ত্বকের মতো চুলও আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারী-পুরুষ সবার ত্বক পরিচর্যার সঙ্গে সঙ্গে চুলের প্রতিও বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চুলের যত্নের ওপরই চুলের সৌন্দর্য, চুল ঝরে পড়া, নতুন চুল গজানো ইত্যাদি অনেকাংশে নির্ভর করে।
অনেকেই চুলের যত্নে নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে থাকেন। আবার অনেকেই ভুলভাবে চুল ধুয়ে থাকেন, যা চুলকে আরও নিষ্প্রাণ করে দেয়। তবে নিয়মিত ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া সবার জন্য ঠিক নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার মাথার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সপ্তাহে কতবার চুল ধোবেন, তা নির্ধারণ করা জরুরি।
আমাদের মাথার ত্বকে ‘সিবাম’ নামে একধরনের প্রাকৃতিক তেল তৈরি হয়। এটি নিজে থেকেই চুলের গোড়ায় উৎপন্ন হয়, যা চুলকে স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিকভাবে ঝলমলে রাখে। এই প্রাকৃতিক তেল যদি আপনি নিয়মিত ধুয়ে ফেলেন, তবে চুল নিষ্প্রাণ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজন না হলে প্রতিদিন চুল ধোয়া একেবারেই অনুচিত।
চুলের ধরনের ভিন্নতার ওপরও চুল ধোয়া নির্ভর করে। কোঁকড়া বা ঢেউ খেলানো চুলের চেয়ে সোজা ও পাতলা চুল তুলনামূলকভাবে বেশি ধোয়া প্রয়োজন। সোজা চুলের অধিকারীদের একদিন পরপরই চুল ধোয়া উচিত। কেননা, সোজা চুল দ্রুত তৈলাক্ত হয় বা সহজেই সিবামে ভরে যায়। অন্যদিকে কোঁকড়া চুল সাধারণত সোজা চুলের চেয়ে বেশি শুষ্ক হয়ে থাকে। কারণ, কোঁকড়া চুলকে তেল সহজে আবৃত করতে পারে না। প্রাকৃতিক সিবাম কোঁকড়া চুল নরম রাখতে সাহায্য করে। তাই কোঁকড়া চুলের অধিকারীদের সপ্তাহে এক অথবা দুইবারের বেশি চুল ধোয়া উচিত নয়। আবার ওয়েভি বা ঢেউ খেলানো চুল সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ধুয়ে নিলেই যথেষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল কত ঘন ঘন ধোয়া উচিত তা অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে আপনার জীবনযাত্রার ওপর। আপনি যদি সারা দিন ধুলাবালু ও দূষণের মধ্যে থাকেন, তবে প্রতিদিন চুল ধোয়াই আপনার জন্য উপযুক্ত। আবার কেউ যদি প্রচুর ঘামে, তাকেও ঘন ঘন চুল ধুতে হতে পারে। ঘাম, ধুলাবালু ও ময়লার কারণে চুলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এ জন্য ব্যায়াম করার পরে এবং অতিরিক্ত ঘেমে গেলে চুল ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমরা চুলে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যপণ্য লাগিয়ে থাকি স্টাইলের জন্য। সে ক্ষেত্রে কাজ শেষ হলেই চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এগুলো বেশিক্ষণ চুলে লেগে থাকলে চুলের ক্ষতি হতে পারে।
অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত ঘন ঘন চুল ধোয়া ও শ্যাম্পু করা চুলের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কখনো কখনো এটি মাথার ত্বকে চুলকানি বা শুষ্কতার সমস্যা সৃষ্টি করে। এ কারণে চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যেতে থাকে এবং রুক্ষ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি প্রতিদিন বাইরে যান বা ধুলামাটির সংস্পর্শে আসেন, তবেই প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা যেতে পারে। তবে শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল লাগিয়ে তারপর শ্যাম্পু করা উচিত। শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভেষজ বা মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।
তথ্যসূত্র: ফেমিনা