বর্ষায় পায়ের যত্ন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বর্ষাকালে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কত নোংরা পানি, কাদা মাড়িয়ে অফিস, ক্লাসে ছুটতে হয়। এতে পায়ের ওপর দিয়েই সব ঝঞ্ঝা যায়। অথচ যত্নের ক্ষেত্রে এই ঋতুতে পা-কেই সবচেয়ে অবহেলা করা হয়। ফলে দেখা দেয় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ। ভাগ্যক্রমে সংক্রমণ যদি দেখা না–ও দেয়, পায়ের ত্বকের ক্ষতি তো হয়ই। তাই এই সময় পায়ের বিশেষ যত্নের ব্যাপারে সবার বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।
ঘরোয়া উপায়ে পায়ের যত্ন নেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে।

খালি পায়ে না হাঁটা

ঠান্ডা মেঝেতে বা বর্ষায় ভেজা ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটা যতই লোভনীয় মনে হোক না কেন, এই প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। খালি পায়ে হাঁটার ফলে পা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের জন্য একটি উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়, যার চিকিৎসা করা বেশ কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে।

পা সব সময় শুকনা রাখা

পায়ের যত্নের সবচেয়ে ভালো নিয়ম হচ্ছে পা শুকনা রাখা। কোনো কারণে বৃষ্টির পানিতে পা ভিজে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তা শুকিয়ে ফেলতে হবে। পা ভেজা থাকলে দুর্গন্ধ হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফাটল ধরা, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ভালো করে পা পরিষ্কার করা

বর্ষাকালে রাস্তায় অনেক নোংরা পানি ও কাদামাটি থাকে। যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলাচল করতে হবে। এরপরও যদি পা ভিজে যায় বা কাদা লেগে যায়, তাহলে ঘরে ফিরে যত দ্রুত সম্ভব পা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পানি ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় হালকা কুসুম গরম পানিতে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পা ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে। এতে সব জীবাণু মরে যায়। এরপর পা শুকনা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করা

পায়ের যত্নে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার যোগ করতে হবে। এটি শুকনা পায়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ বাতাস লাগাতে হবে। মোজা পরার আগে এ কাজটি করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে পায়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

ময়েশ্চারাইজার

পায়ের যত্নে এর আর্দ্রতা নিশ্চিত করাও জরুরি। এ জন্য ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে পা সুন্দর ও মসৃণ থাকবে। প্রতিদিন দুবার শুকনা পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত।

বিজ্ঞাপন

পায়ের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখা

পায়ের নখ বড় থাকলে এতে ময়লা জমতে পারে। ময়লা জমে গেলে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। তাই পায়ের নখ ছোট রাখতে হবে।

বর্ষাবান্ধব জুতা পরা

এই সময় বৃষ্টির কথা চিন্তা করে জুতা পরা উচিত। বর্ষাকালে জুতা ভিজে যায় ও নোংরা হয়। এমন জুতা পরা উচিত, যা সহজে পরিষ্কার করা যায়, আবার তা খুব সহজে শুকিয়েও যাবে। তাই এই সময় ফ্লিপ-ফ্লপ, স্লিপার, রাবারের বুট, স্যান্ডেল পরা উচিত। পা–ঢাকা জুতা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বৃষ্টিতে হাঁটার জন্য গামবুট সবচেয়ে উপযোগী জুতা। এটি নোংরা পানি, কাদা থেকে পা–কে সুরক্ষা দেয়। গামবুট ধোয়াও খুব সহজ।

পায়ের যত্নে এগুলো তো মানতেই হবে। এ ছাড়া বাড়তি যত্নের জন্য চাইলেই ঘরোয়া কিছু টোটকা মেনে চলতে পারেন—

সপ্তাহে একটা দিন পায়ের যত্নের জন্য কিছু সময় আলাদা রাখুন। ওই দিন লবণ ও শ্যাম্পু কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর হালকা ভেজা অবস্থায় পায়ে স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এই স্ক্রাব ঘরে থাকা চিনি বা লবণের সঙ্গে নারকেল বা জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন। এ ছাড়া ছোট ওয়াশক্লথ বা তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে কিছুটা নিংড়িয়ে পায়ে ঘষলেও স্ক্রাবের মতো কাজ করবে। এতে পায়ের মৃত কোষ দূর হবে। সবশেষে পা শুকিয়ে একটি ভালো ফুট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগালেই চলবে।

আমাদের অনেকেরই পা ফাটে। শুধু শীতকালে নয়, বর্ষাকালেও এমনটা হতে পারে। এই সময় পা ফাটলে মেহেদি পাতার পেস্ট লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যাবে।
পায়ে ছত্রাক সংক্রমণে খুব চুলকানি হয়। এই চুলকানি থেকে সাময়িক উপশম পেতে সমপরিমাণ আপেল সাইডার ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, পায়ে যেকোনো ধরনের সংক্রমণে সবার আগে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেই হবে।

ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১: ০০
বিজ্ঞাপন