যেসব মেকআপ পণ্য ব্যবহারের পর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া, যেমন চুলকানি, লালচে ভাব, র্যাশ বা ফুসকুড়ি এবং জ্বালাপোড়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, সেগুলো হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ নামে পরিচিত। এ ধরনের মেকআপ পণ্য সাধারণত সুগন্ধিমুক্ত ও মিনারেল বা খনিজভিত্তিক হয়ে থাকে। খনিজ উপাদানগুলো সাধারণত ‘নিষ্ক্রিয়’। এ জন্য এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। এ ছাড়া হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ পণ্যের মেয়াদ থাকে বেশি।
মেকআপ সুগন্ধি সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সুগন্ধির জন্য যে অ্যালার্জি হয়, তার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া, চামড়া ওঠা ইত্যাদি। হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ পণ্যে সুগন্ধি থাকে না। তাই সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আদর্শ। এ ছাড়া যারা ত্বকের রোগ রোজেশিয়া, সোরায়াইসিস, একজিমা বা ব্রণের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্যও হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ সর্বোত্তম পছন্দ হতে পারে।
আমাদের দেশের বাজারে এখনো হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ পণ্য খুব একটা পাওয়া যায় না। যাদের ত্বক সংবেদনশীল ও যারা ত্বকের নানা সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের মেকআপ পণ্য কেনার সময় উপাদানের তালিকার দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। সুগন্ধি ছাড়াও কিছু ক্ষতিকারক উপাদান আছে, যা সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে—
* মাইকা—উপাদানটির জন্য মেকআপ পণ্য চকচকে দেখায়।
* প্রিজারভেটিভ, যেমন প্যারাবেন, বিউটাইলপ্যারাবেন, প্রপিলপ্যারাবেন, বেনজাইল অ্যালকোহল, ফরমালডিহাইড, ডায়াজোলিডিনাইল ইউরিয়া।
* কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ফিল্টার।
সাধারণত এখন অনেক মুখের বেইজ মেকআপ পণ্যে এসব ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। এসবের মধ্যে যে উপাদানগুলো এড়িয়ে যেতে হবে—অক্সিবেনজোন, অ্যাভোবেনজোন, হোমোসালেট, অক্টিনোক্সেট, অক্টোক্রিলিন, সিনোক্সেট, ডাইঅক্সিবেনজোন, এনসুলিজোল, মেরাডিমেট, প্যাডিমেট ও সুলিসোবেনজোন।
* এসেনশিয়াল অয়েল।
* রেটিনল।
* আলফা হাইড্রোক্সি এসিড। যেমন ল্যাকটিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড।
পশ্চিমা সৌন্দর্য বিশ্বে বেশ কিছু ব্র্যান্ড আছে, যারা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য নিরাপদ মেকআপ পণ্য তৈরি করে। এসব হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ পণ্য ডার্মাটোলজিস্ট ও চক্ষুবিশেষজ্ঞদের পরীক্ষিত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের অনুমোদিত এমন ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে—
১। ক্লিনিক
২। কালারসায়েন্স
৩। জেন আয়ারডেল
৪। টার্টে কসমেটিকস
৫। বার্ট’স বিজ
৬। ফিজিশিয়ান’স ফর্মুলা
৭। জর্জিও আরমানি
৮। নিউট্রিজিনা
৯। বেয়ারমিনারেলস
১০। ইয়াংব্লাড
১১। আলমাই
১২। গ্লো স্কিন বিউটি
১৩। ভিএমভি হাইপোঅ্যালার্জেনিকস
১৪। ট্রিশ ম্যাকেভয়
১৫। মার্সেল
১৬। টাওয়ার ২৮ বিউটি
সতর্কতা: সব পণ্য সব ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। ত্বকের বারোটা বাজাতে যেকোনো একটা উপাদানই যথেষ্ট। তাই হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ ব্যবহার করলেই যে সংবেদনশীল ত্বক নিরাপদ, তা খুব নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে, কোনো হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপের একটি নিরাপদ উপাদানের জন্য কারও ত্বকে বাজে প্রতিক্রিয়া হলো।
এ জন্য যেকোনো ত্বকেই কোনো পণ্য ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি। গলায় অন্য একটু মেকআপ লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ২৪ ঘণ্টা। এ সময়ের পর গলার ওই অংশে যদি কোনো রকমের লালচে ভাব, ফুসকুড়ি বা চুলকানি না হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে পণ্যটি একদম নিরাপদ।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও পেকজেলসডটকম