বলিউডের নামী পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’ এ সময়ের আলোচিত স্পাই থ্রিলার মুভি। মুভির কাস্টিং, ব্যাকগ্রাইন্ড স্কোর, গল্প—সব মিলিয়ে সম্প্রতি এটি রয়েছে আলোচনায়, আর সেই সঙ্গে সমালোচনারও শীর্ষে।
তবে এ মুভিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় এবং বাংলাদেশেরই অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের প্রথম বলিউড অভিষেক হওয়ায় তা আমাদের একটু বাড়তি মনোযোগ পেয়েছে। প্লট নিয়ে কথা হলেও বাঁধনের ডাবল এজেন্ট বা গুপ্তচর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় আর আকর্ষণীয় লুক প্রশংসিত হচ্ছে দুই দেশেই।
‘খুফিয়া’–এর প্রথম দৃশ্যে জামদানি শাড়ি পরিহিতা শাশ্বত বাঙালি নারী রূপে হিনা রেহমানের নাটকীয় প্রবেশ পুরো গল্পের এক অন্য রকম আবহের আভাস দিচ্ছিল। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরা রুপালি ঝুমকা, হাতের বালা আর পিঠের জামদানি ডিজাইনের বডি জুয়েলারি দর্শকের চোখ আটকে রেখেছে নিঃসন্দেহে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, আমাদের দেশে এভাবে বডি জুয়েলারির ধারণাটিকে বাস্তব রূপ কিন্তু বাঁধনই দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। অগ্নিশিখার আভায় আর আলো–আঁধারিতে হিনা রেহমানের মধ্যে বাঁধনের করা আরেক অনবদ্য চরিত্র ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’–এর ভয়ংকর সুন্দরী মুসকান জুবেরীর ছায়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল।
যাঁরাই ‘খুফিয়া’ দেখেছেন, একবাক্যে স্বীকার করেছেন, এখানে বাঁধনের পোশাক থেকে অনুষঙ্গ, অভিনয়—সবই দুর্দান্ত হয়েছে। যে দৃশ্যে বলিউডের শক্তিময়ী অভিনেত্রী টাবুর সঙ্গে প্রথম একই ফ্রেমে বাঁধনকে দেখা যায়, সেটি আসলেই মনে রাখার মতো। সবুজ পুলওভারে গলায় জড়ানো সাধারণ একটি স্কার্ফে হিনা রেহমানের লুকের মধ্যে জীবনে পোড় খাওয়া এক তরুণীর দৃঢ়তার গল্প প্রকাশ পাচ্ছিল।
পরের দৃশ্যগুলোতে বাঁধনকে দেখা যায় সবুজ–কালো, লাল–হলুদ ইত্যাদি রংয়ের পুলওভারে। সেই সঙ্গে সাধারণ প্যান্ট আর ওড়না। বাঁধন জানান, এই লুকের পুরোটাই বিশাল ভরদ্বাজের নির্দেশনায় করা হয়েছে। উনি চেয়েছিলেন, হিনা রেহমান চরিত্রটি সব সময় পুলওভার পরে থাকবে, তেমন কোনো মেকআপ থাকবে না কাজল আর লিপস্টিক ছাড়া এবং কপালে থাকবে কালো টিপ। আর সেভাবেই দেখা গেছে বাঁধনকে।
বাঁধন জানান, যেহেতু তাঁর চুল ছোট, মুম্বাইয়ে যাওয়ার পর তাঁর চুলের সঙ্গে মিলিয়ে হেয়ার এক্সটেনশন ব্যবহার করা হয়। শুরুতেই পোশাকের মাপ নিয়ে গিয়ে সে অনুযায়ী সব কস্টিউম বানানো হয়। যেকোনো চরিত্রায়ণে অত্যন্ত যত্নশীল এ গুণী অভিনেত্রীর কাছ থেকে জানা গেল, তেমন কোনো মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন না হিনা রেহমানকে রূপ দিতে। বরং বাঁধন নিজের মেকআপ নিজেই করেছেন। তিনি বলেন, মুম্বাইয়ে শুটের সময় প্রত্যেক শিল্পীর জন্য আলাদা মেকআপ ভ্যান ছিল, সেখান থেকেই প্রস্তুত হয়ে সেটে যেতেন তাঁরা।
হেয়ার স্টাইল বাঁধনের করা এ চরিত্রের সঙ্গে মানানসই রাখার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। পুরো মুভিতে হালকা ঢেউখেলানো খোলা চুলেই দেখা গেছে বাঁধনকে। কেবল প্রথম দৃশ্যে মাথায় সোজা সিঁথিতে টেনে বাঁধা খোঁপায় দেখা যায় বাঁধনকে। বাঁধন জানান, তিনি অন্যের করে দেওয়া মেকআপ খুব একটা পছন্দ করেন না, তাই নিজের সাজ সাধারণত নিজেই করেন।
বাঁধন বলেন, হিনা রেহমান বা অক্টোপাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের বাঁধনের খুব একটা মিল নেই। তবে একটা জায়গায় সাদৃশ্য আছে, সেটা হচ্ছে দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস; যেটা মানুষের মধ্যে থাকলেই তিনি পৌঁছে যেতে পারেন অভীষ্ট লক্ষ্যে।
সব মিলিয়ে নিরীক্ষাধর্মী এমন এক চরিত্রের মাধ্যমে বাঁধন তাঁর অভিনয়–প্রতিভার সঙ্গে সঙ্গে সাজপোশাক দিয়েও নজর কেড়েছেন, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম