শেখ সাইফুর রহমান: আমাদের দেশে হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিজম বলে কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কীভাবে অবহিত করা যায়?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: এভিয়েশন ও ট্যুরিজম নিয়ে যাঁরা কাজ করেন কিংবা লাইফস্টাইল সাংবাদিক যাঁরা আছেন, তাঁদের এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আরও বেশি করে জানানো প্রয়োজন। তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁদের অবগত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব সৃষ্টির প্রয়াস নিতে হবে। ভবিষ্যতে আমি নিজেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি।
শেখ সাইফুর রহমান: করোনা অনেক বড় একটা সংকট ছিল। সেটা অবশ্যই বৈশ্বিক। ফলে সমস্যার সম্মুখীন কমবেশি সবাই হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কীভাবে করেছেন বা করছেন?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: সংকট তৈরি হলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম যে ধাক্কাটা আসে, তা হলো অতিথি কমে যাওয়া। পাশাপাশি রেস্তোরাঁয়ও কাস্টমার আসে না। ফলে বড় ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি যেটা হয়েছে, সেটা একান্তই আমাদের। এমনিতে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার অভাব নেই। ফলে বর্তমান সংকট উত্তরণে কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাহলে বিদেশি অতিথিরা পুনরায় আসা শুরু করবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য প্রচারণা হতে পারে কার্যকর উদ্যোগ।
শেখ সাইফুর রহমান: এখন সারা বিশ্বেই টেকসই আতিথেয়তা বা সাসটেইনেবল হসপিটালিটি নিয়ে অনেক কথা ও কাজ হচ্ছে। এই অনুশীলন আপনাদের এখানে আছে কি না?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: অবশ্যই আছে। এই অনুশীলনের মধ্যেই আমরা আছি। শেরাটনে এসি ব্যবহার না করে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক বাতাস ব্যবহার করে ঘরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ ব্যবহারেও আমরা সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করে থাকি। রান্নায় কস্ট অপটিমাইজেশান করা হয়। এ জন্য কর্মীদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়ে থাকে।
শেখ সাইফুর রহমান: ভোক্তাকে আকৃষ্ট করতে আপনাদের তৎপরতা কতখানি থাকে?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: আমরা নানা অফার দিয়ে থাকি। বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে নানা সুবিধা দেওয়া হয়। তবে আমি মনে করি, এটাই যথেষ্ট নয়। সার্বিকভাবে এই ব্যবসাকে আরও ফলপ্রসূ, আরও লাভজনক করতে হলে পর্যটনবান্ধব মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগকারী, শিক্ষাবিদ ও অনুশীলনকারী বা পেশাদারদের সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন হবে।
শেখ সাইফুর রহমান: এ ক্ষেত্রে আপনারা কোন উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: আমরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কথা বলছি, বেশ কিছু সেমিনার হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মনিটরের উদ্যোগে একটা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে আমি বেস্ট হোটেলিয়ারের সম্মাননা পেয়েছি। কিছুদিন আগে একটা রাউন্ড টেবিল বৈঠক হলো, যেখানে পাটার চেয়ারম্যান পিটার স্যামুয়াল এসেছিলেন। এখানে হোটেল ব্যবসার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পাশাপাশি আমি মনে করি, গণমাধ্যমেরও ব্যাপক ভূমিকা আছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যম কয়েকটি শিল্পকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়কেও অস্বীকার করা যাবে না। আমরা এখনো গণমাধ্যমবান্ধব হয়ে উঠতে পেরেছি বলে মনে হয় না। মোদ্দাকথা হলো, বাংলাদেশ এখনো কেবল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত নিয়েই ব্যস্ত। বিকল্প কোনো শিল্প খাত গড়ে ওঠেনি। এখনই সময় আরেকটি বা একাধিক শিল্প খাততে দাঁড় করিয়ে তৈরি পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হচ্ছে হসপিটালিটি ও ট্যুরিজম। এ খাতের বর্তমানে জিডিপিতে অবদান মাত্র ৪ শতাংশ। সবাই মিলে কাজ করলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুই সংখ্যায় উন্নীত করা সম্ভব।
