ত্বক আর্দ্র বা হাইড্রেট রাখার প্রথম ধাপ হলো শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা। এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সবার দিনে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ওজনের উপর নির্ভর করে শরীরে আরও বেশি পানির প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার ত্বক যদি পানিশূন্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই পানি-ভিত্তিক স্কিনকেয়ার পণ্য যেমন, ক্লিনজার, টোনার, সিরাম, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। পানি-ভিত্তিক পণ্য ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে ত্বকে পানি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এ ধরণের পণ্য বাছতে হলে আমাদের হাইড্রেটিং উপাদানগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। বর্তমানে স্কিনকেয়ার পণ্যে ব্যবহার করা কিছু প্রচলিত হাইড্রেটিং এজেন্টের মধ্যে রয়েছে, হায়ালুরোনিক এসিড, গ্লিসারিন, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া ল্যাকটেট, সেরামাইডস, প্যান্থেনল ইত্যাদি।
দীর্ঘ সময় ধরে গোছল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এতে ত্বকের ব্যারিয়ার নষ্ট হবে। ব্যারিয়ার নষ্ট বা দুর্বল থাকলে ত্বকের পানি ও তেলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারাবে। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে সবার কুসুম গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট গোছল করা উচিত।
ত্বক অতিরিক্ত পানিশূন্য হয়ে গেলে রোজকার পানি-ভিত্তিক পণ্য ব্যবহারের পাশাপাশি একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। বাজারে এখন অনেক ধরণের হাইড্রেটিং মাস্ক কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া ঘরোয়াভাবেও প্রাকৃতিক উপাদান যেমন, অ্যালোভেরা, তরমুজ, পাকা আম, শসা ইত্যাদি দিয়ে মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন দিনের বেলায় অবশ্যই ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। এই গরমে রোদের তীব্রতা ত্বককে খুব সহজে পানিশূন্য করতে পারে। এছাড়া সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি তো আছেই ত্বকের বারোটা বাজাতে। এগুলোর জন্য ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ভেঙ্গে যায়। ফলে ত্বকে বয়স বাড়ার আগে বলিরেখা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ক্যাফেইনের ডাইরুটিক (মূত্রবর্ধক ) প্রভাব রয়েছে। তাই অতিরিক্ত কফি পান আপনার ত্বককে পানিশূন্য করে। আপনার ত্বকে পানিশূন্যতার সমস্যা হলে,দিনে দুই কাপের বেশি কফি পান করাকে না বলুন। অনেক ডার্মাটোলজিস্ট এক কাপ কফির বিপরীতে বাড়তি এক গ্লাস পানি পানেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আর্দ্রতার অভাবে ত্বকে মৃতকোষ জমে। এই মৃতকোষ দূর করতে নিয়মিত এক্সফোলিয়েটিং করা জরুরী। ৭ দিনে একবার কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েটিং ত্বকের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এতে ত্বকের ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে ত্বককে আরও বেশি পানিশূন্য বা আর্দ্রহীন করে ফেলে। তাই এই ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
গরমের দিন শুধুমাত্র রাতে ঘুমানোর আগে রূপ রুটিনের শেষধাপে একটি ভালো মানের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রাতে আমাদের ত্বকের উপরের স্তর থেকে পানি বা আর্দ্রতা ক্ষয় হয় যাকে ট্রান্সএপিডার্মাল ওয়াটার লস বলা হয়। ময়শ্চারাইজার এই ক্ষয় রোধে সহায়তা করে। ত্বকের ধরণ বুঝে এটি বাছাই করতে হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ভারী এবং মিশ্র ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা ধাঁচের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
পানিশূন্য ত্বকের যত্নে ডায়েটের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল রাখুন। এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় ও পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে পানিশূন্যতা কমবে এবং এর ফলে হওয়া ত্বকের সমস্যা কমে যাবে।
ছবি: সাইফুল ইসলাম ও পেকজেলসডটকম