ইয়োগার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য নিজেই ভালো রাখা যায়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

প্রতিবছর ২১ জুন বিশ্ব ইয়োগা দিবস পালন করা হয়। ইয়োগা তো এক চিরন্তন বিষয়। বহুকাল ধরে চলে আসা এই ইয়োগার আবেদন ও উপযোগিতা সময়ের সঙ্গে কোথায় অবস্থান করছে, এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল আনিকা রাব্বানীর কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ইয়োগা কেবল আমাদের শারীরিকভাবেই না, মানসিকভাবেও সুস্থ রাখে। আমরা সবাই আসলে খুব স্পিরিচুয়াল না। একেবারে আত্মার শুদ্ধিকরণের ধারণা থেকে ইয়োগা সবাই করে না।’

ছোটবেলা থেকেই ইয়োগা করেন আনিকা
ছোটবেলা থেকেই ইয়োগা করেন আনিকা

আনিকার বয়ানে জানা গেল, তিনি ছোটবেলা থেকেই ইয়োগা শুরু করেন। কারণ, ছোটবেলায় ভেঙে যাওয়া মেরুদণ্ড সারিয়ে তোলার জন্য উপকারী ছিল তা। কেউ সৌন্দর্যের জন্য, ওজন কমাতে, কেউ পারিবারিক অশান্তি সামাল দিতে বা মানসিক প্রশান্তির জন্য ইয়োগা করছেন বলে তিনি মত দেন। বললেন, ‘এখন আমি ইয়োগা করি। কারণ, এতে আমার স্বাস্থ্য ভালো থাকে।’ আনিকা সন্তুষ্টি নিয়ে বলেন যে এখন সবাই ইয়োগা করছে, যেটা খুব ইতিবাচক বিষয়।

বিজ্ঞাপন

সময়ের সঙ্গে ইয়োগার ধরনের পালাবদলের প্রসঙ্গে আনিকা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে, কিন্তু প্রাচীন সেই ইয়োগা টেকনিকগুলোই কিন্তু সবাই অনুসরণ করছে। আনিকা আরও বলেন, করোনাকালে তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর ফিটনেস স্টুডিওটা আর চলবে না। তাই সে সময় হুট করেই অনলাইন ক্লাস শুরু করেন তিনি। করপোরেট চাকুরে থেকে শুরু করে ঘরেই কাজ করেন, এমন সবার কাছ থেকেই দারুণ প্রতিক্রিয়া পান তিনি, যা তাঁর কাছে এক দারুণ ব্যাপার ছিল বলে তিনি জানান। আনিকা আরও বলেন, ‘বাচ্চারা কিন্তু খুব আগ্রহী এসব বিষয়ে। আমার মেয়ের বয়স ১১। এমনিতে সে স্কুলে ফুটবল খেলে। বাচ্চারা তো বড়দের দেখে শেখে। আর সে–ও আমার দেখাদেখি ইয়োগায় আগ্রহী হচ্ছে।’

ইয়োগার মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিজেকে ফিট রাখা যায়
ইয়োগার মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিজেকে ফিট রাখা যায়

আনিকার মতে, সব সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ইয়োগার মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিজে ফিট থাকলে অনেকখানি ভালো থাকা যায়। কিছুটা আফসোস নিয়েই বললেন, বাইরের দেশের মতো আমাদের দেশে ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রি অত জনপ্রিয় নয়। তবে ধীরে ধীরে এ বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

যাঁরা নতুন করে ইয়োগার বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কীভাবে শুরু করা যায় বা শরীরে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, এসব নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে। তাঁদের সবাইকে অভয় দিয়ে আনিকা বলেন, ‘এটা খুবই ভুল ধারণা যে ইয়োগা করার জন্য শরীর খুব বেশি ফ্লেক্সিবল হতে হয়। ইয়োগাতে সেভাবে পেশি গঠন হয় না। ইয়োগা সবার জন্য। এটি নির্ভর করে মূলত মানসিক শক্তির ওপর।’

