সুন্দর ও নিখুঁত ত্বকের জন্য কোরিয়ান খাবার ও তার দেশি বিকল্প
শেয়ার করুন
ফলো করুন

উজ্জ্বল, দাগবিহীন ত্বক আমাদের সবার কাছেই খুব আরাধ্য। তাই নানাভাবে বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা বা ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারের চল আমাদের দেশে বরাবরই চলে আসছে। আর এ যাত্রায় নতুন আর যুগান্তকারী সংযোজন কোরিয়ান স্কিন কেয়ার। কোরিয়ানদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের রূপচর্চার সামগ্রীও বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে দেশজুড়ে হিড়িক পড়েছে হাজার হাজার টাকার কোরিয়ান স্কিন কেয়ার পণ্য কিনে নিজেদের ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর করতে ব্রতী হওয়ার। তবে দামি দামি টোনার, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, অ্যান্টি–অ্যাজিং ক্রিমের পেছনে টাকা খরচ করতে করতে আমরা ভুলেই গিয়েছি যে শুধু বাইরে থেকে নয়, ত্বক সুন্দর করতে ভেতর থেকেও পুষ্টির দরকার হয়।

কোরিয়ানদের মতো সুন্দর ত্বক পেতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরি করতে পারি বা না পারি, আমাদের দৈনিক খাদ্যাভ্যাসে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর কিছু ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান খাবার বা তার সহজলভ্য দেশি বিকল্পের সংযোজন ঘটিয়ে আমরা খুব সহজে কোরিয়ানদের মতো সুন্দর ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি।

কিমচি

কোরিয়ানদের মধ্যে সব খাবারের সঙ্গে কিমচি খাওয়ার চল দেখা যায়। বাঁধাকপির সঙ্গে বিভিন্ন মসলা ও প্রচুর পরিমাণে মরিচ ও রসুনবাটা মিশিয়ে মাসভর রেখে দিয়ে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিমচি তৈরি করা হয়। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও সেলেনিয়াম।

এ ক্ষেত্রে কিমচির বিকল্প হতে পারে টক দই ও বিভিন্ন ধরনের আচার। টক দইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও বি১২, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি। এ ছাড়া টক দইয়ে আছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য বা গাট হেলথের জন্য উপকারী। এ ছাড়া টক দইয়ে উপস্থিত সেলেনিয়াম ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

পিকল করা রসুন

পিকলড রসুনের সহজ একটি বিকল্প আমাদের ঘরে বানানো রসুনের আচার, রসুনের চাটনি ও রসুনের ভর্তা। রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, যা কোলাজেনের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ত্বকে কোলাজেনের উপস্থিতির জন্য আমাদের ত্বক টান টান ও নমনীয় থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহে কোলাজেন তৈরির পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায় আর চামড়া ঝুলে পড়ে। রসুন কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। তবে রসুনের বিবিধ গুণের সুবিধা পেতে প্রচুর পরিমাণে রসুন খেতে হবে। সাধারণত প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে রসুনের আচার বা চাটনি খেলে এ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। অথবা প্রতিদিনের খাবারে রেসিপি অনুযায়ী যতটুকু রসুন দরকার, তার দ্বিগুণ রসুন দিয়েও দৈনন্দিন খাবারে রসুনের পরিমাণ বাড়ানো যায়।

সয়াবিন স্যুপ

কোরিয়ানদের প্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন ধরনের স্যুপ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে মিসো স্যুপ আর সয়াবিন স্যুপ বিশেষভাবে জনপ্রিয় সেখানে। সয়াবিনে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ই আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য করে।
সয়াবিন স্যুপের বদলে আমাদের বাজারে যে সয়া চাংকস পাওয়া যায়, তা খাবারে যোগ করতে পারেন। নানাভাবে সয়া চাংকস রান্না করা যায়। তোফুও খাওয়া যায়।

বোন ব্রথ বা হাঁড়ের সুপ

ত্বকের কোলাজেন বাড়াতে বোন ব্রথের জুড়ি মেলা ভার। তবে অনেকেই এর স্বাদ পছন্দ করেন না। এ ক্ষেত্রে বোন ব্রথের বিকল্প হতে পারে ডিমের সাদা অংশ, সবুজ শাক, ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার ও টমেটো। এর প্রতিটি খাবারই কোলাজেনের ভালো উৎস।একটা মাঝারি আকারের টমেটোতে প্রতিদিনের কোলাজেন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ৩০ শতাংশ পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারে ডিম, টমেটো ও নানা ধরনের ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার যোগ করে দেহে কোলাজেন তৈরির হার বাড়াতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

বার্লির চা

সুন্দর ত্বকের জন্য কোরিয়ানদের মধ্যে বার্লির চায়ের বেশ কদর। হুবহু গুণাবলি না মিললেও এর একটি কাছাকাছি বিকল্প গ্রিন টি। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গরম পানিতে লেবু, মধু ও সামান্য হলুদ দিয়ে খাওয়াও উপকারী। হলুদে থাকা কারকিউমিন ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ দেখতে আলাদা হয়। এর কারণ ভৌগোলিক অবস্থান ও বংশগতি। কোরিয়ানদের মসৃণ আর বয়সের ছাপবিহীন ত্বকের পেছনে খাদ্যাভ্যাস বা রূপচর্চা ছাড়াও অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে তাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। তাই অন্ধভাবে কোরিয়ানদের মতো ত্বক কামনা করাটা বোকামি। তবে কোরিয়ানদের মতো নিজেদের খাদ্যাভ্যাস, রূপচর্চা ও জীবনযাপনের দিকে লক্ষ্য রাখলে আমরা উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক পেতে পারি এবং বয়সের ছাপকে ধীরেসুস্থে ও সৌন্দর্যপূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারি।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০২: ০০
বিজ্ঞাপন