কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে এসেছে সঞ্জয় লীলা বানসালির সর্বপ্রথম ওয়েবসিরিজ ‘হীরামন্ডি: দ্য ডায়মন্ড বাজার’ এর ফার্স্ট লুক । স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী লাহোরের পটভূমিতে গুটিকয় বারাঙ্গনার জীবনের প্রেম, ধোঁকা এবং স্বাধীনতার লড়াই নিয়ে রচিত এই গল্প। প্রকাশের পরপরই এটি তুমুল সাড়া জাগিয়ে তুলেছে দর্শকমনে। নারীপ্রধান এই নেটফ্লিক্স সিরিজে অভিনয় করছেন বলিউডের সোনাক্ষী সিনহা, অদিতি রাও হায়দারি, রিচা চাড্ডা, শারমিন সেহগল ও সানজিদা শেখের মতো রূপসী অভিনেত্রীরা। সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পর্দায় ফিরছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। আসুন দেখে নেওয়া যাক সঞ্জয়ের এই তারকাখচিত দুনিয়ার নারী তারকাদের লুকের আদ্যোপান্ত।
হালকা গোলাপি রঙে মনমাতানো মনীষা
হীরামন্ডি: দ্য ডায়মন্ড বাজারে বারাঙ্গনার চরিত্রে অভিনয় করছেন মনীষা। প্রথম লুকে তাঁকে দেখা যায় গোলাপির হালকা একটি শেডের পোশাকে। সঙ্গে তাঁর ঠোঁটের গাঢ় মেরুন লিপস্টিক নজর কাড়ছে সবার। দুটো রং একসঙ্গে মিলেমিশে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছে তাঁর পুরো সাজটি। চুল সাজানো হয়েছে সফট কার্লসে। বাঁয়ে সিঁথি কেটে পরানো হয়েছে ঝাপটা। সঙ্গে আছে টানা দেওয়া নথ, স্টেটমেন্ট কানের দুল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মনোযোগ চলে যায় তাঁর দুহাত ভরে আঁকা মেহেদির নকশায়।
আবার একটি নাচের দৃশ্যে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য শর্ষে–হলুদে দেখা যায় মনীষাকে। পরেছেন এই রঙের একটি গারারা পোশাক। গারারার নিচের অংশে রয়েছে গোলাপি, ফিরোজাসহ বিভিন্ন রং দিয়ে করা এমব্রয়ডারি। মাথায় ঘোমটা এবং সেই সঙ্গে রয়েছে, টিকলি।
গোলাপের নকশা করা শাড়িতে রিচা
রিচা চাড্ডার দুই লুককে পাওয়ারফুল ও ফেমিনিন এই দুটি শব্দ ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা যাক। তাঁর দেখা মিলছে প্যাস্টেল রঙের মাঝে পাড়জুড়ে টকটকে লাল গোলাপ ফুলের নকশা করা শাড়িতে। প্যাস্টেল ব্লাউজ দিয়ে মিলিয়ে পরানো হয়েছে শাড়ি, যাতে পাড়ের নকশাটা ফুটে রয়েছে।
গলায় রয়েছে পাথর ও হীরা বসানো হালকা কাজের একটি নেকপিস আর কানে চান্দবালি। পাড়ের নকশার সঙ্গে মিলিয়ে হাতে কতগুলো চুড়ি। রিচার হাতেও রয়েছে হালকা সুন্দর মেহেদির নকশা। চুলে ন্যাচারাল কার্লস রেখে দুটো টকটকে লাল গোলাপ দিয়ে সাজানোতে পুরো লুকটার সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণে। হাতে আছে সোনালি জরির কাজ করা ব্যাগ। চোখে কালো সানগ্লাস। চল্লিশের দশকের কোনো শক্তিশালী নারী চরিত্রের মতোই লাগছে তাঁকে।
লাল রঙে রাজকীয় সাজ অদিতির
বরাবরই বানসালির ছবিতে একেবারে মানিয়ে যান অদিতি। রাজবংশের মেয়ে বলেই বোধ হয়! এখানে অদিতির দেখা মিলছে গাঢ় লাল কুর্তির সাজে। কুর্তিটিতে আছে সোনালি জরির কাজ।
মাথায় ঘোমটা টানতে যে ওড়না ব্যবহৃত হয়েছে, তার পাড় ঘেঁষে আছে সোনালি সুতার কাজ। গয়না হিসেবে পরানো হয়েছে দামি পাথরে তৈরি একটি স্টেটমেন্ট চোকার। সঙ্গে আছে ট্র্যাডিশনাল কানের দুল, টিকলি আর ঝাপটা। নাকে টানা দিয়ে নথ পরানো রয়েছে তাঁরও। হাতজুড়ে শোভা পাচ্ছে একটা হীরাখচিত হাতফুল।
রহস্যময়ী সোনাক্ষী পরেছেন কালো পোশাক
সোনাক্ষীর লুকটা এখানে সবচেয়ে আলাদা, বলতেই হবে। সবাই যখন পরেছেন উল্লাসের হলুদ, শান্তি হালকা কিংবা প্রেমের লাল রং, সোনাক্ষীর দেখা মিলছে কালোতে। একেবারে ভিন্ন অবতারে। তবে কি কোনো গোপন রহস্যের ইশারা করছে তাঁর চরিত্রটি? টিজারে কালো একটি কুর্তি পরে হেঁটে আসছেন তিনি। এতে লাল, গোলাপি ও সবুজ ফুল-পাতার নকশা আঁকা।
মাথায় কালো ওড়নায় ঘোমটা টানা। ঘোমটার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বাকি সবার মতনই পাথর ও মুক্তাখচিত ঝাপটা। নাকে একটি পাথরের নাকফুল। চোখে গাঢ় করে দেওয়া হয়েছে কাজল। ঠোঁট সাজিয়েছেন গাঢ় মেরুন লিপস্টিকে। তাঁর লুকে একটা রহস্যময়ী গথিক ব্যাপার আছে।
এ ছাড়া লাস্যময়ী লুকে ধরা দিয়েছেন শারমিন সেহগল ও সানজিদা শেখ। প্যাস্টেল রঙের পোশাকের সঙ্গে শারমিন পরেছেন ক্রিস্টালের টিকলি। সঙ্গে আছে ঝাপটা ও নথ। তাঁর হাতেও চোখে পড়ছে মেহেদির কারুকাজ ও হাতফুল। অন্য সবার মতোই সানজিদার পরনে আছে প্যাস্টেল রঙের পোশাক। নাকে দেখা মিলছে ছোট্ট একটি টানা নথের।
চল্লিশের দশকের স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী পাকিস্তানের পোশাকের ধরন-ধারণ মাথায় রেখে এই সিরিজের পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ডিজাইনার দ্য রিম্পেল অ্যান্ড হারপ্রীত নারুলা লেবেল। বলাই বাহুল্য,সঞ্জয়ের নান্দনিকতা তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে! তাঁর গল্পের নারী মানেই তো বিলাসী আমেজ আর নান্দনিকতার এক অদ্ভুত সুন্দর মিশেল। সে দিকটি মাথায় রেখেই ২০০ কেজি সোনার গয়না বানাতে হয়েছে শ্রী পরমণি জুয়েলস কে। শুধু তাই নয়। গয়নায় আরও আছে রুবি, পান্না আর পলকি হীরা।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম