একসময় আমরা তারকা-ফ্যাশন বলতে হলিউড আর বলিউডের ট্রেন্ডকেই অনুসরণ করতাম। কিন্তু এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কোরিয়ান ফ্যাশন বা ‘হল্লিউ’ স্টাইলের। দক্ষিণ কোরিয়া আজ একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে দেশটি বেশি সমাদৃত হচ্ছে এর সংস্কৃতি আর বিনোদনজগতের জন্য। তরুণ ফ্যাশনিস্তাদের কাছে কোরিয়ান ফ্যাশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফ্লোরাল ড্রেস, মম জিনস, স্কার্ট, ওভার সাইজড সোয়েটার, ক্রপটপ, সোয়েটশার্ট এই মুহূর্তে ফ্যাশনে বেশ ট্রেন্ডিং।
কোরিয়ান ফ্যাশন ইতিমধ্যেই খুব আলাদা একটা জায়গা তৈরি করেছে, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে। এর বহুমুখিতা আর গতিশীলতার জন্য কিশোর-কিশোরীরা সাদরে গ্রহণ করে নিচ্ছে এই ট্রেন্ড। আজকের প্রজন্ম ভিন্নধর্মী এবং উদ্ভাবনী পোশাক পরতে চায়। যে কারণে তারা কোরিয়ান স্টাইলের পোশাক বেছে নেয়। এটি এমন একটি ফ্যাশন, যা কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবার জন্য বৈচিত্র্য আনতে পেরেছে। এ ছাড়া কোরিয়ান ফ্যাশন নানামুখী টেক্সচার, লেয়ার আর কাটিংয়ে পরিপূর্ণ। যে বিশেষ কয়েকটি কারণে কোরিয়ান ফ্যাশনের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
কোরিয়ান সৌন্দর্যশিল্প ফ্যাশন প্রবণতার ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। কোরিয়ান ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলো নিখুঁত ত্বক, ন্যাচারাল মেকআপ লুক আর চুলের ওপর জোর দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের জগতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ত্বকের যত্ন। বিখ্যাত কোরিয়ান ১০ ধাপের স্কিনকেয়ার রুটিন সবাই সাদরে গ্রহণ করেছে। বাজারে কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যগুলোর যে চাহিদা, (যেমন মাস্ক, সিরাম) এতে বোঝা যায় যে কে-বিউটি আন্তর্জাতিক আগ্রহ তৈরি করছে।
শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে কে-ড্রামাগুলো দর্শকদের কাছে সহজে পৌঁছেছে। প্ল্যাটফর্মটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয় সব কোরিয়ান ড্রামা সিরিজ তৈরি করা শুরু করেছে। তরুণদের একটি বড় অংশ এই কে-ড্রামা দেখতে পছন্দ করে। তারকাদের আকর্ষণীয় লুক, নাটকের গল্প আর অভিনয় ছাড়াও দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি আর দক্ষিণ কোরিয়ার নান্দনিক দৃশ্য তাদের মধ্যে দেশটির প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে। এর ফলে তরুণ ফ্যাশনিস্তারা কোরিয়ান ফ্যাশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
কে-পপ কোরিয়ান ফ্যাশন প্রবণতার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। কে-পপ তারকাদের প্রায়ই সাহসী ও রঙিন পোশাক, স্ট্রিট ওয়্যার-ব্র্যান্ড ফ্যাশনের মিশ্রণ দেখা যায়, যা সুপার স্টাইলিশ আর আকর্ষণীয় লুক তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী কে-পপ গ্রুপদের যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, তা অনস্বীকার্য। কে-পপ গ্রুপগুলো তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সংগীতের পাশাপাশি, কে-পপ আইডলদের লুকও তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। সেই কারণেই, তাঁরা তাঁদের পছন্দের কোরিয়ান তারকাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে শুরু করেছেন।
কোরিয়ান ফ্যাশনে স্ট্রিট ফ্যাশনের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। কোরিয়ান স্ট্রিটওয়্যারে প্রায়ই ক্যাজুয়াল এবং স্পোর্টসওয়্যারের উপাদান থাকে, যার মধ্যে রয়েছে গ্রাফিক টি-শার্ট, হুডি, স্নিকার্স এবং বড় আকারের পোশাক। কোরিয়ান স্ট্রিটওয়্যার ব্র্যান্ডগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
আধুনিক কোরিয়ান ফ্যাশন প্রথম থেকেই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ স্টাইলকে সাদরে গ্রহণ করছে। অনেক কোরিয়ান ব্র্যান্ড ইউনিসেক্স পোশাক তৈরি করে আর লিঙ্গভিত্তিক নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথাগত ফ্যাশনের বাইরে গিয়ে ফ্যাশনকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।