রুনা খানের জামদানি প্রেমের কথা অজানা নয় কারো কাছেই। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী কখনোই কোনো সুযোগ ছাড়েন না দেশি ঐতিহ্যবাহী শাড়ির লুকে নিজেকে উপস্থাপন করতে। প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর ফটোশুটে রুনার জামদানির সাজ হৃদয় কেড়ে নেয় সকলের। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন সম্পূর্ণ জামদানি থিমে ডিটেইল্ড ও আধুনিক স্টাইলিংয়ের শ্বেতশুভ্র লুকে। সঠিক স্টাইলিং,আধুনিক উপস্থাপনা আর জুতসই অনুষঙ্গ ও মেকওভার যে একটি লুককে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সেটাই বোঝা গেল এদিন অপরূপা রুনা খানকে দেখে।
নজরকাড়া এই লুক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে বেশ। আর এ প্রসঙ্গে হাল ফ্যাশনের সঙ্গে বিস্তারিত পরিকল্পনা আর সাদা জামদানির এই অনবদ্য উপস্থাপনার পেছনের সব গল্প জানিয়েছেন রুনা খান স্বয়ং আর সামগ্রিক অর্থে স্টাইলিং যিনি করেছেন, সেই ডিজাইনার আনার কলি খান। রুনা খান এর আগেও আনার কলির ডিজাইন করা নজরকাড়া ব্লাউজের লুকে চমক দেখিয়েছেন। বলে রাখা ভালো, আনার কলি মূলত এক্সক্লুসিভ ব্লাউজের নকশাকার। 'ডাস্টকোট- দ্য ব্লাউজ' নামের ফ্যাশন উদ্যোগের এই কর্ণধার এবার স্টাইলিংয়ে নিজের মুনশিয়ানার পরিচয় দিলেন।
অভিনেত্রী রুনা খানের এক চমৎকার দিক হলো, যেকোনো লুকে যখনই তিনি নজর কাড়েন, একেবারে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ও আন্তরিকভাবে তিনি স্বীকৃতি দেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল নকশাকার, আলোকচিত্রী ও মেকওভার আর্টিস্টকে। এবারেও কথোপকথনের শুরুতেই বললেন, পাঁচজনের অক্লান্ত পরিশ্রম জড়িয়ে আছে জামদানির এই লুকটির সঙ্গে। আর সর্বোপরি তাঁকে এই সাজপোশাকে যে সকলে এত পছন্দ করেছেন, সেজন্য হৃদয় থেকে নিজের ভালোলাগা প্রকাশ করলেন রুনা। বললেন, প্রথম থেকেই তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এ অনুষ্ঠানের সাজে যথারীতি দেশি শাড়ির উদযাপনের বিষয়ে। তবে আনার কলি খানের পরিকল্পনায় যে পুরো লুকটি এতটা ব্যতিক্রমী আমেজ পেয়েছে, তা বলতে ভুললেন না তিনি।
সেই সঙ্গে চোখ জুড়ানো স্নিগ্ধ সাজ ও মানানসই হেয়ারস্টাইলের জন্য ধন্যবাদ জানালেন মেকওভার এক্সপার্ট ফারহানা চৈতীকে। এখানে তিনি পরেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন ফ্যাশন উদ্যোগ তাকওয়া থেকে নেওয়া নিখুঁত বুননের সাদা জামদানি। সঙ্গে আঁচলের ড্রেপের বিপরীত দিকে ফুলস্লিভড ব্লাউজটি ডিজাইনার আনার কলি খানের করা যথারীতি। গভীর সুইটহার্ট প্যাটার্নের নেকলাইনের এই ব্লাউজটি শাড়ির আবেদন বাড়িয়েছে বহুগুণে, বলাইবাহুল্য।
হাতায় সাদা-সোনালি থ্রিডি ফুল ও পাতার নকশার ডিটেইলিংয়ের কাজ একেবারে ফ্ললেস। সামনের দিকে জামদানির থিমেই কারুকাজ করা। স্লিভে হাতে কাজ করা ফো পার্ল দেওয়া সোনালি বর্ডার। ব্যাকলেস ব্লাউজের পেছনের বর্ডারেও ফো পার্লের হাতের কাজের ঝুল দেওয়া বর্ডার।
