চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নেশা…প্রিয়ার দীঘল কেশরাজির মাঝে না হারিয়ে উপায় নেই। পথ চলতে চকিতে যদি চোখে পড়ে লম্বা চুলের ঢেউ, ফিরে তাকাতে বাধ্য হয় চোখ আর মন। কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘবরণ কেশ—লম্বা চুলের আবেদন চিরকালের। চুল লম্বা করতে কত কিছুই না করি আমরা। বিভিন্ন রকমের তেল, বিশেষায়িত শ্যাম্পু আর হেয়ার সিরামের মতো কেশচর্চার উপকরণের পেছনে দেদার অর্থ খরচ করলেও লাভ হবে না, যদি ভেতর থেকে স্বাস্থ্যবান না হয় চুল।
সুস্থ আর নিয়মিত পুষ্টি পেলে তবেই চুল বাড়বে। আর প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। আর হেয়ারকেয়ার পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা না দিয়ে এবারে এই বিজ্ঞানসম্মত নিয়মগুলো দেখে নেওয়া যাক।
মজার এক তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। জন্মের সময় আমরা চুলের যতগুলো ফলিকল নিয়ে জন্মাই, সেগুলো থেকেই চুল গজায় আমাদের জীবনভর। এই সংখ্যা গবেষণার ফলাফলভেদে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার হয়। আবার দিনে ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়তে পারে।
ফলিকলের শেষ প্রান্তে, মাথার ত্বকের নিচে চুলের গোড়া থাকে। এ থেকেই চুল গজায়। মাথার ত্বক-সংলগ্ন রক্তনালিগুলো ফলিকলে অক্সিজেন সরবরাহ করে আর চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। আর এভাবেই চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। চুল গজানোর সময় তা ত্বক ভেদ করে তেলগ্রন্থি পেরিয়ে যায়। এই গ্রন্থিতে থাকা তেলই চুলকে উজ্জ্বল আর মসৃণ করে। তবে বাইরে ও ভেতর থেকে চুলের যত্নে ধৈর্য ধরে কিছু উপায় অবলম্বন করলে প্রাকৃতিকভাবেই চুল লম্বা হবে।
চরম কোনো ডায়েট শুরু করলে চর্বি ঝরার আগে চুল ঝরা শুরু হয়। এতেই বোঝা যায়, নিয়মিত সুষম খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য কত প্রয়োজনীয়। চুলের বৃদ্ধি কমে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে একসময় চুল পড়া শুরু হয় উল্টোপাল্টা ডায়েট করলে। ভিটামিন বি, যেমন নিয়াসিন কমতে থাকলে চুল রুক্ষ হয়ে ওঠে। ক্যালরি কমাতে গিয়ে খাদ্যে পুষ্টির ঘাটতি হলে হিতে বিপরীত হয় তাই।
চুল স্বাস্থ্যবান রাখতে ও চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমিষের বিকল্প নেই। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আমিষজাতীয় খাবারের ঘাটতি থাকলে চুল জেল্লা হারাবে। বাড়বে তো না-ই, বরং ঝরতে শুরু করবে।
গবেষণায় দেখা গেছে চা বা কফি দিয়ে নিয়মিত কেশচর্চায় ভালো ফল মেলে। শরীরে যেমন চনমনে ভাব জাগায় ক্যাফিন, তেমনি তা চুলকেও প্রাণবন্ত করতে পারে। এ জন্য শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারে চা-কফি থাকলে তা ব্যবহার করে দেখা যায় নিঃসন্দেহে।
এসেনশিয়াল অয়েল বা নির্যাসিত তেল শুধু সুগন্ধ আর শান্তির অনুভূতিই দেয় না। চুলের যত্নে কোনো কোনো এসেনশিয়াল অয়েল খুবই ভালো। গবেষণা বলে, কুমড়াবীজের তেল তিন মাস ধরে ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি ঘটার উদাহরণ রয়েছে অনেক। এ নিয়ে অবশ্য আরও গবেষণা হওয়া উচিত। রোজমেরির তেলও চুলের যত্নে কার্যকর। আবার সাম্প্রতিক আরেক পরীক্ষায় জোজোবা তেল, পুদিনার তেল আর ল্যাভেন্ডার তেলের চুল লম্বা করতে সহায়ক গুণের কথা জানা যায়।
কিছু বিশেষ ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে চুলের বৃদ্ধিতে। এর মধ্যে রয়েছে বায়োটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, জিঙ্ক, আয়রন, ওমেগা থ্রি আর ওমেগা সিক্স ইত্যাদি। আবার অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ফোলেটের অভাবে চুল বাড়ে না।