যাঁরা নতুন জিমে জয়েন করতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য রুসলানের পরামর্শ, যেকোনো বয়সের যে কেউ জিম শুরু করতে পারেন; তবে তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে তাঁর কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে কি না, বিশেষ করে বংশগত রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো জটিল রোগ। এ জন্য যথাযথ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
তিনি বলেন, এমন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, যিনি ব্যায়াম শুরু করতে চান, তাঁকে যেন তিনি সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
কারণ, কারও জয়েন্ট পেইন থাকতে পারে। কারও–বা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস। ফলে তাঁকে তেমন কারও কাছে গিয়ে জেনে নিতে হবে তাঁর করণীয়। বিশেষত ব্যায়াম করার জন্য তিনি উপযুক্ত কি না।
তবে আগেই বলেছি, যেকোনো বয়সের মানুষ জিমে যোগ দিতে পারেন এবং অবশ্যই একজন ভালো ট্রেইনারের অধীনে থাকাটা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ, যোগ করলেন রুসলান।
জিম ছেড়ে দিলে আবার মানুষ আগের অবস্থায় ফিরে যায়, অনেকে মোটা হয়ে যায় বলে ভ্রান্ত ধারণা আছে। এ প্রসঙ্গে রুসলানের অভিমত হলো, জিম ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে মোটা হয়ে যাওয়া বা ওজন বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের যোগ আছে। সবাই এই রুটিন মেনে চলেন। অর্থাৎ ব্যায়ামের সঙ্গে ডায়েট চার্টও অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু ব্যায়াম ছেড়ে দিয়ে আগের রুটিনে ফিরে গেলে অবস্থা যা হওয়ার তা–ই হবে। এ ছাড়া কেবল ব্যায়াম করে কখনোই ওজন কমানো যায় না, যদি না খাবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এটা সম্ভব কেবল পেশাদার খেলোয়াড়দের পক্ষে, যাঁরা সারা দিনই হাইইন্টেন্সিটি ব্যায়ামের মধ্যে থাকেন এবং দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার ক্যালরি বার্ন করেন। অন্যদিকে সাধারণ যাঁরা জিম করেন তাঁদের ৯০ ভাগই পেশাদার খেলোয়াড় নন। এ জন্য তাঁদের ডায়েট ও ব্যায়াম দুটোর নিয়ন্ত্রণ রুটিনমাফিক করতে হবে।
আবার সময়ের কারণে অনেকেই ব্যায়াম করে উঠতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁকে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওজন বৃদ্ধি আসলেই হয়ে থাকে নিজেদের দোষে। এর একমাত্র কারণ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, স্পষ্ট জানালেন রুসলান।
নিয়মিত শরীরচর্চায় যে কারোরই গঠন সুন্দর হবে। পেশি সুগঠিত হবে। দেখতেও ভালো লাগবে। কিন্তু জিম করা ছেড়ে দিলে মোটা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি একেবারেই ভুল ধারণা।
এ প্রসঙ্গে রুসলান আরও বললেন, অনেকেই আছেন যাঁরা ফিটনেসবিষয়ক কনটেন্ট রাইটার বা ইনফ্লুয়েন্সারদের সুন্দর কথায় প্রভাবিত হন। আর সেগুলোকেই সঠিক বলে ধরে নেন। কিন্তু এমন হলে হবে না। যথাযথ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনেই কাজ করতে হবে। না হলে সারা জীবন ভুলের ফাঁদেই ঘুরপাক খেতে হবে।
ব্যায়ামের সঙ্গে ডায়েটের সম্পর্ক ওতপ্রোত। একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে একই রকমের ডায়েট হবে না। এমনিতেই ছেলেদের ওজন মেয়েদের চেয়ে বেশি হয় প্রকৃতিগতভাবেই। ছেলেদের পেশির পুরুত্ব বেশি থাকে। ধরা যাক, একটি মেয়ের শরীরের ওজন ৫০ কেজি। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ওজনে কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন, সেই অনুযায়ীই হবে ডায়েট প্ল্যান। প্রত্যেকের শরীরের ধরন ও পরিপাক আলাদা। সেভাবেই ব্যক্তিভেদে ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে। একটা ছেলের ক্ষেত্রেও কিন্তু এভাবেই হিসাব করে চার্ট দেওয়া হয়। সেখানে শর্করা ভাত, মিষ্টি আলু—এসব থাকে, তবে পরিমাণে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের একটু বেশিই লাগে। এ ছাড়া কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে মেয়েদের পিসিওএস বা থাইরয়েড; তাঁদের ক্ষেত্রে ডায়েট প্ল্যান একটু আলাদা হয়। কারণ, অনেক খাবার তাঁরা খেতে পারবেন না। আবার ছেলেদের ক্ষেত্রেও যাঁদের স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও ডায়েট চার্ট একটু আলাদা হয়ে থাকে, বেশ চমৎকার করে বুঝিয়ে বললেন তিনি।