এই ব্লাউজ নিয়ে কাজ করতে করতেই স্টাইলিংয়ের বাকি দিকগুলো মাথায় আসে, জানালেন আনার কলি। আসে নানা অনুষঙ্গের আইডিয়া। এদিকে সময়ও খুব বেশি ছিল না। স্কেচ করে নিজের আইডিয়া শেয়ার করেন আনার কলি অভিনেত্রী রুনা খানের সঙ্গে। দুজনের পরিকল্পনায় তৈরি হতে থাকে এই নজরকাড়া লুকের বিভিন্ন অংশ।
একই থিমের বেল্ট আর বটুয়া এই সাজপোশাকটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে, বলতেই হয়। এই স্টাইলিশ জামদানি ডিজাইনের বেল্ট আনার কলি নিজেই তৈরি করেছেন। এর বর্ডারে ব্লাউজের স্লিভের মতো একই ডিজাইনের ফো পার্লের কাজ।
আর বটুয়া স্টাইলের ব্যাগটির জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় দেশি ব্যাগের সুপরিচিত উদ্যোগ ট্যানকে। এর কর্ণধার তানিয়া ওয়াহাব খুব দ্রুত ব্যাগটি বানিয়ে দিয়েছেন, যা ছাড়া জামদানির লুকটি সার্থক হতো না। এতে বাড়তি কিছু ডিটেইলিং যোগ করেছেন আনার কলি।
আর পুরো লুকের সঙ্গে মানানসই সোনালি ক্ল্যাসিক ঝুমকা জোড়া দেশি গয়নার ব্র্যান্ড মল্লিকা থেকে নেওয়া৷ আংটিটিও নজর কাড়ছে বেশ৷ গলা খালি রাখার সিদ্ধান্তটি কাজ করেছে ষোল আনা।
মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের দিন জামদানি থিমের এই লুকের সঙ্গে অত্যন্ত স্নিগ্ধ অথচ আকর্ষণীয় মেক ওভার করেছেন রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা হক চৈতী। মেকওভার ফিনেস বাই ফারহানা চৈতীর কর্ণধার নিজ হাতেই করেছেন পুরো সাজানোর কাজটি। মিনিমাল আমেজের এই সাজে প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখা হয়েছে।
চোখের সাজে নরম ভাব। ঠোঁটের রঙে ওভারপাওয়ারিং কোনো ব্যাপার নেই। ম্যানিকিওরেও মিনিমালিজমের ছাপ। ব্লাশ আর আই শ্যাডো প্যালেটে লাউড কোনো রঙের ব্যবহার করা হয়নি। তবে রয়েছে পরিমিত শিমারের ছাপ। সেমি ম্যাট বলা যায় পুরো সাজকে৷ মুখমণ্ডল ও শরীরের উর্দ্ধাংশের ব্লেন্ডিং চমৎকার হয়েছে, যা এই আবহাওয়ায় খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। চুলে করা হয়েছে খোঁপা।
এবারে চলে আসে শাড়ির ড্রেপিংয়ের কথা। আটপৌরে করে পরা শাড়ির আঁচল ফ্লোরটাচ দৈর্ঘ্যে ছেড়ে রাখা। বেল্ট দিয়ে সেট করা পুরো ড্রেপ।
আর সবকিছুকে এক সুতায় গেঁথেছে সুন্দরী অভিনেত্রী রুনা খানের আত্মবিশ্বাসী বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও স্বভাবজাত হাসি৷ এই গরম আবহাওয়ায় রিফ্রেশিং লুকের সাদা জামদানির সাজপোশাকটিতে তিনি ছিলেন লাইমলাইটে। তবে ড্রেপিং নিয়ে আরও একটু নিরীক্ষা করা যেত নিঃসন্দেহে। ছয় গজের এই বিস্ময়বস্ত্রকে এখন ফিউশনের বাঁধনহারা উপস্থাপনায় ফ্যাশন দুনিয়ায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। অবশ্য ঐতিহ্যবাহী সাজপোশাকের প্রতি সুন্দর এক আধুনিক ট্রিবিউট হয়েছে এই লুক। পরবর্তীতে হেয়ারস্টাইলে আরও ব্যতিক্রমী কিছু দেখার আগ্রহ রইল। প্রথার বাইরে গিয়ে চমক সৃষ্টি করা লুক তৈরির ক্ষেত্রে নিজেকে বারবার নতুনরূপে উপস্থাপন করতে একদম পিছপা না হওয়া রুনা খানের সঙ্গে কোল্যাবরেশন হতে পারে ডিজাইনার ও মেকওভার আর্টিস্টদের প্রথম পছন্দ।
এই লুকের ফটোশুট কো অর্ডিনেট করেছেন মাসিদ রনো।ছবির কারিগর হাভানা স্টুডিওর মো:সজীব মিয়া।
ছবি: রুনা খান, হাভানা স্টুডিও, আনার কলি খান