বিয়ন্সের রেনেসাঁ ট্যুর যেন এক বর্ণাঢ্য ফ্যাশন শো
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গত মে মাসের ২৩ তারিখ শুরু হয় বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা বিয়ন্সের বহুল প্রতীক্ষিত রেনেসাঁ ওয়ার্ল্ড ট্যুর। শেষ হবে এ বছরের অক্টোবরের ১ তারিখে। মাত্র তিন মাসেই বিয়ন্সের এই ট্যুর নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। সফরটি ইতিহাসে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীর সবচেয়ে বেশি আয় করা সংগীত সফরে পরিণত হয়েছে। এই ট্যুরের কনসার্টগুলোয় বিয়ন্সে তাঁর কণ্ঠ ও নাচের জাদু দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে ফ্যাশনপ্রেমী ও সমালোচকেরা আবার মুগ্ধ তাঁর সাজসজ্জায়। অনেকেই বলছেন, বিয়ন্সে তাঁর এই ট্যুরের মঞ্চকে ওত কতুর রানওয়েতে পরিণত করেছেন।
ওত কতুরের অর্থ ‘হাই সিউইং’ বা ‘হাই ফ্যাশন’। এগুলো সাধারণত অত্যন্ত দামি আর উচ্চ মানসম্পন্ন বিলাসবহুল পোশাক হয়ে থাকে। কখনো কখনো ব্যতিক্রমী ফেব্রিক দিয়ে, বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয় এসব পোশাক। এর আরেকটি মানে হচ্ছে, পোশাকটি নির্দিষ্ট ডিজাইনে তৈরি হয় শুধু একজনের জন্যই। এ ধরনের এক্সক্লুসিভ পোশাক তৈরিতে প্রচুর অর্থ, শ্রম, সময় ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। একেকটি এমন পোশাক বানাতে কারিগরেরা ৭০০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত কাজ করে থাকেন।

রেনেসাঁ ট্যুরের জন্য বিশ্বের নামীদামি ডিজাইনাররা চোখ ধাঁধানো সব পোশাক ডিজাইন করেছেন শুধু বিয়ন্সের জন্য। এর মধ্যে বডিস্যুটের পরিমাণ বেশি। কারণ, এই বডিস্যুটই হলো বিয়ন্সের স্টেজ পারফরম্যান্সের সিগনেচার আউটফিট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিনি করসেট ড্রেস ও ক্যাটস্যুট। এই ট্যুরের এত টাকা আয় করার পেছনে এসব ডিজাইনারেরও ভূমিকা রয়েছে। উইমেনস ওয়্যার ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেনেসাঁ ওয়ার্ল্ড ট্যুর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য ‘মিডিয়া ইমপ্যাক্ট ভ্যালু’তে ১৮৭ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে। অর্থাৎ, বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিয়ন্সেকে তাদের পোশাক পরার জন্য সম্মানি দিয়েছে। চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক রেনেসাঁ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বিয়ন্সের পরিহিত সেরা কিছু ডিজাইনার আউটফিট।

বিজ্ঞাপন

লুই ভিতোঁ

এই কিংবদন্তি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ডিজাইনার ফ্যারেল উইলিয়াম বিয়ন্সের খুব ভালো বন্ধু। বন্ধুর জন্য ফ্যারেল তাঁর প্রথম কাস্টম লুই ভিতোঁ পোশাকটি ডিজাইন করেন। এই চোখ ধাঁধানো ক্যাটস্যুট বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮ হাজার রুপালি ক্রিস্টালের বিডস বা পুঁতি, ৫ হাজার ক্রোম বল আর ৬০ হাজার কালো মুক্তা। এই এমবেলিশমেন্ট দিয়ে পোশাকে মৌচাকের প্যাটার্ন ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ছাড়া বন্ধু কুইন বির (ভক্তদের দেওয়া বিয়ন্সের ডাকনাম) সম্মানার্থে মৌচাকের ওপর ১০টি সোনালি মৌমাছি বসিয়ে দেন ফ্যারেল। এসব মৌমাছি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় রাইনস্টোন ও কালো এনামেল। এগুলো হাতে এমব্রয়ডারি করতে কারিগরদের ১৫ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয়।

ভিভিয়েন ওয়েস্টউড

‘লিটল ব্ল্যাক ড্রেস’ অনুপ্রাণিত ল্যাটেক্সের এই মিনি কোরসেট পোশাকটি ডিজাইন করেছেন ভিভিয়েন ওয়েস্টউডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আন্ড্রেয়া ক্রোন্থেলার। এই পোশাকের বিশেষত্ব এর স্ট্রাকচারাল স্পাইরাল স্লিভ।

