দল যার যার, মেসি সবার
শেয়ার করুন
ফলো করুন

হাল ফ্যাশন ডেস্ক

তাঁর শহরে ১৮ মিটার লম্বা মেসি শার্ট
তাঁর শহরে ১৮ মিটার লম্বা মেসি শার্ট
ছবি: রয়টার্স

লিওনেল মেসিকে ভালোবাসে না, এবার ২০২২ আসরে মেসির হাতে কাপ দেখতে চায় না, এমন কাউকে বিশ্বে এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর শুধু সেরা ফুটবলার হিসেবে নয়, মানুষ মেসিকেই ভালোবাসে নিঃশর্তভাবে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়েরাও আজ মেসিকেই দেখতে চান বিজয়ীর বেশে। ম্যারাডোনার পর এমন সর্বজনপ্রিয় ফুটবলার হয়তো আর কেউ আসেননি মেসির মতো। আজ ইতিহাস গড়ার আগে লিওনেল মেসিকে কেনই–বা সবাই এত ভালোবাসি, সে রহস্য উদ্‌ঘাটনের প্রয়াস থাকল।

বিজ্ঞাপন

শৈশবের সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের পথে

আর্জেন্টিনার রোজারিওর রাস্তায় খেলার ছলে ফুটবল পায়ে দৌড়ে বেড়াতেন মেসি, আর দশজন ফুটবলপ্রেমী শিশুর মতোই। তবে শৈশবে শরীরের বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসা নেওয়ার পরও ১.৭ মিটার উচ্চতার মেসির ফুটবলার হিসেবে কৃতিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। উচ্চতাজনিত প্রতিকূলতা কাটিয়ে লিওনেল মেসি নিজের দক্ষতা আর মেধা দিয়ে জয় করেছেন ফুটবল–বিশ্ব। ছোট্ট ইঁদুরের আদলে কানে হাত দিয়ে গোল উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে তিনি এই উচ্চতার বাধা ডিঙিয়ে সাফল্যের কথা বারবার বলেন মাঠে। মেসি তাই সবার আগে জীবনযুদ্ধে জয়ী এক যোদ্ধার প্রতীক।

বিজ্ঞাপন

ক্লাব, টিম ও দেশের প্রতি বিশ্বস্ততা

ক্লাব কিংবা জাতীয় দলে মেসি অনুপ্রেরণা সবার
ক্লাব কিংবা জাতীয় দলে মেসি অনুপ্রেরণা সবার
ছবি: রয়টার্স

পাঁচবার বালন্দোর পুরস্কার জেতা লিওনেল মেসিকে দলে ভেড়াতে ক্লাবগুলোর তৎপরতার কমতি থাকে না কখনোই। তবু বার্সেলোনার প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা আর আবেগ সবাইকে ছুঁয়ে গিয়েছে সব সময়। ২১ বছর পর উপায়ান্তর না দেখে বার্সা ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর কান্না কাঁদিয়েছিল ভক্তদেরও। আর্জেন্টিনা দলের হয়ে খেলার সময় নিজের সবটুকু দেওয়া, ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলকে এগিয়ে রাখা—লিও মেসির এসব গুণই তাঁকে আলাদা করে সবার থেকে।

মেসি অনুপ্রেরণা সবার

অনেক সময়ই দেখা যায়, মহিরুহের ছত্রছায়ায় আর কোনো গাছই সেভাবে বেড়ে ওঠে না। কিন্তু লিওনেল মেসি এর স্পষ্ট ব্যতিক্রম। টিমমেটদের এবং বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী কচিকাঁচার দলকে অনুপ্রেরণা জোগাতে দক্ষ ও মেধাবী এই ফুটবলারের কোনো জুড়ি নেই। গোল অ্যাসিস্ট করা হোক বা কারও গোল করা ও ঠেকানোর পর তাঁকে নিয়ে উদ্‌যাপন করার ক্ষেত্রে হোক, মেসি সত্যিই উদার আর অকৃপণ। আর দুনিয়াজুড়ে ফুটবলবোদ্ধা হোক, আর জালে বল গেলে গোল হয় এটুকু জানা মানুষ হোক, লিও মেসির কল্যাণেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে অনেকেরই।