বাংলাদেশে একটা হোটেল করার জন্য অনুমতি নিতে হয় ২২টা মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছ থেকে। এটা কেবল সময়সাপেক্ষই নয়, ঝক্কিরও। এই প্রক্রিয়া জটিলও। ফলে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ একটা নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিলে কিন্তু প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। তাহলে সেই মন্ত্রণালয় বা এর অধীন কোনো সংস্থা সব কাজ করে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওয়ান–স্টপ সার্ভিসও নিশ্চিত হয়।
শেখ সাইফুর রহমান: সার্কভূক্ত অন্যান্য দেশ এই খাতে অনেক এগিয়ে থাকার কারণ কি বলে মনে হয়?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপ কিংবা শ্রীলঙ্কা সে দেশের হসপিটালিটি ও ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি জিডিপিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। কারণ তাদের নীতিমালা অনেক সহজ আর ইন্ডাস্ট্রিবান্ধব। আমাদের দেশে বড় অন্তরায় নীতিমালা ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। লাল ফিতার ফাঁস আলগা করতে এত সময় লেগে যায় যে বিনিয়োগকারীরা, তা সে দেশীয় হোক বা বিদেশি, আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
অন্যদিকে আমদের অ্যাকসেস টু দ্য ডেস্টিনেশনের অবকাঠামো ভালো নয়। কেউ ঢাকা এয়ারপোর্টে নামার পর সেখান থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজারে যেতে চাইলে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। আবার আমাদের দেশের মানুষ বিদেশি দেখলে অনভিপ্রেত আচরণ করে থাকে। এটা কোনোমতেই পর্যটনবান্ধব নয়। এখানেও আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। সচেতন করতে হবে মানুষকে।
শেখ সাইফুর রহমান: আচ্ছা, আমদানি করা পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় সেটাও তো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: তা তো ফেলেই। এই যেমন ধরেন, স্পার্কলিং ওয়াটারের যা দাম, তার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি কর আর শুল্ক দিতে হয়। এর সঙ্গে আরও আছে ভ্যাট। আবার ধরেন, এক ক্যান বিয়ারের জন্য ৪৪২ শতাংশ, ওয়াইনের জন্য ৫৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ, হুইস্কির জন্য ৬১১ দশমিক ২০ শতাংশ কর আর শুল্ক দিতে হয়। সঙ্গে আছে ভ্যাট। ফলে এর ওপর পরিচালন ব্যয় ধরে ভোক্তাকে দিলে তার আগ্রহ থাকবে না। কারণ, এক ডলারের বিয়ারের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১৪-১৫ ডলার। উপরন্তু বিক্রয়ের সময় আবারও ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। অন্যদেশে তারা এসব এত কম দামে পায় যে বলার মতো নয়। বস্তুত আমাদের এখানে থাকা খুবই ব্যয়বহুল এবং একেবারেই পর্যটনবান্ধব নয়। সে কারণে বিদেশিরা আসতে আগ্রহী হয় না। আবার অনেক পণ্যই আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি, সেসব উপকরণ, বিশেষত কৃষিপণ্য দেশে পাওয়া গেলেও পাঁচ তারকা মানের নয়। অথচ আমরা ইচ্ছা করলে এসব দেশেই উৎপাদন করতে পারি। তাহলে আমাদের সুবিধা হয়। আমরা যেমন উপকৃত হই, তেমনি উৎপাদকেরাও।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনি বলছিলেন, আমাদের নীতি বা আইন ব্যবসাবান্ধব নয়। এ বিষয়ে আলোকপাত আগেই করেছেন। এর সঙ্গে কি কিছু যোগ করতে চান, যেগুলো আপনার মনে হয় পরিবর্তন জরুরি?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: হ্যাঁ, অবশ্যই। বাংলাদেশে একটা হোটেল করার জন্য অনুমতি নিতে হয় ২২টা মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছ থেকে। এটা কেবল সময়সাপেক্ষই নয়, ঝক্কিরও। এই প্রক্রিয়া জটিলও। ফলে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ একটা নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিলে কিন্তু প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। তাহলে সেই মন্ত্রণালয় বা এর অধীন কোনো সংস্থা সব কাজ করে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওয়ান–স্টপ সার্ভিসও নিশ্চিত হয়। প্রক্রিয়া সহজতর না হলে বাস্তবিকই বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ না এলে এই ইন্ডাস্ট্রির উন্নতিও হবে না। এ তো গেল অনুমতির বিষয়। উপরন্তু আমাদের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোর মান দেখার জন্য নিজস্ব একটা মনিটরিং সেল থাকা দরকার। তাহলে সবাই সতর্ক ও সচেতন থাকবে।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা প্রোপার্টি নিয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছেন কি না?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে হানসা নামের একটা হোটেল আছে। এটা কেবল আমাদেরই নয়, একান্তভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। এই হোটেলকে আমরা আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরতে চাইছি। ইউনিক গ্রুপের অ্যাফিলিয়েশন থাকবে এর সঙ্গে।