অ্যালেক্সান্ডার ম্যাককুইন

এই অসাধারণ সুন্দর পোশাকের নাম ‘স্ল্যাশড ড্রেস’। পুরো পোশাকে এমবেলিশমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লাল রঙের লম্বাটে পুঁতি যা বিউগল বিডস নামে পরিচিত। এর সঙ্গে রয়েছে ম্যাচিং হাতমোজা ও লাল মেটালিক থাই হাই-বুট।

স্টেলা ম্যাককার্টনি

উচ্চমানের পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনেবল পোশাক-আশাক তৈরির জন্য ইংলিশ ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি বেশ সুপরিচিত। বিয়ন্সের রেনেসাঁ ট্যুরের জন্য তিনি চমৎকার একটি টেকসই পোশাক ডিজাইন করেছেন। এই মিনি ড্রেস ও লেগিংস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে সিসামুক্ত ক্রিস্টাল, পরিবেশবান্ধব ভিসকস ও কাঠের গুঁড়া।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাল্ড্রিন সাহিতি

বিয়ন্সের অন্যতম পছন্দের ডিজাইনার আলবেনিয়ার ভ্যাল্ড্রিন সাহিতি। বিশেষ ইভেন্টগুলোয় মাঝেমধ্যে এই মেধাবী ডিজাইনারের পোশাকে তাঁকে দেখা যায়। বিয়ন্সে তাঁর সংগীতের বিশ্বভ্রমণে একটা ভ্যাল্ড্রিন পোশাক পরে পারফর্ম করবেন, এটাই স্বাভাবিক। মিয়ামির শোতে বিয়ন্সে পরেছিলেন লম্বা ট্রেইন দেওয়া সাদাকালো বডিস্যুট। এর সঙ্গে জোড় বেঁধেছে রেট্রো স্টাইলের সানগ্লাস, শিয়ার টাইটস ও ম্যাক অ্যান্ড ম্যাকের সুন্দর মুক্তাখচিত হিল।

মেরি কাটরানজু

ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার মেরি কাটরানজু বিয়ন্সের জন্য তৈরি করেছেন তাঁর সিগনেচার পারফিউম বোতল আকৃতির ড্রেস। বেসপোক ড্রেসের পেপলাম স্কার্ট ও বডিস্যুটের পুরোটা ক্রিস্টাল ও সোনা দিয়ে এমব্রয়ডারি করা।

ডেভিড কোমা

লন্ডনভিত্তিক জর্জিয়ান ফ্যাশন ডিজাইনার ডেভিড কোমা বিয়ন্সের জন্য বানিয়েছেন সাইড ট্রেইন দেওয়া লাল বডি হাগিং ড্রেস। এর সঙ্গে আছে ম্যাচিং থাই-হাই বুট, স্টেটমেন্ট বেল্ট ও নেকলেস।

টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি

এই বিলাসবহুল গয়নার ব্র্যান্ডের মুখপাত্র বিয়ন্সে। তাই রেনেসাঁ ট্যুরে তাঁকে টিফানি অ্যান্ড কোম্পানির অনেক গয়নায় দেখা গেছে। তবে শুধু গয়না নয়, বিয়ন্সের জন্য কিছু কাস্টম ড্রেসও তারা বানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেশ চেইনমেইল ড্রেস আর কালো বিডস দেওয়া লিটল ব্ল্যাক ড্রেস।

আইরিস ভ্যান হারপেন

ডাচ ফ্যাশন ডিজাইনার আইরিস ভ্যান হারপেন বিয়ন্সের জন্য তৈরি করেছেন ভবিষ্যৎকামী ‘হেলিওস্ফিয়ার’ মিনি ড্রেস। এর সঙ্গে ছিল আকর্ষণীয় অরগাঞ্জা কেপ। এই পোশাকে ৯৮০টি কাস্তের মতো বক্রাকার এমবেলিশমেন্ট আছে, যা বানানো হয়েছে সিলভার-মার্বেল সিলিকন দিয়ে। এই পোশাক তৈরি করতে ১২ জন কারিগরের ৭০০ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।

ক্যারোলিনা হেরেরা

এই ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ওয়েস গর্ডন বিয়ন্সেকে টকটকে লাল ও কালো রঙের একই ডিজাইনের দুটি মিনিমাল মিনি ড্রেস বানিয়ে দেন। গভীর ও সাহসী নেকলাইনের পোশাকগুলো বেশ সাদামাটা হলেও এতে নাটকীয়তা যোগ করেছে সিল্ক টাফেটা কেপ। এসব পোশাকের সঙ্গে আরও আছে ম্যাচিং হাতমোজা ও শিয়ার ফেব্রিকের টাইটস।

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৩: ০০
বিজ্ঞাপন