পৃথিবীর সব শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য না থাকলে কোনো জীব এই ধরাধামে টিকে থাকতে পারত না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বকের প্রধান শত্রুও কিন্তু এই সূর্য। প্রতিদিন আমাদের ত্বক দুই ধরনের সূর্যরশ্মির মুখোমুখি হয়। ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি। ইউভি-এ রশ্মি ত্বকের ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করে বিশেষ প্রোটিন কোলাজেনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যার ফলে বলিরেখা, ফাইন লাইনের মতো সমস্যা দেয়া। অর্থাৎ ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যায়। এদিকে ইউভি-বি রশ্মি সানবার্ন বা পোড়াত্বকের জন্য দায়ী। এই রশ্মির জন্য ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালো দাগ হয়ে থাকে। এই দুই রশ্মিই ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি ত্বকের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাই সানস্ক্রিন কেনার আগে দেখতে হবে, এই দুই রশ্মি থেকে কতটা সুরক্ষা দেয়।
সানস্ক্রিনের গায়ে এসপিএফ ৩০ বা ৫০ এমন লেখা থাকে। এই এসপিএফ ত্বককে ইউভি-বি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। ইউভি-এ রশ্মির সুরক্ষা নিশ্চিত করে পিএ+, পিএ++, বা পিএ+++ অথবা ব্রড স্পেকট্রাম।
সানস্ক্রিন দুই রকমের হয়ে থাকে। কেমিক্যাল ব্লকিং ও ফিজিক্যাল বা মিনারেল ব্লকিং। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনগুলো প্রথমে ইউভি রশ্মিকে ত্বকে শোষণ করে নেয় ও পরে ছেড়ে দেয়। এই ধরনের পণ্যের প্রধান একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো অ্যাভোবেনজন, অক্সিবেনজন, অক্টিসালেট, অক্টোক্রাইলিন, হোমোসালেট ও অক্টিনোক্সেট। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ত্বকের ওপর বসে থাকে আর ইউভি রশ্মিকে প্রতিফলিত করে। এর প্রধান উপাদান জিংক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড।
এছাড়া আরও আছে মিক্সড সানস্ক্রিন। এতে কেমিক্যাল ও মিনারেল সানস্ক্রিনের উপাদানগুলো একসঙ্গে ফর্মুলেট করা থাকে। বর্তমানে এই ধরনের সানস্ক্রিনের জনপ্রিয়তা অনেক।
সব সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। সানস্ক্রিনও ত্বক বুঝে বাছাই করা উচিত।
তৈলাক্ত ত্বকের মানুষেরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েন। কারণ, এটি ব্যবহারের পর ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই তৈলাক্ত ত্বকে জেল ও ম্যাটিফাইং সোয়েট-প্রুফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। ক্রিম সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চাইলে অয়েল-ফ্রি ফর্মুলা বেছে নিতে হবে।
যাঁদের ত্বক ব্রণপ্রবণ তাঁরা অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চান না। সানস্ক্রিন লাগানোর পর ত্বকে ব্রণ বেশি দেখা দেয়। ব্রণপ্রবণ ত্বকে অয়েল-ফ্রি ফর্মুলার, নন-কমেডোজেনিক মিনারেল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও মিনারেল অর্থাৎ জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড–সমৃদ্ধ, সুগন্ধমুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার উচিত। তবে বাজারে এখন নতুন প্রজন্মের কিছু মিক্সড সানস্ক্রিন পাওয়া যায়, যা ব্রণপ্রবণ ও সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার উপযোগী। কেউ যদি সংবেদনশীল বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের চিকিৎসার জন্য ডক্সিসাইক্লিন, অ্যাকুটেন বা ট্রেটিনোইন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সানস্ক্রিন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকবে হবে। কারণ, এই ধরনের টপিক্যাল চিকিৎসার জন্য ত্বক ফটোসেনসেটিভ বা আলোর প্রতি সংবেদশীল হয়ে পড়ে।
শুষ্ক ত্বকে কেমিক্যাল বা মিক্সড সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে। এই ক্ষেত্রে সেরামাইড, হায়ালুরোনিক এসিড, পেপটাইড আছে কিনা, দেখে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো ত্বক আর্দ্র রাখে।
বছরের ৩৬৫ দিনই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। শুধু বাইরে বের হলেই নয়, ঘরের ভেতরও এটি ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত দুই বা তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহার করতে হয়। কারণ, ব্র্যান্ডভেদে সানস্ক্রিনের কার্যক্ষমতা দুই বা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।অনেকেই সানস্ক্রিন একবার দেওয়ার পর পুনরায় ব্যবহার করতে চান না। কারণ, এতে মেকআপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এখন সানস্টিক বা ফেসপাউডার ফর্মে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে খুব সহজে সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই বা পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম