কাকডাকা ভোরে জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলীর বাড়িতে গেলেই হয়তো তাঁকে পাওয়া যাবে উষ্ট্রাসন বা মকরাসনে। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতিদিন সকালেই তিনি যোগব্যায়ামের জন্য নিয়ম করে সময় দেন। আবার, শুটিংয়ের শিডিউল অনুযায়ী সকাল বা বিকেল যখনই হোক, তাঁর একান্ত চেষ্টা থাকে যেন এক দিনও তা বাদ না যায়। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ইয়োগার জন্য সময় দেন নিয়মকানুন মেনে।
যোগব্যায়ামের শুরুটা কীভাবে, জানতে চাইলে বুবলী ছেলেবেলায় ফিরে যান। তিনি জানান, স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর শরীরচর্চা করতে খুব ভালো লাগত। ছোটবেলা থেকেই ব্যায়ামের প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। স্কুলের দৈনিক শারীরিক কসরতে সবাইকে নেতৃত্ব দিতেন তিনি। তখন থেকেই শরীরচর্চার প্রতি আলাদা করে ভালো লাগা কাজ করতে শুরু হলো। আস্তে আস্তে আগ্রহটাও বাড়তে লাগল। বুবলী বলেন, জিম করার চেয়ে ইয়োগা বেশি ভালো লাগে তাঁর। কারণ, ইয়োগায় কোনো যন্ত্র লাগে না। যখন ও যেখানে খুশি ব্যায়াম করা যায় নিজের সুবিধামতো।
ইয়োগার প্রতি অদম্য আগ্রহ থেকেই ধীরে ধীরে ইয়োগা সম্পর্কে জানতে শুরু করেন বুবলী। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ইয়োগা করছেন। এখন যেমন খুব সহজেই ইন্টারনেটের ফ্রি ভিডিওসাইটে ইয়োগার ভিডিওগুলো পাওয়া যায়, আগে ব্যাপারটি সে রকম ছিল না। তখন কেবল টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে ব্যায়ামসংক্রান্ত তথ্যচিত্র দেখানো হতো। বিটিভিতেও সকালে এই বিষয়ের অনুষ্ঠান হতো। মূলত টিভি থেকেই বুবলীর ইয়োগা শেখা শুরু। তবে ইয়োগা নিয়ে জানতে শুরু করার পর তাঁর মনে হলো, বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে পড়াশোনা করে তারপর প্রয়োগ করতে হবে নিজের জীবনে।
কারণ, ইয়োগার আসন ভুলভাবে করলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। তখন তিনি জিমে যাওয়া শুরু করেন। এরপর ব্যায়ামচর্চাকেন্দ্রে গিয়ে সেখানে যিনি ইয়োগা প্রশিক্ষক ছিলেন, তাঁর কাছ থেকেই বুবলী ইয়োগার আসনগুলো হাতে-কলমে শিখতে শুরু করেন। আর সঙ্গে সহায়ক হিসেবে ভিডিওসাইটের ইয়োগা ভিডিওগুলো তো ছিলই। তিনি এখন মোট ৪২টি আসন করতে পারেন। আসনগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত। তাই সব আসন একের পর এক করতে তাঁর ভালো লাগে। এর মধ্যে বেশি করা হয় পদ্মাসন, লোলাসন, বজ্রাসন, বক্রাসন, নৌকাসন, ধনুরাসন, উষ্ট্রাসন, মকরাসন, নটরাজাসন, পর্বতাসন ইত্যাদি।
ইয়োগার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। অনেকেই শরীরের ওজন কমানোর জন্য ইয়োগা করার কথা ভাবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, জিমে গিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে আমরা যেমন দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলতে পারি, ইয়োগায় তা এত অল্প সময়ে সম্ভব নয়। তবে ইয়োগার মূল উদেশ্য ওজন কমানো নয়, বরং এর আছে আরও নানাবিধ শারীরিক উপকারিতা। নিয়মিত ইয়োগা করলে শরীরের পাশাপাশি মনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ বা ভয়ানক ব্যস্ততায়ও যদি ইয়োগার নিয়ম মেনে শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ আরাম পাওয়া যাবে। যাঁরা ইয়োগা করেন, তাঁদের শ্বাসের সমস্যাও কম হয়। কারণ, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনেক যোগব্যায়াম আছে। বুবলীর মতে, যোগব্যায়াম হচ্ছে একটি সুন্দর জীবনযাপনের চাবিকাঠি।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম