দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পারমাণবিক বোমার অন্যতম প্রধান রূপকার রবার্ট ওপেনহাইমারের চরিত্রে অবিশ্বাস্য রকমের বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন হলিউডের মেধাবী অভিনেতা কিলিয়ান মারফি। দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওপেনহাইমারের জীবনের বহুদিন এমন গেছে, যখন তিনি খুব সম্ভবত শুধু সিগারেট আর ডাবল মার্টিনি পান করেই বেঁচে ছিলেন।
এ ছাড়া ওপেনহাইমার সিনেমাটির বেশ কিছু দৃশ্যেও তাঁকে শুধু একটি করে কমলার কোয়া খেতে দেখা যায়। ওপেনহাইমারের খাওয়ার ব্যাপারে বেশ অনীহা ছিল, তা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। তাঁর ওজনও ছিল স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় বেশ কম। তিনি মাত্র ১২৮ পাউন্ড ছিলেন, যা তাঁর বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের চেয়ে ২৭ পাউন্ড কম।
ওপেনহাইমারের স্ত্রী কিটির চরিত্রে অভিনয় করা এমিলি ব্লান্ট এক্সট্রাটিভির একটি সাক্ষাৎকারে এই চরিত্রের জন্য মারফিকে কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা জানান। তিনি বলেন, মারফিকে ওপেনহাইমারের চরিত্রে পুরোপুরিভাবে মানিয়ে নিতে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি প্রতিদিন শুধু একটি বাদাম খেয়ে কাটিয়ে দিতেন। তবে অনেকেই ব্লান্টের এ তথ্যকে অতিরঞ্জিত তথ্য বলেও মনে করছেন।
তবে মারফি ওপেনহাইমারের জন্য তাঁর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলা থেকে সব সময় বিরত থাকছেন। এমনকি তিনি কতটুকু ওজন কমিয়েছেন, এই তথ্যও প্রকাশ করেননি। গার্ডিয়ানকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চরিত্রটির জন্য তাঁকে নিজের ওজন খুব দ্রুত কমাতে হয়েছে। তিনি বলেন, তারকাদের বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে ওজন হ্রাস এবং বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যেতেই হয়।
তবে মারফি স্বীকার করেন, তিনি ওপেনহাইমারের খাদ্যাভ্যাসকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি কতটা কম খেয়ে থাকতে পারেন, এটি দেখতে নিজেকে পরীক্ষাও করতেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে কিছুটা প্রতিযোগিতা করতাম এ ব্যাপারে, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর কিছু নয়।’ তিনি সবাইকে এ ধরনের কোনো কাজ না করতে পরামর্শ দেন। তিনি আরও জানান, চরিত্রটির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি খাওয়া ও ঘুমের কথা প্রায় ভুলে যেতে শুরু করেছিলেন।
এ ছাড়া মারফি বলেন, ‘সিনেমাটি করার সময় আমি সর্বক্ষণ শুধু দৌড় ও একধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এ কারণে আমি খাওয়া কিংবা অন্য কোনো কিছু নিয়ে ভাবার সময় পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না। কয়েক ঘণ্টা ঘুম, জেগে ওঠা এবং আবার দৌড়...।’
তবে মারফি বলেন, এটি তাঁর জন্য বেশ ভালোই হয়েছে, যেহেতু চরিত্রটিও এমনই ছিল। ওপেনহাইমার কখনো ভালোভাবে খেতেন না, তবে তিনি ক্রমাগত ধূমপান করতেন এবং প্রচুর পরিমাণে মার্টিনি পান করতেন, যেমনটি সিনেমাতে দেখানো হয়েছে।
চরম চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কিলিয়ান মারফি সিনেমাটিতে ওপেনহাইমারের ব্যক্তিত্বকে তীব্র আবেগ নিয়ে নিজের মধ্য দিয়ে বাস্তব রূপ দিয়েছেন, যা দর্শকের মন জয় করতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া সিনেমাটি হলে মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই মারফি–ভক্তরা তাঁর এই শারীরিক রূপান্তর নিয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
তবে মারফির মতে, তিনি সাধারণ শারীরিক রূপান্তরের চেয়ে চরিত্রের ওপরেই বেশি জোর দিয়েছিলেন। আর যাতে তাঁর ভক্তরা এ ব্যাপারে তাঁকে অনুসরণ না করেন, সে জন্যই তিনি এই নিয়ে বেশি কিছু জানাতে নারাজ।