চুলে রুক্ষতা দেখা দিলে অনেকেই মনে করে থাকেন, এটি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তবে ভারতীয় চিকিৎসক ডা. পুরির মতামত অনুযায়ী, চুলের রুক্ষতা কখনোই স্বাস্থ্যঘটিত কোনো সমস্যা নয়। বেশির ভাগ সময়ই আবহাওয়ার তারতম্যে অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা শুষ্কতা, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট কিংবা তাপের ব্যবহারের কারণে ঘটে থাকে।
চুলের রুক্ষতার পুরোপুরিভাবে সমাধান করা সম্ভব না হলেও কিছু সাধারণ টিপস অনুসরণ করলে তা অনেকখানি কমে আসবে।
শুষ্ক আবহাওয়ায় চুল খুব দ্রুত তার আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। ত্বকে প্রচুর পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও অনেকেই চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনার কথা বেমালুম ভুলে যান। ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই শুষ্ক আবহাওয়ায় প্রতি এক-দুই সপ্তাহ অন্তর চুলে ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। ঘরে থাকা টক দই, ডিম, কলা ইত্যাদি দিয়ে সহজেই মাস্ক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া বাজারে পাওয়া মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় বিভিন্ন লিভ-ইন কন্ডিশনার বা সিরাম ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
যেহেতু চুলের নিচের অংশই চুলের সবচেয়ে পুরোনো অংশ, তাই স্প্লিট এন্ডের মতো সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এতে চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই প্রতি তিন মাস অন্তর চুলের নিচের অংশ সামান্য ছেঁটে নেওয়া উচিত। এতে চুল ভেঙে পড়ে পাতলা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার ঝক্কি পোহাতে হবে না। একই সঙ্গে চুলকে দেখাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
অনেকেই চুলে তেল দেওয়া এড়িয়ে চলেন। চুলে তেল দিয়ে বাইরে যাওয়ার ঝক্কি অনেকেই নিতে চান না। তবে চুলের বাহ্যিক যত্নে তেলের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের হাতের কাছেই যেকোনো মুদিদোকান ও সুপার শপে নারকেল তেল, বাদাম তেল ও অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। চুলের রুক্ষতা দূর করতে এগুলোর তুলনা হয় না। বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের হেয়ার অয়েলের পরিবর্তে ভালো মানের কোনো তেল কিনলে, পকেটেও চাপ কম ফেলবে আর চুলকেও প্রাণোজ্জ্বল রাখবে। এ ক্ষেত্রে হেয়ার পোরোসিটির ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে।
বাইরে হালকা ঠান্ডা পড়লেই অনেকে গরম পানি দিয়ে গোসল করা শুরু করেন। চুল ধোয়ার সময়ও একই তাপমাত্রার গরম পানি ব্যবহার করেন। গরম পানি চুলকে রুক্ষ করে দেয়। চুলে গরম পানির পরিবর্তে ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করা উচিত। চুল ধোয়া হয়ে গেলে একবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো। এতে চুল উজ্জ্বল দেখাবে। গোসলের পর খসখসে জমিনের তোয়ালে ব্যবহার না করে মাইক্রোফাইবার টাওয়েল দিয়ে চুল জড়িয়ে নেওয়া উচিত। মাইক্রোফাইবার টাওয়েল না থাকলে বাসায় থাকা যেকোনো টি-শার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। চুল তোয়ালে বা টি-শার্টে ঘষে ঘষে না মুছে চেপে চেপে পানি মুছে নিতে হবে। এরপর চুলে তোয়ালে বা টি-শার্ট কিছু সময় পেঁচিয়ে রাখা ভালো।
বাইরে থেকে রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণের জন্য যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি না জোগালে তার সবটাই বৃথা হয়ে যাবে। প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের ফলিকলগুলোকে পুষ্টি জোগায়। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ (বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ), পনির, টক দই ইত্যাদি খাবারে প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি থাকে। বিভিন্ন ধরনের ডালেও এই পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়। তবে উদ্ভিজ্জ খাবারের তুলনায় প্রাণিজ খাবারেই এই পুষ্টিগুলো বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারে একটি প্রাণিজ আমিষ যোগ করতে পারেন। এ ছাড়া চুলের রুক্ষতা এড়াতে বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার চুলের রুক্ষতা দূর করে। ডিম, বিভিন্ন ধরনের বাদাম-বীজ, মিষ্টি আলু, পালং শাক, মাছ-মাংসে বায়োটিন পাওয়া যায়।