ত্বকে বয়সের ছাপ রুখে দেবে এই সহজ ৫টি সমাধান
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে আমরা কত কিছুই না করি। দাগবিহীন সুন্দর টান টান ত্বক সবার পছন্দ। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেও আসতে থাকে পরিবর্তন। চামড়াকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা চলে, বিশেষ করে মুখের।
আসলে ত্বকের টান টান ভাব ধরে রাখে কোলাজেন নামের প্রোটিন। বয়স বাড়তে থাকলে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন কমে যায় আর ত্বক হারায় ইলাস্টিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা।

এদিকে কোষগুলোর প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে ত্বক শুষ্ক হতে থাকে। নতুন কোষ উৎপাদনও কমে যায় বলে চামড়ার স্তরগুলো পাতলা হতে থাকে। তাই আগের মতো ত্বক পেলব ও মসৃণ দেখায় না। মুখের হাড়, শিরাগুলো তখন বেশ দৃশ্যমান হতে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই তখন ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে থাকে। তবে চাইলেই একটু বিশেষ মনোযোগ দিয়ে যত্ন নিলে চামড়ার বুড়িয়ে যাওয়াকে মন্থর করে দেওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

বয়স বাড়লে মুখের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রকম রেখা বা ছোট ছোট ভাঁজ পড়তে দেখা যায়। শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যত্নের মাধ্যমে ত্বকের এসব রেখা ও ভাঁজের দৌরাত্ম্য কমানো যায়।

১. চোখের কোণে কাকের পা

বয়স বাড়ছে—এটা বোঝার প্রথম যে চিহ্ন চেহারায় পড়ে তা হলো, হাসলে চোখের কোণে কিছু রেখা দেখা যায়। চোখের বাইরের দিকের কোনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই রেখাগুলো একসঙ্গে দেখতে অনেকটা কাকের পায়ের মতো দেখায়। বয়স ৩০ হওয়ার পর থেকে ছোট ছোট রেখা চোখের কোণে দৃশ্যমান হতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে আরও বেশি বোঝা যায় তা। বংশগতি, ডায়েট, সূর্যের তাপ ও ভ্রু কুঁচকে তাকানোর অভ্যাস একে প্রভাবিত করে। সব সময় ভ্রু কুঁচকে তাকানোর অভ্যাস চামড়ায় ভাঁজ সৃষ্টি করে, যা ত্বকে বলিরেখা বাড়ায়।

সমাধান

এই ‘কাকের পা’ থেকে ত্বককে বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হলো ভিটামিন ই। ভিটামিন ই তেল, ক্রিম ও জেল হিসেবে বাজারে বেশ সহজলভ্য। আলতো হাতে জেল বা তেল ম্যাসাজ করে নিলে কোষগুলো দ্রুত তা শুষে নেয় এবং নিয়মিত ব্যবহারে কোষগুলোর ইলাস্টিসিটি বাড়ে। এ ছাড়া অ্যালোভেরাও এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ভিটামিন ই বা অ্যালোভেরার খনিজ উপাদান বছরের পর বছর ব্যবহার করলে চোখের পাশে এই কাকের পা, অর্থাৎ রেখাগুলো আর অতিরিক্ত গভীর হওয়ার সুযোগ পায় না।

বিজ্ঞাপন

২. বলিরেখা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের কোষগুলোর বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ত্বক ঢিলা হতে থাকে। সব সময় বেশি পানির স্পর্শ পেলে কোষের বন্ধনগুলোর স্থায়ীত্ব কমতে থাকে। কাপড় ধুলে বা বাসনকোসন বেশি সময় নিয়ে ধুলে দেখা যায় হাতের আঙুলের চামড়া কেমন কুঁচকে থাকে। যদিও সেগুলো কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত সাঁতার কাটলে মুখে এমন বলিরেখা তৈরি হয়। মুখের ত্বক অনেক বেশি নমনীয় হওয়ায় এ রেখাগুলো স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক বছর ধরে যেকোনো একপাশে কাত হয়ে শোয়া থেকেও মুখের একপাশে বলিরেখা তৈরি হতে পারে। কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের প্রোটিন উৎপাদন ব্যাহত হলে এমন হয়। ফলে ত্বক হারাতে থাকে তারুণ্য।

সমাধান

ধৈর্য নিয়ে বলিরেখা সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। উষ্ণ অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ও নারকেল তেল বলিরেখা দূরীকরণে হতে পারে আপনার ভালো বন্ধু। তেল হালকা গরম করে নিয়ে আলতোভাবে হাতে ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে ত্বকে।আর অবশ্যই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে বেশি তরল প্রয়োজন হয়। তাই যতটা সম্ভব পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।কলা, পেঁপে, অ্যাভোকেডো ফলের মাস্কও এ ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেবে।

৩. ত্বকের শুষ্কতা

তরুণ অবস্থায় ত্বকের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রাকৃতিক তেল নিঃসৃত হয়, যা ত্বকের সতেজতা ও চাকচিক্য ধরে রাখে। বয়ঃসন্ধিকালে এই তেল উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বকের পোরসগুলো বন্ধ হয়ে ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ ও পিম্পলসের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু বয়স বাড়লে এই তেল উৎপাদনও কমে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হতে থাকে। শুষ্ক অবস্থায় ত্বক বেশ স্পর্শকাতর থাকে।

সমাধান

ত্বককে শুষ্কতা থেকে রেহাই দেওয়া তেমন কঠিন কিছু নয়। তবে এ জন্য প্রতিদিন সময় দিতে হবে। সারা দিন হাইড্রেটেড থাকার কোনো বিকল্প নেই। ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে রোজ। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন। এটি সূর্যের তাপের ক্ষতি থেকে বাঁচাবে ত্বককে।এ ছাড়া মধু অথবা দুধের মাস্ক ত্বকে আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. ঝুলে যাওয়া ত্বক

কোষগুলোর বন্ধন দুর্বল হওয়া, কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিন কমে যাওয়ায় মূলত চামড়া ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। কোলাজেন আর ইলাস্টিন কমে গেলে কোষগুলো একসময় মরে যেতে থাকে। তখন ত্বকের তন্তুগুলো টান টান ভাব হারিয়ে ঝুলে পড়ে।

সমাধান

কোষগুলোকে কার্যকর রাখতে প্রয়োজন প্রোটিন। প্রোটিন খাওয়া যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রোটিন মাস্কও সাহায্য করবে। ডিমের সাদা অংশের মাস্ক এ ক্ষেত্রে বেশ প্রচলিত। এ ছাড়া এতে একটু টক দই যোগ করে নেওয়া যায়। যেহেতু একটা বয়সে এসে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন কমে যায়, তাই ত্বকের যত্নে এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করতে হবে।

৫. দাগছোপ

মেলানিন নামের উপাদান ত্বকের রং গাঢ় করে। এই মেলানিন তৈরি হয় মেলানোসাইট থেকে, যা থাকে ত্বকের সর্বনিম্ন স্তরে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলানোসাইট বেশি কার্যকর হয়ে এই মেলানিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বকে কালচে দাগছোপ পড়তে থাকে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিও এমন বয়সজনিত দাগছোপ ত্বরান্বিত করে।

সমাধান

সানস্ক্রিনের আগে ভিটামিন সি–জাতীয় কিছু মুখে ব্যবহার করে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বেশি ঘামলে সানস্ক্রিন কার্যকারিতা হারায়। তাই পুনর্ব্যবহারের ধৈর্য রাখতে হবে।

ছবি: হলা ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ০২: ০০
বিজ্ঞাপন