তখন তিনি সিউলের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আশপাশ থেকে ভেসে আসছিল মানুষের কোলাহল আর কে-পপ গানের আওয়াজ। এই অবস্থাতেও ফোনে আমাকে সাক্ষাৎকার দিলেন জেসিয়া ইসলাম। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মডেল ও ২০১৭ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জেসিয়া গতকালই মাত্র ভূষিত হয়েছেন এশিয়া মডেল অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩-এর মডেল স্টার অ্যাওয়ার্ডে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল ২০২৩–এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় ফেস অব এশিয়া, এশিয়া ওপেন কালেকশন ও এশিয়া মডেল অ্যাওয়ার্ডস। এই আড়ম্বরপূর্ণ আসরের আয়োজক দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণের জন্য তিনি সেখানে পৌঁছান ২ নভেম্বর।
জেসিয়াকে এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ ফেস অব এশিয়ার বিচারক নির্বাচিত করেন। এত বড় একটি আন্তর্জাতিক মডেল প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। মাত্র পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সাফল্যই বলতে গেলে জেসিয়াকে ঠিক ওই উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
পাশাপাশি জেসিয়াকে এবার এশিয়া মডেল অ্যাওয়ার্ডসে মডেল স্টার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। এটাও একজন মডেলের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই প্রসঙ্গে জেসিয়া ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে থেকেই জানতাম যে আমাকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম, বেশ শান্ত থাকব। নার্ভাস হব না একটুও। কিন্তু মঞ্চে আমাকে অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার জন্য ডাকা হলে, হঠাৎ নার্ভাস হতে শুরু করি। তবে সম্মাননা স্মারক হাতে নিয়ে ভীষণ গর্বিত মনে হচ্ছিল নিজেকে। আর এই গর্বিত হওয়ার একটা বড় কারণ ছিল, আমার বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে এই সম্মাননা প্রাপ্তি।’
জেসিয়া আরও যোগ করেন, ‘আমার দেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। এ জন্য আমি আজরা মাহমুদ ও তাঁর প্রতিষ্ঠান আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্পকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। তাঁকে ছাড়া এটা আসলে সম্ভব ছিল না।’
কথা প্রসঙ্গে যখন আজরা মাহমুদ নামটি এল, তখন তাঁকে নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় মডেল ও রানওয়ে ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ প্রতিষ্ঠা করেন আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্প (এএমটিসি)। (এএমটিসি) ফেস অব এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের মডেলদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যেই নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এএমটিসি।
উল্লেখ্য, এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ পর্বের যৌথ পার্টনার (এএমটিসি) ও ক্রশওয়াক কমিউনিকেশনস। বাংলাদেশের মিডিয়ায় সুপরিচিত ও স্বনামখ্যাত আজরা তাঁর এ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে মডেল ও হবু মডেলদের এমনভাবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর, যাতে তাঁরা তাঁদের বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে সক্ষম হন।
জেসিয়ার কাছ থেকে তাঁর বিচারক হওয়ার অভিজ্ঞতা জানা গেল। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতার বিচারক আমি। তা–ও আবার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এখানে প্রায় ২৫টি দেশের প্রতিযোগী ছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশেরও প্রতিনিধি হিসেবে দুজন ছিলেন। যাঁরা এখানে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হয়েছে। এর মধ্যে ছিল ওয়াকিং, পোজিং, ন্যাশনাল কস্টিউম সেগমেন্ট, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স টেস্টসহ আরও কিছু।
এখানে যাঁরা প্রতিযোগী ছিলেন, তাঁরা সবাই খুবই ট্যালেন্টেড।’ জেসিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্যান্য দেশের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি থেকে বাংলাদেশের মডেল ইন্ডাস্ট্রি কোন অংশে পিছিয়ে বা এগিয়ে আছে। তাঁর জবাব, ‘পিছিয়ে থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলতে পারেন। সত্যি বলতে, বাংলাদেশের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আছে। আমাদের দেশে এমন অনেক মডেল আছেন বা বর্তমানে উঠে আসছেন, তাঁরা চাইলে দেশের বাইরে বড় বড় কাজ করতে পারবেন।’
কথায়–কথায় জানা হলো ফাইনালে জেসিয়া পোশাক সম্পর্কে। তিনি বললেন, পোশাকেও তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সেখানে পরেছিলেন বাংলাদেশের নতুন ব্র্যান্ড কিনোর লাল প্যান্ট স্টাইলের গাউন। ডিজাইন করেছেন কিনোর স্বত্বাধিকারী জারিন রশিদ। জেসিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে আর্কা ফ্যাশন উইকে কিনোর রানওয়ে শোতে আমি শো স্টপার ছিলাম। তখন এই গাউনটি পরে হেঁটেছি। তখন গাউনটিতে আমার নিজেকে খুব সুন্দর লাগছিল। সে সময়ই ঠিক করি মডেল স্টার অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে এটি পরে মঞ্চে উঠব আমি।’
৮ নভেম্বর দেশে ফিরবেন জেসিয়া। কাল কোনো কাজ নেই। তাই ঘুরে বেড়াবেন সিউলের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, জানালেন জেসিয়া। প্রথমবারের মতো সিউলে ঘোরার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো তাঁর। বললেন, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। দক্ষিণ কোরিয়া অনেক সুন্দর ও গোছানো। এখানকার মানুষজন খুবই ফ্রেন্ডলি। তাঁরা আমাকে দারুণভাবে আপ্যায়িত করছেন। তাঁদের আতিথেয়তা আমি ভুলব না।’
দক্ষিণ কোরীয় রসনার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। আগামী দুই দিন তাই ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি এখানকার বিভিন্ন ধরনের খাবার চেখে দেখার ইচ্ছা আছে বলেও জানালেন তিনি।
ছবি: এএমটিসি ও জেসিয়ার ইনস্টাগ্রাম