মেকআপ কথাটির অর্থই আসলে কেমন যেন। আক্ষরিক অর্থে মেকআপ মানে কমতিগুলোকে পূরণ করা। অথচ সত্যিকার অর্থে মেকআপের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সুন্দর রূপে উপস্থাপন। আর এখন এ ক্ষেত্রে মিনিমালিস্ট মেকআপ আর ‘নো মেকআপ মেকআপ’–এর মতো ট্রেন্ডই তুঙ্গে। তবে ত্বকবিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মেকআপ এক্সপার্ট—সবাই এখন ভেতর থেকে ত্বকের জেল্লা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে বলছেন সবাইকে।
স্কিন ফাস্টিং বা কোয়ায়েট কুইটিংয়ের মতো স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড এখন ট্রেন্ডিং। কারণ একটাই। করোনা মহামারির পর থেকেই সাধারণ অর্থে সাজপোশাকের বাহুল্যের প্রতি কোথাও না কোথাও বিরাগ জন্মেছে মানুষের। আর সেই সঙ্গে সচেতনতা বেড়েছে নিজেকে ভেতর ও বাইরে থেকে সুস্থ রাখার প্রতি। তাই অতিরিক্ত মেকআপ ছাড়াই লাইফস্টাইলের পরিবর্তন করে চেহারার উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন সবাই।
মেকআপ করা রূপচর্চার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নানা রং–ঢঙে নিজেকে সাজানোর আছে হাজারও কায়দা। আর এটি দোষেরও কিছু নয়। বরং নিজেকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার পন্থা মেকআপ। তবে অতিরিক্ত মেকআপ পণ্য ব্যবহারের সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর প্রক্রিয়া এড়িয়ে নিজের ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর করতে চাইলে জীবনের প্রতিটি ধাপেই নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ। আর তা কঠিন নয় মোটেই।
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
আমরা যা খাই বা খাই না, তা সরাসরি আমাদের ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে। পুষ্টিকর ডায়েট আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তোলে। আবার কোনো একটি খাদ্য উপাদানের অভাবে চেহারায় নিষ্প্রাণভাব আসতে পারে। ফল আর সবজি খেতে হবে প্রচুর। আবার সব তেলই খারাপ নয়। খাবারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড না থাকলে দ্রুত বুড়িয়ে যাবে ত্বক। ফ্ল্যাক্স সিডস, আখরোট ইত্যাদি খেলে ভালো। আবার আমিষের ঘাটতি হলেও চলবে না।
২. প্রচুর পানি পান করুন
পানি পানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যত বলা যায়, ততই কম হবে। আমাদের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি দরকার। শরীরকে ভেতর থেকে ডিটক্স করা আর হজম ভালো রাখার মতো কাজ করে পানি। ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে শুধু ময়েশ্চারাইজার দিলে হবে না। পানি পান করতে হবে সারা দিন। দিনে আট বা ততোধিক গ্লাস পানি পান করা জরুরি প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও জন্য।
৩. পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম
রাতে ঠিক সময় ঘুমাতে যাওয়া আর ভোরে ওঠা শুধু স্বাস্থ্য নয়, ত্বকও ভালো রাখে। এতে শরীরের বিপাকীয় কাজগুলো ভালোভাবে হয়, টক্সিনমুক্ত হয় শরীর। ক্লান্ত চেহারায় যতই মেকআপ করা হোক, তা ম্লানই লাগবে। চোখের নিচের কালি, চেহারার বসে যাওয়া বা ফোলাভাব—সবই অনিদ্রার কুফল৷ ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম খুব দরকার তাই। আর তা–ও সঠিক সময়ে। এ জন্যই নিশ্চিন্ত নিয়মিত ঘুমকে বিউটি স্লিপ বলা হয় সৌন্দর্যজগতে।
৪. মুখে যা মাখছেন, জেনে-বুঝে মাখুন
আমরা এখন এক ধরনের তথ্যসমুদ্রে ভাসছি। কোনটি যে ঠিক, আর কোনটি ভুল, বলা মুশকিল। একে বলা হয় ইনফরমেশন ওভারলোড। যেন সবাই বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে ত্বকের ব্যাপারে। চটকদার বিজ্ঞাপনে মজে গিয়ে বা কারও কথা শুনে হুজুগে পড়ে এমন কিছু ব্যবহার করবেন না ত্বকে, যা সম্পর্কে আপনি খুব বেশি জানেন না। প্রয়োজন হলে পড়ুন ভালোভাবে এর উপাদানগুলো। আর না বুঝলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আমরা যা মাখি, তার ৬০ শতাংশ ত্বকে শোষিত হয়। তাই বিপদ ঘটতে পারে ক্ষতিকর বা অনুপযোগী কিছু ব্যবহার করলে।
৫. সুস্থ ত্বক পেতে ব্যায়াম করুন
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও শরীর ও মনের সব সমস্যার সমাধান ব্যায়াম বা শারীরিক সচলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দেহের সবচেয়ে বর অঙ্গ ত্বকও তার বাইরে নয়। যে যে ধরনের জীবনযাপনই করুন না কেন, যেভাবেই পারেন, কিছু না কিছু ব্যায়াম করতেই হবে রোজ। জিমে গিয়ে হোক, রাস্তায় বা পার্কে হেঁটে, জগিং করে, সাইকেল চালিয়ে হোক—শরীর সচল রাখতে হবে। ইয়োগা করলে মন ও শরীর দুইই ভালো থাকে। ফলশ্রুতিতে স্ট্রেস থেকে ত্বকের নানা সমস্যা আর হয় না তেমন। সপ্তাহে অন্তত তিন ঘণ্টা কার্যকরভাবে ব্যায়াম করলে ত্বক ভালো থাকে, বলছে গবেষণা। কারণ, ব্যায়াম রক্তের সঞ্চালন বাড়ায়, টক্সিন দূর করে, ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখে আর এন্ডরফিনের প্রবাহ বাড়ায়।
তথ্যসূত্রঃ এল ম্যাগাজিন
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম
হিরো ইমেজঃ গোলাম রাউফু
মডেলঃ হুমায়রা আনজুম