বছর দশমীর দিনেও প্রচুর কাজ আছে। দুপুর থেকে সে কাজ শুরু হবে। তবে সোহিনী অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকে নবমী পর্যন্ত নিজের পরিবারের সদস্য আর কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। তবে কিছুটা সন্তুষ্টি নিয়ে সোহিনী বললেন, কাজের চাপ এ সময়টায় থাকলে ভালোই লাগে। আর জানা গেল, পূজার পরপরই তিনি তিন-চার দিনের একটা ব্রেক নিয়ে ঘুরতে যান। তাই পূজায় মন দিয়ে কাজটা করার চেষ্টা করেন এ অভিনেত্রী।
এরপর এল ছোটবেলার পূজার স্মৃতির গল্প। বলতে বলতেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন সোহিনী। তিনি বললেন, ‘ছোটবেলার স্মৃতি প্রচুর আছে আমার। আমাদের সময় তখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না । বাড়িতে পুজো বার্ষিকী আর আনন্দ মেলা পত্রিকার পুজো সংখ্যা কখন আসবে, সেই অপেক্ষায় থাকতাম। সেখানে কী কী গল্প বেরোচ্ছে, লেখা আসছে, এসব নিয়ে একধরনের উন্মাদনা ছিল। পূজার গান নিয়েও ছিল তুমুল আগ্রহ। স্মৃতি হাতড়ে বললেন, সে সময় এক মাস ছুটি থাকত স্কুল। পড়াশোনা বন্ধ থাকত কিছুদিনের জন্য। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা দেখা হতো সবাই মিলে। তবে তাঁদের বাড়িতে ষষ্ঠী পর্যন্ত একটু পড়াশোনা করতেই হতো।’
সোহিনী আগের আর এখনকার পূজার আয়োজনের তুলনা করে বললেন, ‘এখন তো মহালয়ার পরদিন থেকেই সবাই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সময় ষষ্ঠীর দিন অনেকে ঠাকুর দেখতে বের হতো না।’ জানালেন, ছোটবেলার স্মৃতির মধ্যে অন্যতম হলো, তাঁর নিজেরই একবার কুমারীপূজা হয়েছিল । আবার পূজার হাতখরচ হিসেবে বড়দের কাছে দুই টাকা, তিন টাকা করে পেয়ে সেগুলো জমিয়ে রাখা, বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম ঠাকুর দেখতে যাওয়ার স্বাধীনতা, প্যান্ডেলে লুকোচুরি খেলা, দশমীর সিঁদুর খেলার দিন বই-খাতা নিয়ে ঠাকুরের পায়ে প্রমাণ করা এমন অনেক স্মৃতি আছে সোহিনীর ঝাঁপিতে। তিনি বললেন, সে সময় জাঙ্ক ফুড খাওয়ার এত চল ছিল না। তাই ওই সময়টায় অপেক্ষা থাকত চাওমিন, কোমল পানীয় বা একটা আইসক্রিম খাওয়ার। খাওয়াদাওয়া, গান, নতুন জামা আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার স্বাধীনতাই ছিল বেশি আনন্দের স্মৃতি।
এবারের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে সোহিনী বললেন, অষ্টমীর সকাল পর্যন্ত কাজ করবেন তিনি। এবার যেহেতু অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে পূজা হচ্ছে, তাই অতটা গরমও নেই। সেজেগুজে বের হওয়া, অনেকের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা আনন্দ আছে। পূজা ওপেনিংয়ে গেলে প্রচুর ভক্ত দাঁড়িয়ে থাকেন দেখা করার জন্য। স্বীকার করলেন সোহিনী যে এতে একধরনের স্ট্রেস যায়, প্রচুর সেলফি তুলতে হয়, কিন্তু সেটাতেও একটা মজা আছে।
এবার অবধারিতভাবেই এল পূজায় প্রিয় খাবারের কথা। সোহিনী জানান, তাঁর পূজার বিশেষ সব মজার মজার খাবার খাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এ সময় তাঁদের বাড়িতে যা রান্না হবে, তার মধ্যে মাটন আর মাছ তো আছেই। ইলিশ হলে জমে যাবে খাওয়া, বললেন সোহিনী। সহাস্যে জানালেন, ‘আমি মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসি। পূজার সময় ডায়েটের কোনো ব্যাপার নেই। তাই লুচি খেতে হবে একদিন।
সোহিনীকে তো যা পরেন তাতেই দারুণ মানিয়ে যায়। কিন্তু পূজার সাজ বলে কথা! জানালেন, শাড়ি তো অবশ্যই পরব। প্রচুর শাড়ি এবার উপহার পেয়েছি। ১৪টি শাড়ি পেয়েছি, সঙ্গে জামাও পেয়েছি। তবে শাড়িই পরব আমি। একদম এথনিক সাজে থাকব। শাড়ি, গয়না, চুড়ি, খোঁপা বেঁধে মাথায় ফুলের সাজেই পূজার সাজ পূর্ণ হবে।
সোহিনী অবশেষে জানালেন, পূজায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা সে রকম কিছু নেই। তবে ইয়াঁদের এখানে বিখ্যাত একজন অভিনেতা আছেন যাঁকে বিশ্বনাথদা বলেন সবাই। তাঁর বাড়িতে ২০০ বছরের পুরোনো দুর্গাপূজা হয়। সেখানে যাওয়া হবে। আর জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ ভারত বর্ডারসংলগ্ন এক গ্রামে বেশ সুন্দর পূজা হয়। বললেন ইচ্ছে আছে সেখানেও যাওয়ার। আগের বছরও গিয়েছিলেন সেখানে সোহিনী। মাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে এবার তাঁর।
ছবি: সোহিনী সরকারের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম