জেনিফার লোপেজ, বিয়ন্সে, জুলিয়া রবার্টস ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলিদেরকে মাত দিয়ে পিপল ম্যাগাজিন ২০২৫-এর বিশ্বসেরা সুন্দরীর খেতাব জয় করে নিলেন ৬২ বছর বয়সী অভিনেত্রী ডেমি মুর। প্রমাণ করলেন, সৌন্দর্যে বয়স কেবল একটি সংখ্যা মাত্র।
হলিউডের আশির দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডেমি মুর। ষাট ছাড়িয়েছেন দুই বছর আগে। বয়সের হিসাবে তাঁকে বৃদ্ধা বলবেন অনেকেই। তবে এই ৬২ বছর বয়সে এসেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন পিপল ম্যাগাজিনের ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ডস মোস্ট বিউটিফুল সংখ্যার কভারে।
প্রতিবছর এই ম্যাগাজিনটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তালিকা করে থাকে। এ বছর ডেমিকে কভারে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। নতুন করে সিনেমায় সাফল্য পাচ্ছেন এই অভিনেত্রী। তবে সৌন্দর্য তালিকাতেও এভাবে সেরা হয়ে আলোচনার তুঙ্গে তিনি এখন। এর আগে ১৯৯১ সালে ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের কভারে তাঁর দাপুটে ফটোশ্যুট এরকম আলোচনার জন্ম দেয়।
আশির দশক থেকে হলিউডের রূপালি পর্দায় একের পর এক সফল চরিত্র উপহার দেওয়া ডেমি মুর তাঁর সৌন্দর্য ও অভিনয়শৈলীতে দর্শকদের মন জয় করেছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর নতুন ছবি 'দ্য সাবস্ট্যান্স'। এখানে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েস অ্যাওয়ার্ড, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড বাগিয়ে নিয়েছেন তাঁর ঝুলিতে। একই সঙ্গে পেয়েছেন অস্কার মনোনয়নও। কিছুদিন আগে মাইকি ম্যাডিসনের অস্কার পাওয়া নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ বাণী মিলে যাওয়ায় পিপল ম্যাগাজিনে খবর হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। পুরস্কার ও এসব ঘটনা তাকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে আলোচনায়।পিপল ম্যাগাজিনের কভারে থাকাটা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয়, এমন নয়। এই স্বীকৃতির পেছনে থাকে একটি করে বার্তা।
ডেমি মুর তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি নিজেকে এখন যতটা আত্মবিশ্বাসী ও ধৈর্যশীল হিসেবে দাবি করতে পারেন, আগে এমন ছিলেন না। এক ধরণের অস্থিরতা সারাক্ষণ ঘিরে রাখত তাঁকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্থির হয়েছেন। এমনকি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য নিয়ে তার ধারণাও পাল্টেছে। তিনি বুঝেছেন নিখুঁত হওয়াটা সৌন্দর্য নয়, মানুষ কখনও নিখুঁত হতেও পারে না, বরং নিজেকে গ্রহণ করতে পারা এবং নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই আসল সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। ফুলের সৌন্দর্য যেমন কেবল তার অস্তিত্বতেই। তাকালেই দেখা যায়। মানুষের কাছেও সৌন্দর্য ঠিক তেমনই হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী।
এই সংখ্যায় মুর তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পরিবার, নিজের অনুভূতি এবং সমাজে নারীদের বয়স নিয়ে প্রচলিত স্টেরিওটাইপ ভাঙার ব্যাপারে করেছেন খোলাখুলি আলোচনা। ব্যক্তিগত জীবনে ডেমি তিনকন্যার জননী। প্রাক্তন ব্রুস উইলিসের সঙ্গে তাঁর স্কাউট, রুমার ও ট্যালুলা নামে তিন সন্তান আছে। তিনি একজন মা। এ ব্যাপারটিকে উদযাপন করেন তিনি। বয়সকে সৌন্দর্যের বাঁধা হিসেবে দেখেন না।
তাঁর মতে, আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, বয়স হয়ে গেলেই নারী আর সুন্দর থাকেন না। এ ধারণারই বিপক্ষে তিনি। সৌন্দর্যের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। প্রতি বয়সে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে। তাঁর বয়স যখন পাঁচ, চোখে অ্যামব্লিওপিয়া নামের রোগ হয়েছিল তাঁর। কৈশোরেও নিজের অদ্ভুত চুলের কাটের জন্য ভুগেছেন হীনমন্যতায়। এত বছর পেরিয়ে, এখন বুঝতে পারেন, সৌন্দর্যের এসব স্টেরিওটাইপ কতটা তুচ্ছ ছিল।
ডেমি মুরের এই অর্জন কেবল তার জন্য নয়, বরং হাজার হাজার নারীর জন্য অনুপ্রেরণা, অনেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজেদের মূল্যহীন মনে করেন। কভারে ডেমির উপস্থিতি তাঁদের অনুপ্রেরণা দেবে। পিপল ম্যাগাজিনের এই সংখ্যাটি শুধু ফটোশ্যুট নয়, সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটানোর বার্তাও বহন করে।
বয়স না, ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসেই আসল সৌন্দর্য।এই বার্তাটিই যেন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ডেমি মুর। আত্মবিশ্বাসই সৌন্দর্যের মূল রহস্য। চামড়ার ভাঁজ কোনোকিছুই নির্ধারণ করে না।
ডেমি মুরের এই আত্মবিশ্বাস, সৌন্দর্যবোধ এবং সামাজিক বার্তা আজকের যুগে আরও প্রাসঙ্গিক। যখন সমাজে চিরযৌবনা থাকার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ডেমি মুরের মতো একজন তারকা এই ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেন এই ধারণাটিকেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন।
সূত্র: নিউজ এইতিন, পিপল ম্যাগাজিন
ছবি: ইন্সটাগ্রাম