রোদ থাকুক, বা বৃষ্টি-বাতাসে থাকে একরাশ ধুলাবালু। বাইরে থেকে ঘরে ফিরলেই দেখা যায় ত্বকে ঘাম আর ময়লা। তাই এ সময়ে ত্বকের সব থেকে বড় যত্ন হলো একে পরিষ্কার রাখা। তবে পরিষ্কার করা মানে শুধুই ক্লিনজার ব্যবহার নয়। কয়েকটি ধাপে ঘরে বসে নিজেই ত্বক সম্পূর্ণ রূপে গভীর পর্যন্ত পরিষ্কার করা যায়।
ত্বকের ময়লা পরিষ্কার, ত্বককে সুরক্ষিত রাখা আর ত্বকের উজ্জ্বল ভাব ধরে রাখা—সবই কিন্তু ত্বক পরিষ্কারের ধাপগুলোর মধ্যে পড়ে। রেড বিউটি পারলারের রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন দিয়েছেন ত্বক পরিষ্কার করার ব্যাপারে কার্যকর কিছু পরামর্শ।
ত্বকের ময়লা তুলতে সবারই প্রথম পছন্দ ক্লিনজার। তবে খুব ক্রিমি ও ফোমযুক্ত ক্লিনজার এই উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ব্যবহার না করে হালকা ওয়াটার বেজড ক্লিনজিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই ত্বকের জন্য উপকারী। জেলজাতীয় ক্লিনজার ত্বককে রুক্ষ হতে দেবে না, আর তা বাড়তি তেল ছাড়াই। এ ছাড়া ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক ক্লিনজার ত্বককে রাখতে পারে নরম ও উজ্জ্বল। কাঁচা দুধ ত্বক পরিষ্কারের জন্য বেশ উপযোগী। ত্বকে সামান্য কাঁচা দুধ ম্যাসাজ করে তুলা দিয়ে হালকাভাবে মুছে নিলে সারা দিনে ত্বকে জমে যাওয়া ময়লা দ্রুতই উঠে আসবে।
ঘরে বসে ত্বক ডিপ-ক্লিন করার একটি ভালো উপায় হলো ভাপ বা স্টিম নেওয়া। এটি মূলত ত্বক পরিষ্কারের বেশ পুরোনো পদ্ধতি। তবে ভুল উপায়ে স্টিম নেওয়া কিন্তু হতে পারে ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। খুব বেশি সময় বা বেশি তাপে ভাপ নিলেই যে ত্বক ভালো পরিষ্কার হবে এমন ধারণা ঠিক নয়। ত্বক ঠিক যতটুকু সহ্য করতে পারে, তাপ হতে হবে তেমন। আর ভাপ নেওয়ার সময় হতে হবে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। ভাপ নেওয়ার পর তুলা দিয়ে হালকা করে ত্বক মুছে নিতে হবে। ২ মিনিট পর ত্বকে আলতো ভাবে এক টুকরো বরফ দিয়ে মালিশ করতে হবে। এতে ত্বকের খুলে যাওয়া লোমকূপ আবার বন্ধ হয়ে যাবে। তৈলাক্ত ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে খুব কার্যকর উপায় এই স্টিম নেওয়া।
ত্বক পরিষ্কারের পরের ধাপ হলো স্ক্রাবিং। কয়েক মিনিটের এই পদ্ধতিতে ত্বকের ময়লা তো দূর হয়ই, ত্বকে জমা ডেড সেল বা মৃত কোষ পরিষ্কারের কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে স্ক্রাবিং। ঘরে তৈরি স্ক্রাব, যেমন চিনি আর মধুর মিশ্রণ বেশ কাজে দেয়। এটি ত্বকে হালকাভাবে মালিশ করতে হবে ৫ মিনিট ধরে। এরপরে আরও ৩ মিনিট এটি ত্বকে রেখে দিতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই স্ক্রাবিংয়ের ধাপ শেষ।
ফেসপ্যাক ত্বক পরিষ্কার করে, আবার ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতাও বাড়ায়। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। দুধ ও মধু মিশিয়ে ত্বকে হালকা মালিশ করলে ত্বকের ময়লা দূর হয়। এ ছাড়া ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে সামান্য কমলার রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যায়। এটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে, লোমকূপ সংকুচিত হবে। পেঁপে, কলা ও টমেটোতেও ত্বক খুব ভালো পরিষ্কার হয়।
ত্বক পরিষ্কারের পর ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে যায়। ত্বকে কিছুটা শুষ্কতা আসে। তখন দরকার হয় টোনারের। ত্বকের জন্য সব থেকে ভালো টোনার হলো শসার রস বা গোলাপজল।
ত্বক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার হলো এ ক্ষেত্রে শেষ ধাপ। ভারী ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলেও জেল ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে। আর ত্বক পরিষ্কারের এই ধাপগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার নিয়ম করে অনুসরণ করলে ভালো ফল মিলবে।
ছবি: হাদী উদ্দীন ও পেকজেলসডটকম