শেখ সাইফুর রহমান: বাংলাদেশের অন্যান্য পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গে আপনাদের প্রতিযোগিতা কোনখানে?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশে আরও পাঁচ তারকা মানের হোটেল আছে। এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা এগিয়ে আছি বেশ কয়েকটি জায়গায়; এই যেমন কাস্টমার সার্ভিস, রাইট হাইজেনিক ইনক্লুসিভ প্রোডাক্ট, কাস্টমার সেফটি ও সিকিউরিটি ইত্যাদি। আর খাবার তো আছেই।
আমরা চেষ্টা করি সব ধরনের গ্রাহক যাতে এসে ফাইভ স্টারের খাবারের স্বাদ নিতে পারে। যাঁরা বাইরের অতিথি, তাঁদের কাছে নিজের দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে লবি থেকে রুমে আমরা দেশীয় আর্টওয়ার্ক ব্যবহার করেছি। খাবারের বেলায়ও তা–ই। বুফেতে গো লোকাল বলে একটা কার্ট থাকে। আমরা আমাদের গো লোকাল সেকশনে ভাপা ইলিশ, গরুর মাংসের চাপ, মাছের কোপ্তা ইত্যাদি রেখেছি, যা ব্যস্ত জীবনে বাসায় করা বেশ ঝক্কির, কাস্টমারদের কাছ থেকে ভালো রিভিউও এসেছে। হোটেল তাজে পুরো বাংলাদেশি কর্নার করছি, যেখানে কেবল বাংলাদেশি খাবারই পাওয়া যাবে।
শেখ সাইফুর রহমান: বাংলাদেশের রসনা ানেক বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু। অথচ এর কোন প্রচার নেই। সারা বিশ্বই এই অঞ্চলের খাবার বলতে জানে ভারতীয় খাবার। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি ?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশের আতিথেয়তা আর অনবদ্য রসনাকে সারা বিশ্বে পরিচিত করাতে হলে ফুড ডিপ্লোমেসি বা রসনা কূটনীতির বিকল্প নেই। আমরা এ নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশের বাইরে গেলে বাংলাদেশি খাবার বললে ইন্ডিয়ান খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে বাংলাদেশি খাবারের উৎসব করা প্রয়োজন, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যাতে বাংলাদেশি খাবার পৌঁছে যায়। সে জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
শেখ সাইফুর রহমান: নতুন যে হোটেলগুলো আপনারা করছেন, সেগুলো কি টেকসই হচ্ছে? এ জন্য কী করছেন?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: নিশ্চয়ই। আমাদের নতুন হোটেলগুলোর প্রতিটির নির্মাণ হচ্ছে টেকসই। এগুলো গ্রিন বিল্ডিং। পর্যাপ্ত দিনের আলো পাওয়া যাবে। ফলে ডে লাইট সেভিং হবে। সাসটেইনেবল করতে আয়রন রড কম ব্যবহার করে পাত ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ যাতে সহজ হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা কম সম্ভব করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট একেবারে শূন্যে নিয়ে আসা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পানির অপচয় রোধে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শেখ সাইফুর রহমান: এ তো গেল অবকাঠামো আর ব্যবস্থাপনার বিষয়। পরিচালন ক্ষেত্রে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: আমরা চেষ্টা করছি যেটা প্রয়োজন সেটাই কিনতে, যাকে বলে রাইট পারচেজিং। এর সঙ্গে সঠিক ইনভেন্টরি রাখা এবং সঠিকভাবে এসব কাঁচামাল ব্যবহারের পাশাপাশি একজন যতটুকু গ্রহণ করতে পারে, সেই পরিমাপ অনুযায়ী যেকোনো কিছু তৈরির চেষ্টা করছি। অর্থাৎ পোর্শান কন্ট্রোল করা হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মতভাবে। এতে অপচয় কমানো যাবে। কারণ, আমরা আমাদের পরিচালনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতার অনুশীলন করছি। এর মধ্য দিয়েই আমরা সাসটেইনেবল হতে চাই।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনার প্রতিষ্ঠানে সিএসআর অনুশীলন সম্পর্কে জানতে চাই?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: আমাদের রান টু গিভ প্রোগ্রাম আছে। সেলিনা নুর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রোজার সময় গরিব ও এতিম বাচ্চাদের খাবার দেওয়া হয়, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা হয়। প্রতি মাসে খাবার দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের। বন্যাদুর্গতদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। দেশের প্রয়োজনে আমাদের সাধ্যমতো আমরা সহযোগিতা করতে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।
