চুলের জন্য ঘরোয়া রূপচর্চার পদ্ধতিতে একটা বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে হট অয়েল ম্যাসাজ। এখন তাই সময় পেলে বিউটি স্যালনে গিয়ে স্ক্যাল্প ম্যাসাজের আরামে ডুবে যেতে ভালোবাসছেন এ প্রজন্মের নারীরা। মাথার ত্বক, অর্থাৎ স্ক্যাল্প ম্যাসাজ নিলে আপনার মন যেমন মুহূর্তে শান্ত হয়ে যাবে, স্ট্রেসের মাত্রাও তেমনি অনেকটা কমে যাবে। স্ক্যাল্প ম্যাসাজ সেরোটোনিনের ক্ষরণ বাড়ায় বলে মনে করা হয়।
এটি একটি বিশেষ কেমিক্যাল নিউরোট্রান্সমিটার, যা মন-মেজাজ হালকা রাখতে সহায়ক। আর চুল পড়া বন্ধ হলে মন-মেজাজ এমনিতেই ভালো হতে বাধ্য। যাঁরা দিনভর কম্পিউটার আর স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে রাখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথা সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। মানসিক চাপ আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও হরমোনের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। হরমোনের এ পরিবর্তনের ফলে চুল ঝরে যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে চুলে তেল মালিশ করা হতে পারে ভালো সমাধান।
অনেকেই তেল ম্যাসাজের সময় চুলে তেল মাখেন। সেটা না করে স্ক্যাল্পে সরাসরি তেল লাগানো উচিত। কারণ, চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছায় স্ক্যাল্প থেকে। এ জন্য সপ্তাহে একবার তেল ম্যাসাজ মাথার ত্বক, অর্থাৎ স্ক্যাল্প আর্দ্র থাকতে সাহায্য করে। অয়েল ম্যাসাজের ফলে স্ক্যাল্প থেকে মৃত কোষ উঠে যায়, যা চুলের জন্য ভালো। আর স্ক্যাল্প শুষ্ক হলে বা তাতে আঁশের মতো মৃত কোষ থাকলে চুল ওঠার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। চুলের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। এর অন্যতম সমাধান স্ক্যাল্প ম্যাসাজ। এটি মাথার ত্বকে ও চুলের গোড়ায় রক্ত সংবহন বাড়িয়ে তোলে। আর চুলের ফলিকলে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি মানে আরও সুস্থ ও ঝলমলে চুল।
ম্যাসাজের ফলে স্ক্যাল্পের নিচে যে সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরা রয়েছে, সেগুলো প্রসারিত হয় আর হেয়ার ফলিকলে রক্তের সংবহন বাড়ে। এতে করে স্বাভাবিকভাবে চুলের বৃদ্ধি বেশি হয়। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খাঁটি নারকেল তেল, বিশেষ করে ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের বিকল্প নেই। চুলে ও মাথার ত্বকে আর্দ্রতা পৌঁছে দেওয়াই শুধু নয়, নারকেল তেল চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া অলিভ অয়েল কিংবা ক্যাস্টর অয়েলও বেশ উপকারী। অনেকেই জানেন না যে ভেজা অবস্থায় চুল সবচেয়ে ভঙ্গুর থাকে। তাই আগে অয়েল ম্যাসাজ করলে শ্যাম্পুর সময় চুল বেশি ঘষতে হবে না। ফলে চুল ভেঙে ঝরে যাওয়ার পরিমাণ কমবে।
১৫ মিনিটের হালকা ম্যাসাজই সারা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে সাহায্য করবে। তাই রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে ও ঘুম না হলে শুতে যাওয়ার আগে একটা স্ক্যাল্প ম্যাসাজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। প্রতি রাতে এমন ম্যাসাজ নিলে ঘুম যে আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সেই সঙ্গে যাঁরা খুব ক্লান্ত থাকেন, তাঁদেরও বাড়তি এনার্জি জোগাবে এই স্ক্যাল্প ম্যাসাজ।
খেয়াল রাখতে হবে যেন ম্যাসাজের সময় ত্বকে নখ না লাগে। মাথার ত্বকে নখের আঁচড় লাগলে কেটে গিয়ে জ্বালা করতে পারে, ত্বক চিড়বিড় করতে পারে এবং আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আঙুলের ডগার নরম অংশ দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে এবং পছন্দমতো চাপ বাড়াতে কিংবা কমাতে হবে। আর এলোপাতাড়ি ম্যাসাজ করে চুলে যেন জট না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ এল ম্যাগাজিন
ছবিঃ পেকজেলস ডটকম