নিষ্পাপ মুখের সরল হাসি

কী যেন এক আছে মেসির হাসিতে, তাঁর সরল অভিব্যক্তি আর নিষ্পাপ শিশুসুলভ মুখাবয়বে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো ফুটবলারদের সুদর্শন ইমেজ, শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে কত চর্চাই তো হয়। কিন্তু লিও মেসির সাদাসিধা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর ‘পাশের বাড়ির ছেলের’ চেহারা মিলেমিশে একাকার হয়ে তাঁকে করেছে সবার আপন কেউ। ফ্যাশন নিয়েও অত মাথাব্যথা নেই মেসির। তাই তো বালন্দোর পুরস্কার নিতে গিয়ে পোলকা ডট স্যুট পরে ফ্যাশনবোদ্ধাদের ভ্রুকুটির কারণ হলেও, তাতে মেসি বা তাঁর বিশ্বজোড়া ভক্তকুলের ভ্রুক্ষেপ নেই। নিষ্পাপ চেহারা আর আলাভোলা হাসি দিয়েই বাজিমাত করে ফেলেছেন মেসি বহু আগেই।

সাদামাটা লুক

মেসিকে অদ্ভুতুড়ে মোহক, উদ্ভট রং বা এদিক–ওদিক চেঁছে কিম্ভূত হেয়ারস্টাইলে কখনোই দেখেননি কেউ। সাধারণ মানুষের প্রতীক এই অসাধারণ ফুটবলার অবশ্য ক্যারিয়ারে প্রথম দিকে আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার বাতিস্তুতার মতো খোলা, লম্বা চুলে খেলতে নেমে মন মাতিয়েছেন সবার। এই ন্যাচারাল ফুটবল জাদুকর ন্যাচারাল লুকেই স্বচ্ছন্দ বেশি।

শান্ত স্বভাবের নম্র মেসি

এবার ফুটবল বিশ্বকাপে দু–একবার মেজাজ হারাতে দেখা গেলেও সাধারণত মেসি একেবারেই নম্র আচরণ করেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, রেফারি, সাংবাদিক ও ভক্তদের প্রতি। মেজাজী বলে তেমন বদনাম নেই শান্ত স্বভাবের মেসির।

পরিবারই মেসির সব

ফুটবলের বাইরে প্রায় পুরো সময়টাই পরিবারকে দেন মেসি। সঙ্গিনী আন্তোনেলার সঙ্গে লিওনেল মেসির দীর্ঘ প্রেমময় সম্পর্ক। রয়েছে তিনটি পুত্রসন্তান। সুখী পরিবার নিয়ে মেসি সময় কাটান নিজের মতো করে। অন্য অনেক তারকা ফুটবলারের উচ্ছৃঙ্খল জীবনের গল্পের বিপরীতে মেসির এই পরিবারকেন্দ্রিক দিনযাপন ও ছোটবেলার সঙ্গীর প্রতি চিরন্তন বিশ্বস্ততা সবাইকে আরও বেশি করে বাধ্য করে তাঁকে ভালোবাসতে।

হিরো ইমেজ: রয়টার্স

মানবকল্যাণে মেসি

২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত লিও মেসি ফাউন্ডেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে বহু মানবকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। ২০০৪ সাল থেকে ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে আসছেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মেসি বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের রেখেছেন কার্যকর ভূমিকা। করোনাকালে অকাতরে দান করেছেন স্থানীয় হাসপাতালে এই অসাধারণ মানুষ ও সর্বসেরা ফুটবলার।

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ১২
বিজ্ঞাপন