আমরা বিশ্বাস করি ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’ মূল্যবোধে। তাই বাইরে আমরা যা কিছু করি না কেন, আগে ঘর ঠিক রাখার চেষ্টা করি। এর অর্থ হলো আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের প্রতি যত্নশীল থাকি সবার আগে। তাঁদের আর্থিকভাবে সচ্ছল রাখতে, তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য হোটেলের স্টাফ বা তাঁদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনারা তো ট্যালেন্ট হান্টও করে থাকেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: ঠিকই বলেছেন। আমারা ট্যালেন্ট হান্ট করি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউশন থেকে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ইন্টার্ন হিসেবে। এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর পারফরম্যান্স যাঁরা করেন, তাঁদের আমরা স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিই। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের পদোন্নতিও হয়। তাঁদের মানোন্নয়নে নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট বেশ শক্তিশালী। এ ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের অনুশীলনও আছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
আমরা কেবল অতিথি বা ভোক্তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করি না, আমাদের সহকর্মীদেরও যথাযথভাবে সন্তুষ্টি বিধানে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকে। ফলে সবাই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে থাকেন। অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবেন না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলি, ওয়েস্টিন আর শেরাটনে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরা শহরের যেকোনো পাঁচ তারকা মানের হোটেল চালাতে পারবেন, তাঁদের সেই যোগ্যতা আছে।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনি নানা সম্মাননা পেয়েছেন। এসব আপনাকে কতটা আনন্দিত কিংবা প্রাণিত করে?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: আমি যে পুরস্কার পেয়েছি, তা আমাকে অবশ্যই অনুপ্রাণিত করে। আমি যেমন উৎসাহিত হই, আমাকে দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হয়। এই ধরনের স্বীকৃতি অবশ্যই ভালো লাগার। তবে আমি কখনোই দাবি করি না এই প্রাপ্তির কৃতিত্ব আমার একার। কারণ, সবই আসলে দলগত। সবাই মিলে কাজ না করলে আমি সাফল্য পেতাম না। তাই আমার প্রতিটি স্বীকৃতির পেছনে আমি মনে করি, আমার সব সহকর্মীর অবদান আছে। আমি এ জন্য সবার অবদানকে সম্মান জানাই।
শেখ সাইফুর রহমান: হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিই এখন বলতে দ্বিধা নেই আপনার ধ্যান ও জ্ঞান। কোনো স্বপ্ন নিশ্চয়ই আছে?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে। সেটা যে যার অবস্থানে থেকে, তার মতো করে। আমিও ব্যতিক্রম নই। আমার স্বপ্ন আসলে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরাই বাংলাদেশের এবং অবশ্যই অন্যান্য দেশের পাঁচ তারকা, সাত তারকা হোটেল পরিচালনা করবে, গ্লোবাল হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখবে। তাদের হাত ধরেই আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে। তাদের দক্ষতায় হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের জিডিপিতে আরও বেশি অবদান রাখবে। তাদের কারণেই ভবিষ্যতের যেকোনো সংকট মোকাবিলা আরও সহজ হবে। আমরা দমে যাব না। বরং উত্তরোত্তর উৎসাহে এগিয়ে যাব।
শেখ সাইফুর রহমান: বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার কোনো বার্তা?
মো. শাখাওয়াত হোসেন: এ প্রসঙ্গে একটু বলি, কম বিনিয়োগে বেশি লাভ এই ইন্ডাস্ট্রি থেকেই সম্ভব। আমি চাই সরকার আরও বেশি করে সহযোগিতা করুক। কারণ, এই ইন্ডাস্ট্রিতে সম্ভাবনা বিপুল। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরকার সঠিক মানুষদের নিয়োগ দিয়ে নতুন, সহজ ও বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা করুক। তাহলেই এই ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে যাবে।
পরিশেষে আমাদের চেয়ারম্যান মিসেস সেলিনা আলী ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুর আলী সাহেবকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ, তাঁরাই বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগকারী হিসেবে প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল করেন। এ কারণে আমার পক্ষে আজ এ অবস্থানে আসা এবং অনেক কিছু শেখা সম্ভব হয়েছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
শেখ সাইফুর রহমান: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মো. শাখাওয়াত হোসেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
ছবি: তানভীর আহমেদ ও শেরাটন