তরুণ থেকে প্রৌঢ়— সব বয়সের ছাত্র আছে আনিকার
তরুণ থেকে প্রৌঢ়— সব বয়সের ছাত্র আছে আনিকার

তিনি বলেন, ‘আমার ২৫ থেকে ৭৫ বছর—সব বয়সের ছাত্র আছে। প্রত্যেকটি আসন কাস্টমাইজ করার ব্যবস্থা আছে। একটা কঠিন আসন একভাবে হচ্ছে না, তো তার জন্য অন্য টেকনিক আছে।’

আনিকা রাব্বানী ইয়োগার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘ব্রিটিশরা আসার আগে কিন্তু ভারতবর্ষে অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না, প্যারাসিটামলের মতো ব্যথানাশক ছিল না। এখন আমরা কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাই। সে সময় আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসা ছিল। আর সেই সঙ্গে যোগব্যায়ামেরও প্রচলন ছিল।’

ইয়োগা থেকে অনেক উপকার পেয়েছেন আনিকা
ইয়োগা থেকে অনেক উপকার পেয়েছেন আনিকা

ইয়োগা থেকে আনিকা পেয়েছেন অনেক উপকার, বললেন তিনি সন্তুষ্টি নিয়ে। ৪৩ বছর বয়সে এসে তাঁকে প্রথম দেখায় অনেকেই তাঁর বয়স বিশ্বাস করতে চায় না। হেসে জানালেন, সেশন নিতে গেলে অনেকে ভাবেন কম বয়সী, কেউবা সমবয়সী। ৪০ বছর বয়সের পর মেয়েদের মেনোপজ শুরু হয়ে যায় বলে অনেকে ভাবেন জীবনের শেষ তা। আনিকা বললেন, এটা আসলে ভুল ধারণা। জানালেন, তাঁর ফিটনেস সেন্টারে ৭০ বছর বয়স্ক একজন আসেন তাঁর নাতনিকে সঙ্গে করে। অনেকের চেয়ে বেশি ভালো ইয়োগা আসন করেন তিনি।

আনিকা এক প্রসঙ্গে বলেন, ‘খুব ছোটবেলা থেকে হাইপোথাইরয়েড সমস্যা থাকায় আমার সময়ানুবর্তিতা পালন করতে হয়, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হয়। আর এই জীবনযাপনে আমি পরিবর্তন এনেছি ইয়োগার মাধ্যমে।’ তাঁর ভাষ্যমতে, ‘ইফ ইউ থিংক ওয়েল ইউ উইল ফিল ওয়েল।’ ইয়োগা তাই তাঁর জন্য জীবনসঞ্জীবনী।

ইয়োগাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন আনিকা
ইয়োগাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন আনিকা

আমাদের দেশে ইয়োগা নিয়ে আর কী হওয়া উচিত—এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আনিকা রাব্বানী বলেন, ‘ইয়োগাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। যাঁদের আসলেই ইয়োগা দরকার, তাঁদের কাছে পৌঁছানো উচিত। অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছে, রাস্তায় পথশিশু আছে, যারা ভগ্নস্বাস্থ্য এমনকি মাদকাসক্ত।

নিয়মিত যোগব্যায়ামের জন্যও আমাদের সময় বের করার পরামর্শ আনিকার
নিয়মিত যোগব্যায়ামের জন্যও আমাদের সময় বের করার পরামর্শ আনিকার

ইয়োগাকে কীভাবে সর্বজনীন অভ্যাসে পরিণত করা যায়, সেই উত্তরে পরিশেষে আনিকা বলেন, ‘সময় বের করতে হবে। আমরা যেমন খাওয়া, শপিং, টিভি দেখা এগুলোর জন্য সময় বের করি, নিয়মিত যোগব্যায়ামের জন্যও আমাদের সময় বের করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্যের জন্য সময় দেওয়া দরকার। আর ইয়োগার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য নিজেই অনেকটা ভালো রাখা যায়।’

ছবি: আনিকা রাব্বানির সৌজন্যে

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১৬: ২৪
বিজ্ঞাপন