বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুপারস্টার বলা যায় শাকিব খানকে। এ পর্যন্ত তিনি দিয়েছেন প্রচুর হিট ছবি। তবে এত দিন বেশির ভাগ ছবিতে লুকের হেরফের হলেও তাঁর ভক্তকুল তাঁকে ‘হিরো’ হিসেবেই দেখে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রিয়তমা ছবির পোস্টারগুলো প্রকাশিত হওয়ার সময় যেন প্রতিবারই বোমা ফুটছে। কারণ, একটাই—শাকিব খানের একেবারে অন্যরকম লুক। প্রথম দর্শনে দেখা গিয়েছিল কোঁকড়া চুলে রাফ অ্যান্ড টাফ শাকিবকে। অ্যাকশন সিকোয়েন্সের পোস্টারে উড়ন্ত লম্বা চুল। আর শেষে পরশুর অ্যাটম বোমা, অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সী লম্বা চুলের শাকিবের অভূতপূর্ব লুক। আর এই সব নিয়েই আলাপ হলো এই ছবিতে শাকিব খানের লুক ডিজাইনার ফারাহ দিবার সঙ্গে।
ফারাহ মূলত ফ্যাশন ডিজাইনার। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণবিষয়ক দায়িত্বও পালন করেন সরকারি পর্যায়ে। বলছিলেন, ২০২০ সালে অনন্য মামুন পরিচালিত নবাব এলএলবি মুভি দিয়েই শাকিব খানের সঙ্গে তিনি কাজ শুরু করেন। এই ছবিটিরই ওপার বাংলার সংস্করণ দেখে মুগ্ধ ও অবাক হয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, কেবল স্টাইলিং আর পরিবেশনার গুণে একই ব্যক্তিকে কতটা আলাদা লাগে। ফারাহ বলেন, ‘তখন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কোনো দিন আমার সুযোগ হবে সুপারস্টার শাকিব খানের লুক ডিজাইন করার।’
এর চার বছর পর ফারাহ ঘটনাচক্রে আর নিজের মেধার গুণেই তাঁর সঙ্গে কাজ শুরু করেন। একাধারে নবাব এলএলবি, অন্তরাত্মা ও লিডার মুভিতে সফলভাবে কাজ করেন। এক বছর পরে আবার খোদ শাকিব খানের ইচ্ছায় প্রিয়তমা ছবিতে কাজের সুযোগ হয় ফারাহর। সেটিও এই গত ঈদুল ফিতরের আগে আগে।
স্বল্প সময়ে কাজটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন ফারাহ। তিনি প্রিয়তমা ছবিতে কাজ করবেন জেনে বা না জেনেও শাকিব খানের অনুরাগীদের গ্রুপগুলো থেকে ফারাহর কাছে অনুরোধ আসতে থাকে তাঁদের প্রিয় নায়ককে নতুন কোনো স্টাইল ও লুকে দেখানোর জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছবিতে শাকিব খানও তাঁর নায়ক ইমেজের চেয়ে বাস্তবধর্মী বা নতুন লুকের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলেন বলে জানান ফারাহ।
লুক ডিজাইন করার সময় প্রিয়তমা সিনেমায় শাকিব খানের হেয়ারস্টাইলকে ফারাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। এই ছবিতে শাকিব খানকে দীর্ঘদিন পর পুরো গল্পে লম্বা চুলে দেখা যাবে। হলিউড, দক্ষিণ ভারত ও বলিউডে এখন লম্বা চুলের ট্রেন্ড চলছে। তাই শাকিবকে এমন লুকে দেখার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ রয়েছে তাঁর ভক্তদের।
অবশ্য ফারাহ দিবাকে একেবারেই নিজের মতো করে কাজ করতে দিয়েছেন তরুণ পরিচালক হিমেল আশরাফ। ফারাহর প্রতি তিনি আস্থা রেখে কাজটির দায়িত্ব দিয়েছেন এবং পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন যা আসলে একটি কাজ সফলভাবে করার জন্য খুব জরুরি। ফারাহর পরিকল্পিত লুক ডিজাইন করার পর সেই লুককে বাস্তবে রূপ দিতে ড্রেসম্যানসহ টেইলারিং, হেয়ার, মেকআপ, ফটোগ্রাফি— সব কটি বিভাগের সদস্যরাই যথেষ্ট পরিশ্রম ও গুরুত্ব সহকারে কাজ করেছেন।
প্রিয়তমা সিনেমায় সিকোয়েন্স, এন্ট্রি, অ্যাকশন আর দুটি গানের প্রতিটি লুক ও কস্টিউম আলাদাভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা হয়তো আগে অন্য কোনো মূলধারার সিনেমায় সেভাবে দেখা যায়নি। জীবনের তিনটি পর্যায়ে তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে শাকিব খান এই ছবিতে ভক্তদের সামনে এসেছেন।
ফারাহর কাছ থেকেই জানা গেল, ছয় ঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রম করে হেয়ার এক্সটেনশনের সাহায্যে শাকিব খানের চুলের স্টাইল করা হয়েছে। আর তিনি সেটি ক্যারিও করেছেন দুর্দান্ত। বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরূপে শাকিবের চেহারায় প্রোস্থেটিক লুক ব্যবহার করা হয়েছে। মেকআপ, চুলের স্টাইল আর পোশাক–আশাকের সঙ্গে ন্যাচারাল ধূলিধূসরিত জীর্ণ লুক চরিত্রে পূর্ণতা দিয়েছে।
ফারাহর সঙ্গে আলাপে আরও জানা গেল, একজন নিবেদিতপ্রাণ অভিনেতার মতোই দাঁড়ি না কেটে আর ময়লা মেঝেতে খালি পায়ে হেঁটে ন্যাচারাল উষ্কখুষ্ক ভাব এনেছেন তিনি। সত্যি বলতে, হঠাৎ দেখায় শাকিবকে পরশুর এই পোস্টারে চেনা যায়নি একেবারেই। আর এখানেই অভিনেতা স্বয়ং যেমন সার্থক, তেমনি সার্থকতা পেয়েছে ফারাহ দিবার করা লুক ডিজাইন, যা পুরো টিম মিলেই বাস্তবায়ন করেছে।
ফটোগ্রাফার: ফারহান নোমান
হিরো ইমেজ: ‘প্রিয়তমা’ ছবির পোস্টার