২০২৪ সালের স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে ভাইরাল হয়েছে যেসব সৌন্দর্য উপকরণ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সৌন্দর্য বর্ধনে যে প্রসাধনী আমরা নিত্যদিন ব্যবহার করছি, সেগুলোর একেকটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে একেক ধরনের উপকরণ। ভিটামিন বি৩ থেকে শুরু করে ক্যাফেইন পর্যন্ত সৌন্দর্যপণ্যের বাজার দখল করে নিয়েছে নানা উপাদান। এসব উপাদানের মধ্যে বেশ কয়েকটির ব্যবহার নজর কেড়েছে আলাদাভাবেই। ২০২৪ সাল জুড়ে কোন বিউটি ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো সৌন্দর্যচর্চায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক এবারে।

১) নিয়াসিনামাইড

২০২৪ সালের পুরোটা জুড়ে সৌন্দর্য উপকরণের তালিকায় শীর্ষে ছিল ভিটামিন বি৩, যাকে অনেকেই নিয়াসিনামাইড বা নিকোটিনামাইড নামে চিনে। এটি ভিটামিন বি৩ এর সক্রিয় একটি ফর্ম। বেশি বয়সের ত্বক থেকে শুরু করে অ্যাকনের জন্য প্রোডাক্ট তৈরিতে এই উপাদানের ব্যবহার দেখা গিয়েছে লক্ষণীয়ভাবে।
এই উপাদানটি ত্বকের বাড়তি তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, দাগছোপ ও বয়সের ছাপ কমায়, বাড়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা। একইসঙ্গে এটি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি। ত্বকের পানিধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতেও খুব ভালো কাজ করে নিয়াসিনামাইড।

২) রেটিনল

২০২৪ সালের আরও একটি জনপ্রিয় উপকরণ ছিল রেটিনল। রেটিনল মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বককে টার্গেট করে ব্যবহার করা হয় প্রসাধনীতে। সরাসরি রেটিনল সব ত্বকের জন্য সঠিক নাও হতে পারে, যার কারণে প্রতিক্রিয়া হওয়ার সুযোগ থাকে। এজন্য বেশিরভাগ সময়েই রেটিনলের প্রাকৃতিক বিকল্প খোঁজা হয় যেটা আরও বেশি স্থায়ী ও ত্বকের জন্য বেশি ভালো। বুকিচল হচ্ছে জনপ্রিয় সেই ন্যাচারাল রেটিনল বিকল্প, যেটা সহজে পাওয়া যায় এবং বেশ জনপ্রিয়। এটা রেটিনলের মতোই কোষ বাড়ায়, কোলাজেন উৎপাদন করে আর ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমায়।

৩) সামুদ্রিক শৈবাল

উদ্ভিজ্জ ভিটামিন জাতীয় উপকরণের  মধ্যে ২০২৪ সালের ট্রেন্ডে উল্লেখযোগ্য  ছিল শৈবাল। সম্প্রতি শুরু হওয়া 'ব্লু বিউটি' মুভমেন্টে শৈবালকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সূত্র হিসেবে চমৎকারভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যা একইসাথে ত্বক ও পরিবেশের জন্য উপকারী ভূমিকা রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

৪) অ্যাস্টাজ্যানথিন

২০২৪ সালের ট্রেন্ডিং তালিকায় আরও একটি নাম হচ্ছে অ্যাসটাজ্যানথিন Astaxanthin। সামুদ্রিক এই উপাদানটি দেখতে লালচে কমলা। ভিটামিন সি এর চেয়েও এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক বেশি হওয়ায় এটি ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ, হাইপারপিগমেন্টেশন ও ভাঁজ পড়া কমায় এবং একইসঙ্গে কোলাজেন তৈরি হওয়ার পদ্ধতি সুরক্ষিত রাখে। আর এসব কারণে ত্বক বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে।