আরও যোগ করলেন, একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে এক পাউন্ড ওজন কমাতে চাইলে তাঁকে ৩৫০০ ক্যালরি বার্ন করতে হবে। ধরা যাক, একজন প্রতিদিন যা খাচ্ছেন, তার ক্যালরি দাঁড়াচ্ছে ১৮০০; এখন তিনি প্রতিদিন ২০০ ক্যালরি হয়, সেই হিসাবে খাবেন। পাশাপাশি ৩০০ ক্যালরি যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করে কমাবেন। তাহলেই তিনি সপ্তাহে এক পাউন্ড কমাতে পারবেন।
তবে যাঁরা নিয়মিত জিমে গিয়ে কঠিন শরীরচর্চা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৫০০-৭০০ ক্যালরি বেশি খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ফ্যাট বা চর্বি কমিয়ে পেশি গঠন করা। এ জন্য প্রোটিন কখনোই কমানো যাবে না; কারণ, পেশি গঠনে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রোটিন মানে কিন্তু তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস নয়; বরং এটা চর্বি ছাড়া অল্প তেলে রান্না করা গরুর মাংস। কিংবা তেল স্প্রে করে স্টেক বা কাবাবের মতো করে রান্না করা আমিষ হতে হবে। অনেকে মনে করেন অলিভ অয়েল অনেক স্বাস্থ্যকর কিন্তু এটা রান্নার জন্য নয়, রান্নায় ব্যবহার করলে অন্য তেলের মতোই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে; না পুড়িয়ে কাবাবের মতো রান্না করে তেল ছাড়া বা অল্প তেল দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায় রান্না করতে হবে, স্পষ্ট করে দিলেন রুসলান।
ভুল ব্যায়াম বলে আসলে কিছু নেই। এটা হতে পারে ভুলভাবে, সঠিক ভারসাম্য না রেখে ব্যায়াম করা। একেকজনের শরীরের গঠন একেক রকম। কারও শরীরে ওপরের অংশ আগে সাড়া দেয়, কারও আবার সেটা মেলে নিচের অংশে। এ জন্য যিনি ব্যায়াম করছেন, তাঁকে যেমন বিষয়টা বুঝতে হবে, তেমনি যিনি ট্রেইনার, তাঁকেও সেটা জানতে হবে। আর সেই অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে। যাঁদের শরীরে নিচের অংশ আগে সাড়া দেয়, তাঁদের ব্যায়াম বেশি করতে হবে ওপরের অংশের। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এর উল্টোটাই হতে হবে, পরামর্শ দিলেন রুসলান।
অনেক মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় রোজ এসেই পায়ের ব্যায়াম করছেন। ট্রেড মিলে অনুশীলন করছেন। এটা ভুল। কারণ, আপনার শরীরের বিশ্রামের দরকার পেশিকে শক্তিশালী করার জন্য, চর্বি কমানোর জন্য। নিয়ম না মানলে আসলে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আমরা সঠিকভাবে ব্যায়াম না করে সেটাই করে থাকি। আর পেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন বেশি খেতে বলা হয়। পেশির ক্ষত সারিয়ে তাকে রিগেইন করার জন্য বিশ্রাম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অন্যদিকে আবার অনেকে প্রতিদিন হয় ওপরের অংশ বা নিচের অংশে ব্যায়াম করেন। অথচ এটাও ভুলেই জানালেন তিনি।
আমি নিজেও এখনো নিজের ফর্ম ঠিক করি, আমার জিমের ট্রেইনারদের দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে বলি আমার পশচার আর ফর্ম ঠিক আছে কিনা। আপনিও আপনার সঙ্গে একজনকে রাখতে পারেন, যিনি বোঝেন আপনার ব্যায়াম ঠিক হচ্ছে কি না। কারণ, সঠিক নিয়ম না মেনে ব্যায়াম করলে শরীরে আকারে বিপত্তি দেখা দেয়। এ জন্য ট্রেইনারের গাইডেন্স একান্ত জরুরি বলেই অভিমত রুসলানের।
যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করার আগে ও পরে সঠিক স্ট্রেচিং ও কুল ডাউন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি স্ট্রেচিং না করে ওয়ার্মআপ আগে করা দরকার; কারণ, বডি ওয়ার্ম না হলে স্ট্রেচিং ক্ষেত্রেও খুব একটা কাজ করে না। আর কুল ডাউনের ক্ষেত্রে ভারী ওয়ার্কআউটের পর পেশি ওয়ার্ম হয়ে থাকে; তাই কুল ডাউন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মনে করেন এই ফিটনেস কোচ।
সর্বোপরি ভবিষ্যতের পৃথিবীতে অজানা রোগ থেকে বা যেকোনো মহামারি থেকে নিজেদের রক্ষায় সঠিক নিয়মে শরীরচর্চা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই বলেই অভিমত রুসলান হোসেনের।