‘জীবন কখনো কখনো নিজের মতো করেই স্ক্রিপ্ট লেখে। আমাদের বিয়ের ১৩ বছর পূর্তিতে তিশা পরিকল্পনা করল—আমরা বিয়েতে যে পোশাক পরছিলাম, সেটা পরেই ১৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা ফটোশুট করব। সেই একই মানুষ, একই পোশাক, শুধু সময়টা এগিয়ে গেছে, আর আমাদের জীবনে এসেছে ইলহাম।’—ঠিক এই ভাবে শুরু হলো ফেসবুকের পোস্টটি। পাঠকদেরও বুঝতে বাকি নেই, কে লিখেছেন এই স্ট্যাটাস। বাংলাদেশের জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর লেখা এই পোস্ট এখন নেটপাড়ায় ভাইরাল। কিন্তু কেন? এই খোঁজ পেতে গেলে তাঁর ফেসবুকে একবার ঢুঁ মারলেই হবে।
ফারুকী আর অভিনেত্রী তিশার ১৩তম বিবাহবার্ষিকী আজ। আর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁরা একটি প্রি-ওয়েডিং ফটোশুট আয়োজন করেন। মজার বিষয় হলো, ১৩ বছর আগের সেই বিয়ের পোশাক পরেই তাঁরা আবার ফ্রেমবন্দী হন আলোকচিত্রী কৌশিক ইকবালের ক্যামেরায়।
বিয়েতে তিশা পরেছিলেন অফহোয়াইট জামদানি শাড়ি। সে সময় লাল বেনারসির বিপরীতে গিয়ে অভিনেত্রী বেছে নিয়েছিলেন দেশীয় জামদানিকে। শাড়ির জমিনজুড়ে স্টোনের কাজ আর পাড়ে বসানো সোনালি লেস। ব্লাউজের জমিনেও রয়েছে সোনালি সিকুইন আর সুতার নিখুঁত ফ্লোরাল মোটিফ।
শাড়ির সঙ্গে অসাধারণ ডিজাইনের সোনার গয়নায়, ১৩ বছর আগের তিশা যেন ফিরে এসেছে নববধূ রূপে। মাথায় টায়রা, ভারী নেকপিস, ঝোলানো কানের দুল আর হাত ভর্তি চুড়িতে অভিনেত্রী যেন হয়ে উঠেছে অনন্য। সাজেও নেই কোনো বাড়াবাড়ি। ন্যুড মেকআপের সঙ্গে চোখে কালো আইলাইনার আর কপালে পরেছেন ছোট লাল টিপ। ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল তিশার হাতের লাল মেহেদি পূর্ণতা দিয়েছে বিয়ের সাজের।
অন্যদিকে ফারুকী পরেছেন গাঢ় ফিরোজা পাঞ্জাবি। জনপ্রিয় এই নির্মাতাকে অবশ্য বেশির ভাগ সময়ই এই পোশাকে দেখা যায়। আর সঙ্গে তাঁর পছন্দের ও সিগনেচার অনুষঙ্গ টুপিও রয়েছে। বর বলে কথা, তাই সহধর্মিণীর সঙ্গে মিলিয়ে হাতে পরেছেন মেহেদি।
তবে এই বিবাহবার্ষিকীর আনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের একমাত্র কন্যা ইলহাম। ছবিগুলোও সেই কথাই বলছে। মা–বাবার মধ্যে ছোট্ট মেয়েও বেশ খুশি। সে মায়ের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে জামদানি ফ্রক পরেছে। ফারুকীর স্ট্যাটাসের বাকি অংশে তিনি এই ফটোশুটের নেপথ্যের গল্পটা অনুরাগীদের সঙ্গে শেয়ার করেন। তিনি জানান, ‘ঢাকার কাছেই হিজল তমাল নামের একটা পিকনিক স্পট আছে। ওখানেই গেলাম। গিয়েই খেয়াল হলো, এর মালিকের বাড়িতেই নিখোঁজ সংবাদ শুটিং হয়েছিল। আর সেই স্পটেই আমি তিশাকে বিয়ের প্রস্তাব দিছিলাম। আজকে তেরো বছর পর সেখানেই আসাটা মহাজাগতিক এক পরিকল্পনাই বটে।’
ফারুকী এ–ও লেখেন, ‘তেরো বছরে আমরা অনেক চড়াই-উতরাই পার হইছি। বাচ্চা নেওয়া নিয়ে অনেক কিছুর মুখোমুখি হইছি। কিন্তু নিঃসন্দেহে এই জার্নিটা ছিল অসাধারণ। তোমার কাছে কৃতজ্ঞতার তালিকাটা অনেক বড়। কত বড় বড় বিষয় থেকে শুরু করে তুচ্ছ বিষয়ে তোমার ওপর নির্ভর করি। তোমাকে ছাড়া বিদেশে গেলে এখনো রাতের বেলা বাতি নিভাইতে পারি না, ভয় পাই। ভাবি একা একা যাব কীভাবে এই দুনিয়া থেকে? অথচ কি আশ্চর্য আমরা একা একাই বড় হইছিলাম এই দুনিয়ায়!! আরও কত কিছু বলতে মন চায়। তার চেয়ে বরং বলি, লাভ ইউ তিশা। হ্যাপি অ্যানিভারসারি টু আস।’ হাল ফ্যাশনের পক্ষ থেকেও জনপ্রিয় এই তারকা দম্পতিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। একসঙ্গে পথচলা দীর্ঘজীবী হোক।
ছবি: ফেসবুক