৫) কালোজিরার তেল

প্ল্যান্ট অয়েলের কথা যদি বলা হয়, তাহলে বছরজুড়ে প্রাধান্য ছিল কালোজিরার তেলের। এই তেল বুঝিয়েছে, সৌন্দর্য বাড়াতে সব সময় দামি উপকরণ জরুরি নয়। এই ধরনের বোটানিক্যাল অয়েলের সুবিধা হচ্ছে, এগুলো ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার করা পণ্যে এই তেল সহজেই মিশিয়ে নেয়া যায়। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ব্রণযুক্ত ত্বক বা জ্বালাপোড়া করে এমন ত্বকের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। এতে প্রচুর পরিমাণে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ আছে, যা ত্বককে কোমল রাখতে, স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখতে, ফ্রি রেডিক্যালজনিত ক্ষতি কমাতে, ত্বক আগে আগে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ  করতে খুব ভালো কাজ করে।

৬) ন্যাচারাল পেপটাইডস

বিউটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে বর্তমানে বেশ হাইপে আছে ন্যাচারাল পেপটাইডস। বেশি বয়সী ত্বকের জন্য এটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। পেপটাইডস হচ্ছে অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংক্ষিপ্ত চেইন যা জীবদেহে পাওয়া যায়। আর্দ্রতা হারানো রুখতে, বলিরেখা পড়া থেকে বাঁচাতে, ক্ষতিগ্রস্ত চুলের উজ্জ্বলতা ফেরাতে ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে এটি খুব ভালো কাজ করে।

৭) একটোয়েন

অণুজীব থেকে নির্যাসিত একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড হচ্ছে একটোয়েন। এটির নাম কিছুটা কম পরিচিত হলেও স্কিনকেয়ার পণ্যের কার্যকারিতায় এটির পারফরম্যান্স বেশ ভালো দেখা গিয়েছে এ বছর। এই প্রাকৃতিক যৌগটি একক ব্যাকটেরিয়া কোষ থেকে তৈরি হয়, যা ক্ষতিকর পরিবেশে থাকা অণুজীবকে সুরক্ষিত রাখে। এতে আছে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাক্ষার ক্ষমতা। এটির ব্যবহারে স্কিন ব্যারিয়ার শক্তিশালী হয় বলে ত্বকের মাধ্যমে আর্দ্রতা কম হারায়, ত্বকের রং সব জায়গায় সমান হয়। সেই সঙ্গে এটি প্রদাহরোধী।

বিজ্ঞাপন

৮) মাশরুমের নির্যাস

বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে মাশরুমের চমৎকার কিছু ভূমিকা দেখা গিয়েছে এ বছর। এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুণ, যা ফাইন লাইনস, বলিরেখা হ্রাস করে এবং ত্বকের রঙের সমতা রক্ষা করে। হাই পলিস্যাকারাইড থাকার কারণে মাশরুমের ময়েশ্চারাইজ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। একে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। মাশরুমে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যেমন আছে, তেমনই ত্বক উজ্জ্বল করার ক্ষমতা ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ আছে। স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার পণ্যের ক্ষেত্রে মাশরুমের নির্যাস এখন বেশ জনপ্রিয়।  

৯) সেরামাইডস

স্কিন হাইড্রেটেড রাখার জন্য সেরামাইডের কার্যকারিতা অনেক বেশি। ত্বকের আর্দ্রতা হারানো কমাতে এর জুড়ি মেলা ভার। স্কিনের হাইড্রেশন যেমন বাড়ায়, তেমনই স্কিন ব্যারিয়ার ঠিক রাখে এটি। সেরামাইড হেয়ারকেয়ার ফর্মুলেশনেও ব্যবহার করা হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং চুলকে সুরক্ষিত রাখে।

১০) ক্যাফেইন

ক্যাফেইনের নাম শুনলেই কি কফির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে? এটি কিন্তু রূপচর্চার অ্যাকটিভ উপকরণ হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং ত্বক ও চুলের যত্নে খুবই উপকারী। ক্যাফেইন ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে এবং স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখে।  ত্বকের মাইক্রো সার্কুলেশন বাড়াতে কসমেটিকসে ক্যাফেইন নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ভূমিকা চোখের নিচের ফোলা ভাব ও ডার্ক সার্কেল কমায়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ইউভি রেডিয়েশন থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

হিরো ইমেজ: মানিক ওঝা

মডেল: আফরিন

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮: ২২
বিজ্ঞাপন