সাজসজ্জায় নেই গ্ল্যামারের ছিটেফোঁটা। নেই রঙিন মেকআপসামগ্রীর ব্যবহার। চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘নিঃশ্বাস’-এ বাস্তবধর্মী ও বিপৎসংকুল দৃশ্যে কলাকুশলীদের রূপসজ্জা করা হয়েছে শুধুই বাস্তবতা অনুসরণে। আঘাতের চিহ্ন তৈরি করতে, রক্তাক্ত লুক দিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্পেশাল ইফেক্টের প্রসথেটিক মেকওভার। আর এই মেকওভারের মাধ্যমে চরিত্রগুলোর সঠিক লুক দেওয়ার কাজটি করেছেন মেকওভার আর্টিস্ট মো. খোকন মোল্লা।
সত্যি বলতে, অন্য রকম এক জোয়ার এসেছে এ দেশের চলচ্চিত্রজগতে। হালে সাড়াজাগানো ওয়েব মুভিগুলো যেন বাস্তবের একটু বেশিই কাছাকাছি। আর এ ধরনের চলচ্চিত্রে মেকওভারের কাজ করে খুব আত্মতৃপ্তি পান খোকন। যদিও সেই ছোটবেলায় সিনেমার পর্দায় গ্ল্যামারাস তারকাদের চোখধাঁধানো রূপই তাঁকে রূপসজ্জার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে নিজে নিজে এই কাজ শিখতে শুরু করেন রূপসজ্জাশিল্পী মোহাম্মদ আলী বাবুলের তত্ত্বাবধানে।
তারপর ঘটনাক্রমে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। এরপর রায়হান রাফির সঙ্গে প্রথম বড় কাজ ‘দহন’–এ। করেছেন চরকির ‘রেডরাম’ ছবির কাজও। রায়হান রাফি বলছিলেন, নতুন ধরনের কিছু করতে গেলেই তিনি খোকনের কথা ভাবেন। তাই তো সুপারহিট ছবি ‘পরান’, ‘নিঃশ্বাস’ আর ‘দামাল’-এ তিনি খোকনের ওপরই ছাড়েন মেকওভারের দায়িত্ব।
স্বভাবগতভাবে বিনয়ী খোকন তাঁর কাজের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে পরিচালকদের কৃতিত্ব দিতে চাইলেন। ‘নিঃশ্বাস’ ছবির ক্ষেত্রে বললেন, রায়হান রাফি তাঁর খুবই প্রিয় নির্মাতা। তাঁর কাজগুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এ ধরনের চ্যালেঞ্জই খুব পছন্দ খোকনের। এ প্রসঙ্গে ধন্যবাদ দিতে চান তিনি চরকির মতো প্ল্যাটফর্মকে, যা তাঁকে মনের মতো করে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে, কাজে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে।
‘নিঃশ্বাস’ ছায়াছবিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আলো–আঁধারিময় গ্লুমি লো কি লাইটের দৃশ্যায়ন। যেহেতু কলাকুশলীদের মুখের ওপর আলো পড়ার পরও চূড়ান্ত লুকটি ম্লান হতে হবে। তাই প্রত্যেকের ত্বকের টোন দু-এক শেড নিচে রাখা হয়েছে। তাসনিয়া ফারিণ ও সাফা কবিরের মতো গ্ল্যামারাস তারকাদের এই নন-গ্ল্যামারাস, ঘর্মাক্ত, যন্ত্রণাক্লিষ্ট ও বিধ্বস্তরূপে উপস্থাপন করার ব্যাপারে অনেকটা কৃতিত্বই খোকনের হাতের কাজের। সৈয়দ জামান শাওনের চরিত্রে অন্য রকম আমেজ এসেছে ঠোঁটের কাছে কাটা দাগের কারণে। ইমতিয়াজ বর্ষণের ব্যাপারে আসলে কিছুই না করার পক্ষপাতী ছিলেন খোকন। চরিত্রে তাই তাঁকে ন্যাচারাল লুকেই রাখা হয়েছে। তবে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এই লুক ধরে রাখার কাজটি বেশ কঠিন ছিল। টাচআপ লেগেছে বারবার।
এই ছবিতে সময় একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল খোকনের জন্য। হাতে সময় ছিল কম। ফলে অসাধারণ দ্রুততায় তিনি তৈরি করেছেন কলাকুশলীদের। এমন অনেক দৃশ্য ছিল, যেখানে একাধারে ২০ জনকে তৈরি করতে হয়েছে। আঘাতের চিহ্ন, রক্তাক্ত লুক দিতে গিয়েও তিনি মেকআপসামগ্রীর মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেননি। অপেক্ষাকৃত কম মানের পণ্য ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার চেয়ে ভালো কাজ করে সবার স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করাই খোকনের কাছে শ্রেয় মনে হয়।
‘নিঃশ্বাস’ ছবির চরিত্রগুলোর সঠিক লুক দারুণ গুরুত্ব পেয়েছে। লুক টেস্ট করা হয়েছে একাধিকবার। পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় মূল চরিত্র দুটির লুকেও এসেছে বদল। আর এই পরিশ্রমের ফসল ট্রেলারে ও টিজারে খুবই স্পষ্ট ছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া এই ছবি বাস্তবধর্মী ছবির অ্যাসথেটিক ও প্রসথেটিক মেকওভারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে বলেই আমাদের ধারণা।