প্রিয়জনকে উপহার দিতে কিংবা মুড সুইংয়ে নিজেকে সামলে নিতে উপকারী বন্ধু হিসেবে যে খাবারটি সবকিছুর সমাধান দেয়, তা হলো চকলেট। শুধু কি নিজে খাবেন বা অন্যকে খাওয়াবেন? ত্বকের জন্যও কিন্তু চকলেট মুশকিল আসান হিসেবে কাজ করে। নিদাগ ত্বকের জন্য চকলেট ফেস মাস্কের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কীভাবে চকলেট আপনার ত্বকে ব্যবহার করবেন, আর তা কতটুকু উপকার করবে, তা জানা জরুরি।
চকলেটে রয়েছে পেলিফেনলস ও ফ্লেবোনয়েড, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ত্বকের ভেতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলোকে খুব সহজেই নষ্ট করতে সাহায্য করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির জন্য ত্বকে অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। চকলেটে থাকা ফ্লেবোনয়েডের জন্য তা হয় না বরং ত্বকে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য চকলেট। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে ডার্ক চকলেট। শুধু কি তাই? ত্বকের ভেতরে আর্দ্রতা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ার কারণে ত্বকের রোগবালাইও দ্রুত সেরে যায়।
অ্যাটোপিক ডারমাটাইসিস বলে একধরনের রোগ রয়েছে; যা একজিমা বলেও পরিচিত। এর ফলে ত্বকে একধরনের চর্মরোগ হয়। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর এক গবেষণায় চালান। তাতে দেখা যায়, কোকোর নির্যাসে পাওয়া পলিফেনলগুলো ত্বকে অ্যালার্জির নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে।
চকলেট যে ত্বকের জন্য কতটা উপকারী, এ বিষয়ে রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, অতিরিক্ত স্ট্রেস কিংবা দুশ্চিন্তা থেকে ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায় দ্রুত। ডার্ক চকলেট নানা ধরনের ভিটামিনে সমৃদ্ধ। তাই ত্বকের বলিরেখা কমাতে, অ্যালার্জির প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত চকলেট ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। কোকো স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে। নানা রকম ফেস মাস্ক আজকাল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে ত্বকের ধরন বুঝে নিজে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারলে ভালো।
আপনার ত্বক একটু যত্ন পছন্দ করে। আর এর জন্য চকলেটের চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে? এজন্য দেয়া হলো কয়েকটি চকোলেট ফেস মাস্ক।
এই ফেস মাস্কটি বানাতে প্রয়োজন হবে এক টেবিল চামচ কোকো পাউডার, এক চিমটি দারুচিনি ও এক টেবিল চামচ অর্গানিক মধু। এরপর একটি পরিষ্কার বাটিতে কোকো পাউডার ও দারুচিনি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে পেস্ট ঘন হলে মধু দিয়ে মুখ এবং ঘাড়ে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিটের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার মাস্কটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
চকলেট এবং মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে।
প্রয়োজন হবে আধা কাপ কোকো পাউডার, ৩ টেবিল চামচ ওটমিল, ১ চা–চামচ হেভি ক্রিম, ১ চা–চামচ মধু। সব উপকরণ মিশিয়ে মুখ এবং ঘাড়ে ব্যবহার করতে হবে। এরপর ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার মাস্কটি ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং ক্লান্তিকর দিনের পর আরাম বোধ করবেন। ওটমিল ত্বকের সব মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে দেয়।
মাস্কটি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ বেসন, ১ চা–চামচ দই, আধা কাপ কোকো পাউডার ও অর্ধেক লেবু। একটি পাত্রে বেসন, দই এবং কোকো পাউডার যোগ করে এতে অর্ধেক লেবুর রস দিতে হবে। এবার ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারণ, বেসন এবং লেবু আপনার ত্বক পরিষ্কার করে এবং কালো দাগ কমায়। আর দই বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে।
এই মাস্কটির জন্য লাগবে মেল্টেড চকলেট (৫০ গ্রাম), একটি পাকা কলা, এক কাপ স্ট্রবেরি ও ১ কাপ তরমুজ। এবার ফলগুলো ব্লেন্ড করে এবং এতে চকলেট যোগ করতে হবে। ফেস মাস্কটি মুখে এবং ঘাড়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে হবে।
মিশ্র ফলের টোনিং ফেস মাস্কটি অত্যন্ত হাইড্রেটিং। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে। বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি ত্বকে খুব শান্ত প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মকালে এই মাস্কটি ত্বকে আরাম দেয়।
এই ফেস মাস্কটি বানাতে লাগবে ২টি ডার্ক চকলেট বার, পৌনে এক কাপ দুধ,
১ চা-চামচ সামুদ্রিক লবণ, ৩ টেবিল চামচ বাদামি চিনি। এবার একটি পাত্রে চকলেট বার গলিয়ে নিয়ে এতে লবণ, চিনি ও দুধ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে মুখ ও ঘাড়ে লাগাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এই মাস্কটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক পুষ্টি পাবে এবং ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকেও রক্ষা পাবে।
এই মাস্কটি বানাতে লাগবে এক টেবিল চামচ কোকো পাউডার, এক টেবিল চামচ অর্গানিক মধু, দুই টেবিল চামচ বাদামি চিনি। সব উপাদান একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণ মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। কোকো ও চিনি মুখ থেকে সব মৃত কোষকে সরিয়ে দেয় এবং ছিদ্রগুলো খুলে দেয়। মধু ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
এটি বানাতে প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ১ টেবিল চামচ মধু, আধা কাপ ম্যাশ করা কলা, ১ টেবিল চামচ দই। একটি পরিষ্কার বাটিতে সব উপকরণ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে ও ঘাড়ে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে হবে। কোকো পাউডারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আর কলা ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে। মধু একটি চমৎকার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং দই ত্বককে উজ্জ্বল করে।
• মাস্ক ব্যবহারের আগে অবশ্যই ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
• চকলেট মাস্ক/ফেসপ্যাক কখনোই পুরোপুরি শুকাতে দেওয়া যাবে না। আধা শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলতে হবে।
• চোখের কাছাকাছি প্যাক/মাস্ক লাগানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, সেখানে ত্বক খুব নাজুক।
• ধোয়ার সময় সার্কুলার মোশনে ত্বক ম্যাসাজ করতে হবে। এতে উপকার হবে।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল