‘সুড়ঙ্গ’ মুভির সাফল্যে ভূমিকা রেখেছে এর সুপরিকল্পিত সেট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরেছে। মৌলিক গল্পের বেশ কিছু সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ঢল নেমেছে। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরাও বেশ হলমুখী হয়েছেন। চার দেয়ালে আবদ্ধ স্টুডিওতে শুট করা সিনেমা নয়, বরং ব্যতিক্রম কিছু আশা করেন বর্তমান সময়ের স্মার্ট দর্শকেরা। নায়ক-নায়িকা ছাড়া পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার, শিল্পনির্দেশকসহ বিভিন্ন কলাকুশলীর কাজ বিবেচনা করে এখন মানুষ সিনেমা দেখেন। তাঁদের সম্পর্কে জানার চেষ্টাও করেন।

এবারের ঈদের অন্যতম ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত সিনেমার নাম ‘সুড়ঙ্গ’। এই সিনেমা দেখার পর দর্শকেরা শুধু গল্প নয়, প্রতিটি দৃশ্যেই শিল্পের ছোঁয়ার প্রশংসা করেছেন। সিনেমাটির শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন শহীদুল ইসলাম। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে সুনামের সঙ্গে শিল্পনির্দেশনার কাজ করে যাচ্ছেন। ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার সেট তৈরিতে ছোট ছোট অনুষঙ্গের ব্যবহার এর ও প্রি-প্রোডাকশন নিয়ে হালফ্যাশনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মাসুদ ও ময়নার প্রেমকাহিনি মূলত গ্রামের অতি সাধারণ জীবনের গল্প। তাদের প্রণয়ের শুরু ও বিয়ের সবকিছুতে গ্রামীণ পরিবেশ দেখানো হয়েছে। এই গল্পকে সাবলীল ও সুন্দর করতে শুটের জন্য দেশের অন্যতম সুন্দর এলাকা সুনামগঞ্জের নীলাদ্রি লেক বেছে নেয় ‘সুড়ঙ্গ’ টিম।

এই লোকেশনে ২৫ দিনের শুটিং প্ল্যান থাকলেও ৪০ দিনের মতো সময় লাগে। নীলাদ্রি লেকের পাড়ে কোনো বাড়ি ছিল না। সেখানে মাসুদের বাড়ি নির্মাণ, বাড়ি থেকে লেকে নামার জন্য ঘাটসহ আরও অনেক কিছু করতে হয় এই শিল্পনির্দেশক দলের। তাদের এক মাসের বেশি পরিশ্রমে সিনেমার প্রথম অংশের শুটিং সম্পন্ন হয়।

তবে এই এলাকায় মানুষজন কম থাকায় এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সহযোগিতায় খুব বেশি ঝামেলা হয়নি। এ ছাড়া সেখানকার একটি স্থানীয় বাজারে মাসুদের ইলেকট্রনিকসের দোকান সাজিয়ে কাজ করতে হয়েছে।

তবে সুনামগঞ্জের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল চট্টগ্রামে শুট করা। কারণ, সেখানে পরিত্যক্ত একটা জায়গায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা বেশ কঠিন হচ্ছিল। তা ছাড়া শুটিং এলাকার পুরোটা নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বিভিন্ন সময় অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। আবার সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে নানা ধরনের ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে। মাটি খোঁড়ার পর বারবার সুড়ঙ্গের ভেতর মাটি পড়ে যাচ্ছিল। তাই বাঁশ দিয়ে মাটি আটকাতে হয়। তবে সময় লাগলেও কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হয় বলে জানান শহীদুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

শুটিংয়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পনির্দেশক বলেন, শুটিং এলাকার অনুমতি নেওয়া, সেখানে কিছুদিন আগে গিয়ে পুরো সেট তৈরির কাজে বেশ পরিশ্রম গেছে। আসলে সব কাজের জন্য বাজেট একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ‘সুড়ঙ্গ’ বড় বাজেটের সিনেমা হলেও এই সিনেমার জন্য শিল্পনির্দেশনার যে বাজেট ছিল, সেটি খুব বেশি নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের জন্য যা হিসাব করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়েছে। এটি মূলত কাজে নামার পর ভালোভাবে বোঝা গেছে। তবে চ্যালেঞ্জিং একটা প্রজেক্ট সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি, এটি আনন্দের।’

শিল্পনির্দেশনায় ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ হিসেবে

শহীদুল ইসলাম বলেন, অনেক বেশি সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে। একই সঙ্গে চিন্তাশীল হতে হবে। তাঁর বয়ানে, ‘আমার একাডেমিক কোনো স্বীকৃতি নেই, তবে আমি ২০০৯ সাল থেকে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। স্ক্রিপ্ট পড়ে, গল্প বুঝে সুন্দর করে চিন্তা করতে হয়। তারপর ভালো কিছু পর্দায় দেখানো যায়।’

শহীদুল ইসলাম ছাড়া ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় আর্টের একটি মূল দল ছিল, যেখানে শিল্পনির্দেশক হিসেবে তারেক মেজবাহ ও সেট ডিরেক্টর হিসেবে খোরশেদ আলম ছিলেন। এ ছাড়া কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে অনেকেই জড়িত ছিলেন। আলোচনার ইতি টানতে গিয়ে—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ভালো প্রকাডশন হয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’ ছবি, এমনই মতামত দিলেন শহীদুল ইসলাম।

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৪: ০০
বিজ্ঞাপন